রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

উন্নয়ন

তুমি উন্নয়নের কথা বল
আমার ঠিক তখনই বুক ধড়ফড় করে ওঠে
তোমার উন্নয়ন মানে আমার শৈশবের
পাহাড়টা আর নেই।
তুমি উন্নয়নের কথা বল
আমার ভ্রু কুঁচকে ওঠে
তোমার উন্নয়ন মানে আমার কাজল দীঘিটি আর নেই
স্তব্ধ হয়ে গেছে 
তুমি উন্নয়নের কথা বল
আমার মন শীতল হয়ে ওঠে
তোমার উন্নয়ন মানে
আমার জানলার ধারের কৃষ্ণচূড়াটি আর নেই
তোমার উন্নয়ন মানে
আমার দুয়ারে বসন্ত নেই
তোমার উন্নয়ন মানে আমার আকাশ ছোট হয়ে আসছে
আমার সূর্য নেই,
চাঁদ নেই, 
তারা নেই
তোমার আরো উন্নয়ন মানে
আমার পাশে একটি রোবট আছে
তুমিও নেই।

সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮

রুদ্মিলার চিঠি ১৮

ছটফট করতে করতে ঘুমটা ভাঙলো। তৃষ্ণায় গলা আটকে আছে। কোন শব্দ বেরুচ্ছেনা। আমি ভয়ঙ্কর চেষ্টা করছি শব্দ করার , পারছিনা। এই অবস্থায় উঠে বসে পড়লাম বিছানায়। এক কোমল স্পর্শ। জানতে চাইলো ,
কষ্ট হচ্ছে মা? একটু পানি খাবি?
আমি অদ্ভুত ভয় পেলাম। মায়ের আওয়াজ। মা কোথা থেকে এলো? মায়ের তো আসার কথা না। কিন্তু স্পষ্ট কথা বলছেন যে।
আম্মা আপনি ? আপনি কিভাবে এলেন ?
অনেকক্ষণ ধরে দেখছি তুই কষ্ট পাচ্ছিস।ঘুমে মাঝে মাঝে এমন হয়। ভয় পাস নে মা। নে, পানিটা খেয়ে নে। 
আমি এক নিঃশ্বাসে পানিটা খেলাম। আমার তৃষ্ণা জুড়িয়ে গেল। তাহলে তো সত্যি মা এসেছেন ।আমি যে স্পষ্ট তৃষ্ণা জুড়ানোর অনুভূতি পেলাম।
সবকিছু নিয়ে এত ভয় পাস কেন তুই? একটু চুলে হাত বুলিয়ে দেবো? ঘুমাবি?
না আম্মা। আপনি আমার পাশে বসে থাকেন।আমি আপনার আঙ্গুলগুলো টিপে দিই। আপনার আঙুল গুলো মোটা আর তুলতুলে আমার টিপতে ভালো লাগে। 
আচ্ছা ঠিক আছে বলেই মা শুয়ে পড়লেন। গল্প শুনবি?
আম্মা, আপনার গল্প শুনবো। আপনার গল্প কোনদিন শোনা হয়নি।
আমার কোন গল্প নেই রে । আমার গল্প তোরাই । তোরা চার জন। তোদের ছোটবেলা , তোদের কিভাবে বড় করলাম, তারপর কি করে ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে গেলি আমার গল্প ওসব নিয়ে। আমার নিজের কোন গল্প নেই মা।
