সময় টা আনুমানিক ৩ টে বেজে ৩৫
খুলে দেয়া হল সমাধিস্থলের দুয়ার
এক রাশ কোলাহলের ভেতর থেকে হঠাৎ
যেন এক নিশ্চুপ নীরবতায় প্রবেশ।
উঁচু দেয়াল গুলো ফিরিয়ে দিচ্ছে বাইরের কোলাহল।
পথটুকু ছেয়ে আছে মেহগনির হলুদ ছোট ফুলে।
পাখিদের ঝগড়াঝাঁটি ও নেই।
ওরা যেন এখানে এসেই বড্ড বোঝে সবকিছু
একটুও কিচিমিচি নেই কেবল উড়ে যাবার শব্দ ছাড়া।
শিশুদের কবর পেরিয়ে যেতে হয় সবার আগে
ওদের তো এই মুহূর্তে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠার কথা ছিল।
কেমন করে শুয়ে আছে স্তব্ধ নীরবতায়?
মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফারনান্দেজদের দেখে অবাক হইনি
দুজন পাশাপাশি
এখানেও,
হয়তো ৬৫ বছর কেটেছে নিদারুন ঝগড়ায়
"ফারনো আমি তোমাকে বেশী ভালোবাসি"
নো। হার হাইনেস, আমার চেয়ে বেশী নয়,
এখান টাতে তোমার জোর চলবেনা ।
আমি যেন স্পষ্ট ওদের মধুর ঝগড়া শুনতে পাচ্ছিলাম।
শত শত কবর পেরিয়ে এক সময় দাঁড়ালাম
একটা বড় মেহগনির নীচে।
গাছ টাকে নাহয় বাঁধতে পেরেছে সংরক্ষিত দেয়াল।
ডাল পালা গুলোকে নয়।
একই গাছের ফুল
কিছু ঝরছে মৃতদের শরীরে
কিছু জীবিত মানুষের পদতলে, চুলে,
কারোর খোঁপায় অথবা কপালে।
এক আনমনা কিশোরী হয়তো কুঁড়িয়ে নিচ্ছে হলদে ছোট্ট মেহগনি ফুল।
আচ্ছা? সে কি জানে
তার ঠিক পাশেই শুয়ে আছে কোন এক
এক চঞ্চলা কিশোরী?
হয়তো তার নূপুর পায়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিল?
হয়তো দীঘির পাড়ে হাঁসের মতন ভেসে বেড়ানোর কথা ছিল
হয়তো ঘুড়ি ওড়ানোর কথা ছিল মাঠ থেকে মাঠে
হয়তো প্রেমিকের প্রথম চুম্বনে সিক্ত হবার কথা ছিল,
হয়তো ............
কত কিছুই তো কথা ছিল।
কত কথাই না থাকে।
কত কথাই রয়ে যায় না বলা।
নতুন সব সমাধি গুলো সাজানো, সুন্দর।
দু একটি পুরনো ছাড়া বাকি গুলো বড্ড বেশী মৃত যেন
ভুলে ?নাকি ইচ্ছে করেই এমন?
নাকি বড্ড ব্যস্ত নাগরিক জীবনে জীবিত মানুষ গুলো সময় পায়নি এখানে আসার?
নাকি
ভুলে যাওয়াই জীবিত মানুষ গুলোর কাজ?
সময় টা ঠিক ৪ টে বেজে ৩৮।
মৃত আর জীবিত মানুষের মাঝমাঝি থাকা
সংরক্ষিত দেয়ালটির পাশে দাঁড়িয়ে
হঠাৎ মনে হল
কোনটি সত্য?
মাতির তলায় লুকিয়ে থাকা জীবন?
নাকি আমি?
সমাধিস্থলের ঠিক শুরুতে থাকা শিশু গুলোর কবরে
যীশুর কথা লেখা
যীশু বলেন, " ওদের আমার কাছে আসতে দাও
কেনোনা এটাই ওদের যথার্থ স্থান।"
ঠিক এখানে , এখান টাতে দাঁড়িয়ে আমার বড্ড অভিমান হল
আমি চিৎকার করে বললাম,
ঈশ্বর,
প্রানের পরে যদি এতই লোভ তোমার
তবে কেন জাগিয়েছিলে শরীর?
কেন দিয়েছিলে প্রান?
দিতে পারো তার উত্তর?