মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬

প্রশ্ন


সময় টা আনুমানিক ৩ টে বেজে ৩৫
খুলে দেয়া হল সমাধিস্থলের দুয়ার
এক রাশ কোলাহলের ভেতর থেকে হঠাৎ
যেন এক নিশ্চুপ নীরবতায় প্রবেশ।
উঁচু দেয়াল গুলো ফিরিয়ে দিচ্ছে বাইরের কোলাহল।
পথটুকু ছেয়ে আছে মেহগনির হলুদ ছোট ফুলে।
পাখিদের ঝগড়াঝাঁটি ও নেই।
ওরা যেন এখানে এসেই বড্ড বোঝে সবকিছু
একটুও কিচিমিচি নেই কেবল উড়ে যাবার শব্দ ছাড়া।
শিশুদের কবর পেরিয়ে যেতে হয় সবার  আগে
ওদের তো এই মুহূর্তে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠার কথা ছিল।
কেমন করে শুয়ে আছে স্তব্ধ নীরবতায়?

মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফারনান্দেজদের দেখে অবাক হইনি
দুজন পাশাপাশি
এখানেও,
হয়তো ৬৫ বছর কেটেছে নিদারুন ঝগড়ায়
"ফারনো আমি তোমাকে বেশী ভালোবাসি"
নো। হার হাইনেস, আমার চেয়ে  বেশী নয়,
এখান টাতে তোমার জোর চলবেনা ।
আমি যেন স্পষ্ট ওদের মধুর ঝগড়া শুনতে পাচ্ছিলাম।



শত শত কবর পেরিয়ে এক সময় দাঁড়ালাম
একটা বড় মেহগনির নীচে।
গাছ টাকে নাহয় বাঁধতে পেরেছে সংরক্ষিত দেয়াল।
ডাল পালা গুলোকে নয়।
একই গাছের ফুল
কিছু ঝরছে মৃতদের শরীরে
কিছু জীবিত মানুষের পদতলে, চুলে,
কারোর খোঁপায় অথবা  কপালে।
এক আনমনা কিশোরী হয়তো কুঁড়িয়ে নিচ্ছে হলদে ছোট্ট মেহগনি ফুল।
আচ্ছা? সে কি জানে
তার ঠিক পাশেই শুয়ে আছে কোন এক
এক চঞ্চলা কিশোরী?
হয়তো তার নূপুর পায়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিল?
হয়তো দীঘির পাড়ে হাঁসের মতন ভেসে বেড়ানোর কথা ছিল
হয়তো ঘুড়ি ওড়ানোর কথা ছিল মাঠ থেকে মাঠে
হয়তো প্রেমিকের প্রথম চুম্বনে সিক্ত হবার কথা ছিল,
হয়তো ............
কত কিছুই  তো কথা ছিল।
কত কথাই না থাকে।
কত কথাই রয়ে যায় না বলা। 


নতুন সব সমাধি গুলো সাজানো, সুন্দর।
দু একটি পুরনো ছাড়া বাকি গুলো বড্ড বেশী মৃত যেন
ভুলে ?নাকি ইচ্ছে করেই এমন?
নাকি বড্ড ব্যস্ত নাগরিক জীবনে  জীবিত মানুষ গুলো সময় পায়নি এখানে আসার?
নাকি
ভুলে যাওয়াই  জীবিত মানুষ গুলোর কাজ?

সময় টা ঠিক ৪ টে বেজে ৩৮।
মৃত আর জীবিত মানুষের মাঝমাঝি থাকা
সংরক্ষিত দেয়ালটির পাশে দাঁড়িয়ে
হঠাৎ মনে হল
কোনটি সত্য?
মাতির তলায় লুকিয়ে থাকা জীবন?
নাকি আমি?
সমাধিস্থলের ঠিক শুরুতে থাকা শিশু গুলোর কবরে
যীশুর কথা লেখা
যীশু বলেন, " ওদের আমার কাছে আসতে দাও
কেনোনা এটাই ওদের যথার্থ স্থান।"
ঠিক এখানে , এখান টাতে দাঁড়িয়ে আমার বড্ড অভিমান হল
আমি চিৎকার করে বললাম,
ঈশ্বর,
প্রানের পরে যদি এতই লোভ তোমার
তবে কেন জাগিয়েছিলে শরীর?
কেন দিয়েছিলে প্রান?
দিতে পারো তার উত্তর? 



অনিঃশেষ ভালোবাসা

 
 
 
 
 
 তুই এত্ত সুন্দর কেন রে?

জানি তো। এই সুন্দরের জন্যেই আছিস।
ঠিক যখনই বুড়ো হব
পাখির মতন দিবি উড়াল
খুব যত্নে অন্য চোখে চোখ রাখবি
ভাঙা কোমর আর জড়িয়ে রাখবিনা তুই,
কোঁচকানো চোখ একটুও কি শান্তি দেবে?
ঠিক দেবেনা
জানি আমি।
সাপের মতন আঁকা বাঁকা শরীর এখন
ঠিক যখনই পক্ষাঘাতে পড়বে ঝুঁকে
থাকবি পাশে?
একটুও নয়।
বেশ খুঁজবি মিঠে ঠোঁটের রসের জল।
আমি জানি
সবটা জানি।
প্রেম নয়তো
সবখানেতে শুধুই ছল।