আচ্ছা আম্মা এই এত বছরের সংসার জীবনে আপনার কখনো সংসার ছাড়তে ইচ্ছে করেনি?
করেছে তো। অনেক বার। বিয়ের পরই করতো ভীষণ। 
তাহলে, রয়ে গেলেন কেন?
এভাবেই রয়ে যাওয়া হয়। একটা সন্তান হয়, একটু অপেক্ষা হয়। তারপর আরেকটা। এভাবে মায়া জড়ায় । আর কোথাও যাওয়া হয়না। একদিন ধীরে ধীরে নিজের সব গল্প গুলো নষ্ট হয়ে যায়। সবার গল্প নিজের গল্প হয়ে যায় ।ভুলে যাওয়া যায়।
আমি সব ভুলে গেছিরে। তোদের ছাড়া আমার আর কিছু মনে নেই। 
আম্মা, আপনি একটা কাজ করেন। প্রতিরাতে আমার কাছে আসেন। গল্প গুলো মনে করেন। আমাকে বলেন। আমি লিখবো। 
মা কুটকুট করে হেসে উঠলেন। তুই লিখতে জানিস?
আম্মা আমি এখন অনেক লিখি। শুধু আপনার গল্প লিখতে পারিনা। কারন আপনার কোন গল্প আমার জানা নেই।
মায়েদের নিজেদের কোন গল্প থাকতে নেই রে। মায়েদের শুধু সংসার এর গল্প থাকতে হয়।
আম্মা , আমি সব লিখবো। আপনার শৈশব, কৈশোর , মেয়েবেলা সব সব গল্প। 
না রে, ঐ স্মৃতি আমি ধ্বংস করে ফেলেছি। ঐ স্মৃতি যদি আবার ভর করে আমার অনেক বাঁচতে ইচ্ছে করবে। সব ফিরে পাওয়া যায় শুধু চলে যাওয়া সময় ফিয়ে পাওয়া যায়না। চারটে পুতুল বড় করে পৃথিবীতে ছেড়ে দিয়েছি। জীবিত থাকতেই পুতুল গুলো আমাকে ছাড়া থাকা শিখে গেছে। একদিন হঠাৎ দেখি আমার আর কিচ্ছু নেই। আমার শৈশব নেই, আমার কৈশোর নেই, আমার প্রেম নেই, আমার কিচ্ছু নেই। ঠিক সেদিন মরে না গেলে আমার বড় অসুবিধে হয়ে যেত। নিঃস্ব আমি আসলে কি নিয়ে বাঁচতাম ? 
আম্মা, আপনি প্রতিরাত আমার কাছে আসবেন। আমি আপনার গল্প লিখতে চাই আম্মা। 
তাহেরা বেগম মৃদু হাসলেন। শুরু হল গল্প। তাহেরা বেগমের নিজের জীবনের গল্প। আসল জীবনের গল্প। যেই গল্পে তাহেরা বেগম তাঁর বড় ছেলে হাবিবের মা নন যে নামে সবাই তাঁকে চেনে। যে গল্পে তিনি কেবলই একজন তাহেরা বেগম।
Show more

