বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

তোর জন্য চিঠি

এমন বৃষ্টির দিনে
তোর জন্য খুব মন খারাপ হয়
ভাবি তুই কষ্ট পাচ্ছিস আমার জন্য
অথচ অভিমান ঠেলে
একটা ফোন করতে পারছিসনা।
এ বছরটা তোর সংগে আড়ি করে
থাকতেই পারলাম না।
এত বৃষ্টি, এত বৃষ্টি,
প্রতিদিন বৃষ্টি
আর প্রতি রাতের অভিমান বৃষ্টিজলে ধুয়ে যাওয়া।
আমি জানি তুই এখন অপেক্ষা করছিস
টুং শব্দ করে কখন একটি ছোট্ট চিঠি আসবে
অপেক্ষায় অপলক তাকিয়ে থাকতে থাকতে
তোর দৃষ্টি যখন একটু ঝাপসা
মনটা যখন আর একটু মেঘঢাকা
ঠিক তখন চিঠির শব্দ হল
তোর মেঘ মনটা আমায় ঠিক ছুঁয়ে গেল।
আচ্ছা আমার চেয়ে ভালো তোকে
কে বোঝে বলতো?
তোর মুখে এখন কেমন হাসি?
টোলপড়া গালে কেমন দেখাচ্ছে তোকে?
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে
হাসিটা ধরে রাখ
আমি আসছি।

একটি দাঁড়কাক অথবা পিপীলিকার জীবন

ওরা সারিবদ্ধভাবে চলে
ভীষণ সারিবদ্ধ
দেখলেই আমার কেমন
বিরক্তি বোধ হয়
আমি ওদের চলার পথে 
কোন একটা বাঁধার সৃষ্টি করি
ওরা বিচ্ছিন্ন হয়
মনে হয় অনেক রেগে 
আমার দিকে দৃষ্টি ছোঁড়ে 
একে অপরের কানে কানে কি যেন বলে
আবার সঙ্ঘবদ্ধ হয়
আবার দলবদ্ধ হয়
আবার পথচলা শুরু করে।
এরপর আমি দেশ ও দেশের বাইরে
যখন যেখানে যাই
দেখলেই ওদের দলবদ্ধতা ভেঙে দিই 
ওদের একসাথে চলতে দেখলেই 
আমার কি যেন হয়
আমি বারবার ওদের একতাবদ্ধতাকে খণ্ড খণ্ড করি।
এ আমার এক অদ্ভুত খেলা।
ওদের কাছে আমার উপস্থিতি যমদূত অথবা
দানবের মতন।
ওদের দেখলেই আমার খুব ঈর্ষা হয়।
এতো ছোট প্রাণী হয়েও ওরা এতো পারে কেন?
আমি পারিনা কেন?
ওরা পিপীলিকা আর আমি দানব বলে?
আমার বড় পিপীলিকার জীবন পেতে ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে একটি দাঁড়কাকের জীবন
যার একটি আহত হলেই
সবাই মিলে চিৎকার করে ওঠে
আমার ওভাবে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করে।

তোমার সংগে ভোর

খুব সকালে তোমার সংগে দেখা হলে
কি হত?
বেশ হত তো বেশ হত
একটুখানি জড়িয়ে ধরে এক চুমুকে ঠোঁটসুধা
পায়ের সাথে পা মিলিয়ে শুষে নিতাম সব ব্যথা
কি হত গো কি হত?
বেশ হত তো বেশ হত।
সেই রাতে ঘুম নাই বা হত
বুকের সংগে বুক
সেই রাতে যম পালিয়ে যেত
দেখলে আমার সুখ
সেই রাতটি গড়িয়ে শুধু সকাল হলে
কি হত?
দুপুর কিংবা সন্ধ্যে বিকেল না আসলে
কি হত?
বেশ হত তো বেশ হত। 

মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আমি যে বাংলাদেশ

ওদের ভাষা আমাদের মতন নয়
একটু অবোধ্য 
যখন ওরা কথা বলে
কিছু বুঝি, কিছু বুঝিনা,
কিন্তু যখন ভীত, ন্যুজ হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়
অবাক বিস্ময়ে তাকাই
ওরা গল্প নয়,
রূপকথা নয়,
ওরা সত্যি।
ওদের ক্ষত বিক্ষত শরীর দেখে বাড়ী ফিরে
ক্লান্ত আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই 
একি! আমিও তো ওদের মতন,
দ্রুত একটা ধারালো ছুরি দিয়ে নিজেকে বিক্ষত করি,
একি! আমারও তো রক্তের রঙ লাল।
আমার সারা শরীর ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে।
আমি অনুভব করতে পারি ওদের যন্ত্রণা।
আমি আরও নিশ্চিত হই
ওরা গল্প নয়,
ওরা রূপকথা নয়
ওরা সত্যি,
আমি প্রস্তুত হই
ওদের পাশে দাঁড়াবার 
আমি যে বাংলাদেশ 
চিরদিন মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছি
কোনোদিন ঠকিনিতো।

কবিতার অসুখ

এ আমার কবিতার বিশাল অসুখ
ক্ষুধার্ত ভীষণ
তৃষ্ণার্ত ভীষণ
তোমার যা কিছু প্রকাশ্য করেছে হরণ
যা কিছু গোপন তাও করবে শোষণ
এ কিন্তু আমার কবিতার বিশাল অসুখ
ক্ষুধার্ত ভীষণ
তৃষ্ণার্ত ভীষণ।

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

তাঁকে লিখতে হলে

আমি পাঠের জন্য সেই কবিতাটি আবার বেছে নিলাম।
আমার কাছে বিদ্যুৎ গতিতে প্রশ্ন এল,
তোমার কি আর কোন কবিতা নেই?
শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে মাত্র একটি কবিতা লেখে কেউ!
এত প্রেম ভালোবাসা কবিতায় এনে কি হবে বল তো?
দেশের কথা লেখ,
তুমি শেখ মুজিবের কথা লেখ,
তুমি যুদ্ধের কথা লেখ।
আমি মৃদু হেসে বললাম,
যুদ্ধ দেখিনি,
দেখিনি শেখ মুজিবুর রহমান,
শুধু ইতিহাস পড়ে জেনেছি
একটি মানুষের ডাকে সম্মোহিত হয়ে যেতে পারে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
একটি মানুষের ডাকে অস্ত্রবিহীন যুদ্ধে নামারও সাহস করে মানুষ।
একটি মানুষের ডাকে প্রিয়জন ছেড়ে যুদ্ধে নামার সাহস করে মানুষ।
সেই মানুষ টি তো মানুষ নয়
মহামানব।
আমি কি করে একজন মহামানব কে কবিতার অক্ষরে সাজাই!
সে কি ভেঙেচুরে সব ছিন্ন করে
আমার কলমের বাইরে চলে যাবেনা?
সে বুঝি শান্ত হয়ে আমার সাজানো শব্দের জন্য অপেক্ষা করবে?
উপস্থিত গুনিজনেরা বাহ বা বাহ বা করে বললেন,
এই দেখ তুমি কথা বলতে বলতেই কবিতা হয়ে গেল কিন্তু।
এভাবেই লিখতে হয় কবি।
এভাবেই লেখা হয়।
আমি আবারো মৃদু হাসলাম
আর মনে মনে বললাম,
তাঁকে লিখতে হলে
অথবা তাঁকে শব্দে সাজাতে হলে
আমার যে আরও সহস্র বছর আয়ু প্রয়োজন।
 
 

ফুলজোড় নদী

নাম তার ছিল জানি
ফুলজোড় নদী
চুপচাপ নৌকো
চলে নিরবধি।
সূর্য সকাল হলে
প্রণাম জানায়
উজাড় বুকেতে শোয়
গোধূলিবেলায়।
রাতে তারা জ্বলে ওঠে
রূপোলী আলোয়
জোস্না মাখায়ে নদী
স্নান করে লয়।
একটি বকুল গাছ
দাঁড়ায়ে পাড়ে
বাদামী ফুলের রঙে
সাজে আহারে।