রুপশ্রী ২

তোমার বিসর্জিত ঠোঁটের লাল
ল্যাপটানো চোখের কাজল
আর রঙধনু ভ্রু থেকে
ক'ফোটা রঙ নিয়ে
একটা টিপ গড়েছিলাম
এত রঙে রাঙানো টিপটাও
তোমার রূপকে ছাড়িয়ে যেতে পারলোনা।
তুমি কেমন করে এত রূপ ধর হে নারী
মরি মরি
ঐ রূপ ছুঁয়ে আমি মরি।

রুপশ্রী

শুনলাম আজ নাকি চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে আসবে,
দুরত্ব থাকবে ২ লক্ষ ২১ হাজার ৮২৪ মাইল মাত্র।
সন্ধ্যে হল
চাঁদ উঠলো,
ধীরে ধীরে আকাশের পশ্চিম দিকটা
তীব্র থেকে তীব্রতর হলো আলোয়।
আজ তোমার কি হয়েছিল বলতো?
সারাটা সন্ধ্যে ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলে?
যে বছরটাতেই চাঁদটা অমন
পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে
তুমি ঘরবন্দী হয়ে থাকো।
একবার অন্তত চাঁদটাকে
লজ্জায় ডুবতে দিয়ো।


শিপ্রা

শিক্ষা,কর্মে শিপ্রা যেন
অনন্য এক নারী
সুন্দর মুখ, সতী সাবিত্রী
সর্বগুণ অধিকারী।
শিপ্রাকে পেতে হাজার মানুষ
বানিয়েছে রেলগাড়ি
শিপ্রা ঠিকই পড়লো প্রেমে
নাই যার ঘরবাড়ি।
স্ট্যাটাসের কোন মিল নেই
পড়ালেখা কোনরকম
এই পরিবারে শিপ্রা কি করে
করবে সব হজম!
বাবা রাজী নয় মোটে
মায়ের কাছে শিপ্রা এবার
হাতজোড় করে ছোটে।
এই প্রেম যেন লাইলী মজনু
শিরি ফরহাদ হার মানে
সুন্দরী নারী প্রেমের জলে
ডোবে শুধু ক্ষণে ক্ষণে।
মা বললেন ডেকে,
ছেলেটি মোটেই যোগ্য নয় তোর
তার পরিবারও নয় যোগ্য
এমন করে পাগল হবি
এই কি ছিল ভাগ্য?
সবার বাধার সামনে
শিপ্রা এগিয়ে রয়
একবার বিয়ে হতে দাও মা
কেটে যাবে সংশয়।
শাশুড়ি মা এলেন
বললেন অনেক কথা
আড়ালে তিনি জেনেই গেলেন
ছেলের অযোগ্যতা।
মুখে হাসি তবু মনে কল্পনা
আসুক আগে ঘরে
তারপর পাবো হাতের মুঠোয়
দর্প পড়বে ঝরে।
আগুনের মত রূপ আর গুন
ছড়িয়ে চারিদিক
শিপ্রা এল অমিতের ঘরে
প্রদীপ জ্বালিয়ে ঠিক।
শাশুড়ি বলেন মনে মনে
এইতো পেলাম হাতের মুঠোয়
জ্বালাবো এবার প্রতিক্ষণে।
সে যণ্ত্রনা এখনো নেভেনি
শিপ্রার দুটো ছেলে
কবিতা, নাটক সবকিছু ছেড়ে
শিপ্রা এখন জেলে।
পৃথিবী দেখে সুন্দরী নারী
কত গুন আছে তার
বাইরের যত ঝিলিকের আড়ালে
জীবন অন্ধকার।
স্বামীর কথায় ওঠে ও বসে
স্বামীর কথায় গদ্য
চারদেয়ালের মাঝখানে থেকে
হয়নাতো আর পদ্য।
রেললাইনের সবথেকে আগে
যে অমিত ছিল দাঁড়িয়ে
আজ সেই প্রেম কোথায় উধাও
সবকিছু গেছে হারিয়ে।
চিৎকার করে শিপ্রা
চিৎকার আসেনাকো
বোবা কান্না ঘুরে ঘুরে মরে
মুক্তি আর মেলেনাকো।
শিপ্রার সেই মোমের শরীর
লেহ্য, চোষ্য, চর্ব্য
এই নিয়ে লেখে শিপ্রা এখন
চারদেয়ালের কাব্য।

কেমন আছো

ভেবোনা তোমাকে মুক্তি দিয়ে খারাপ আছি 
বেশ ভালোই আছি জানো?
কেবল কিছু অভ্যেসের যন্ত্রণা
জ্বালায় শুধু।
ওগুলোকে আমি অভ্যেসই বলি।
কেবল অবাধ্য কানটা প্রিয় নাম শুনতে চায়
কেবল অবাধ্য হাতদুটো প্রিয় শরীর জড়াতে চায়
কেবল অবাধ্য ঠোঁটদুটো আলিঙ্গনে সিক্ত হতে চায়
কেবল চারপাশের সমস্ত সুবাস ছাড়িয়ে ঐ
ঘামের নোনা গন্ধ নাসারন্ধ্রে বেশ কড়া নাড়ে 
আর রক্তচাপ টা বাড়লে 
ঘাড়ের পেছনে একটু বরফ নিয়ে কেউ ছুঁয়ে দিক
এইসব ভুলতে পারছিনা আর কি।
ওগুলোকে আমি অভ্যেসই বলি
কিন্তু সমস্যা হল তোমার চলে যাবার পর
এখন দেখছি অভ্যেস গুলোই আসলে ভালোবাসা ছিল
অভ্যেসের বদ্ধ চিলেকুঠুরি থেকে মুক্তি নিয়ে
কেমন আছো?
ভালোতো?