করতে পারিস বেশ বক বক
হাঁসের ছানার মত পঁকপঁক।
তখনও করিস
এখনো কর।
চাঁদ টা কি বল উঠবেনা আর ঐ আকাশে?
দেবেনা কি জোৎস্না ঢেলে ভেসে ভেসে?
আমরা তখন বুড়ো বুড়ি বলবো ঠিকই
একদিন তোর হাত টি ধরে চাঁদ দেখেছি।
রিক্সা চড়ে ভীষণ জ্যামে টগবগে তুই
কোমরখানা সাপের মতন হাত দিয়ে ছুঁই।
তুই কি কেবল করতে পারিস একটি কাজ?
চায়ের কাপে দিতে পারিস ঠোঁটের ভাঁজ?
ডাইবেটিক্স এ ভুগতে হবে দুজনকেই
চিনি ছাড়া চা টা তখন খেতে হবেই
তোর ঠোঁটের জলে ওইদিন বেশ বর্তে যাবে
তেতো চা টা ঠিক তখনও মিষ্টি হবে।
বলবি কিছু?
আর কি বলার আমায় বল?
বকবকানি বন্ধ করে
চায়ের কাপে ঠোঁট দিবি চল।

শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬

আগুন ঝরা মেয়ে







 ইচ্ছে করে যাই ছুটে ঐ শিমুলতলী গাঁয়
রঙিন পথে পথ হারাবো জড়িয়ে দুটি পায়।

সেই গাঁয়েরই একটি মেয়ে নামটি  পারুল তার
সন্ধ্যে সকাল গাছের তলায় কাটছে সময় যার।

সেই মেয়েটি এলো চুলে শিমুলতলায় যায়
কাঠবেড়ালি অবাক হয়ে তার পেছনে ধায়।

পাখির সাথে কথা বলে তারার সাথে চলে
চাঁদের আলোয় মুখখানি ধোয় জ্যোৎস্না ঝরে গালে।

সেই মেয়েটির নেশার চোখে চোখ রেখেছি যেই
আমিতো আর আমার মাঝে নেই তো আমি নেই।




আমার কাছেই থেকো









যেমন তোমার রোদ জরুরী
তেমন তোমার ছায়া,
কষ্ট গুলো দিয়ো সখী
সাথে নিয়ে মায়া।
অপেক্ষাতে আর রেখো না
এবার দুয়ার খোলো
হাত দুখানা বাড়িয়ে আছি
আমার সাথে চল।
চলতে পথে বুনো ফুলের
পথটি যদি পাই
ভয় পেয়োনা উদাস আমি
হারিয়ে যদি যাই।
তখন কেবল একটুখানি
জড়িয়ে ধরে রেখো,
পায়ের সাথে পা মিলিয়ে
আমার কাছেই থেকো।

শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১৬

দুষ্টু মিষ্টি প্রেম







চোখের কোণে একটু কাজল
নষ্ট নাহয় হল
তাই বলে কি বুকপকেটে
রুমাল রাখতে হল?

বরাবরই বলছো হেসে
টিপ টা আমার বাঁকা
জানি তুমি ছুঁয়েই দেবে
ভাবছো আমি বোকা?

সুগন্ধি তো সয়না আমার
জানোই বরাবরই
তবু জানি আসবে বুকেই
সুবাস নিতে ভারী।

দুষ্টুমি সব বুঝি আমি
তবু কাছে থাকি।
ভাল্লাগেনা ভাবটা দেখাই
দিচ্ছি শুধুই ফাঁকি।

বুঝে নিও ওইখানেতে
মিষ্টি মিষ্টি সুরে
পাগলী মেয়েই থাকবো আমি
সারা জীবন জুড়ে।

জোছনার অভিমান


আজ জোছনার অভিমান
রাঙা রাজকন্যার সাথে
বলে দিয়েছে আসবেনা আর
আমার চলার পথে।

চাঁদ টাকে ভালোবাসি
জোছনার প্রেমে মজি
সকাল হলেই চলে যায় তবু
রাত হলে পাই খুঁজি।

প্রিয়ার রুপের ভারে
গৌরবে হাসে মুখ
সদা সংশয় এই বুঝি প্রিয়া
কেড়ে নিলো সব সুখ।

তার চেয়ে চাঁদ ভালো
প্রতিরাতে জাগে নিশ্চয় 
এই পাই আর এই কি হারাই
থাকে নাতো কিছু সংশয় ।

ওগো চাঁদ তুমি থাকো
জোছনা হয়ে ঝরাও
অভিমানী প্রিয়া চলে যাক
কবির পরান গড়াও ।

কবিতার যৌবনে
যুগে যুগে তুমি থাকো,
প্রিয়ার অভিমানে
অমাবস্যা কে ডাকো ।

তবু চাঁদ তুমি থাকো,
তবু চাঁদ তুমি থাকো। 
 



আর বেশী দূরে যেওনা








পড়ে যাবে

আর বেশী দূরে যেওনা
তোমার সামনে ওটা পুকুর
প্রেম না।
প্রেমে তুমি পড়তেই পারো
মন যদি চায় আবার
জল থেকে দূরে থেকো
শেখোনি এখনো সাঁতার ।

পড়ে যাবে।
আর বেশী দূরে যেওনা।
তোমার সামনে ওটা পুকুর
প্রেম না।

একটা কবিতা শুনবো বলে






তুমি আমায় কবিতা শোনাচ্ছ
একটা কবিতা লেখা হলেই
এ তোমার প্রতিবেলার নিয়ম।
আজকের লেখাটা অনেক বড় ছিল
হৃৎপিণ্ডের কথা আসছিল বারেবার,
এবং যতবারই আমি তার মূর্ছনায় হারাচ্ছিলাম
প্রতিবারই তোমার বাড়ীর পাশে রাস্তা থেকে ক্রমাগত ভেসে আসছিলো
নানান ফেরিওয়ালার সুর।
এই যে, মাছ আছে, ইলিশ মাছ,
তরকারি নেবেন? তরকারি?
বসন্তের নতুন কুল এসেছে।
ফেরিওয়ালা চেঁচাচ্ছে তারস্বরে , এই যে বড়ই আছে , বড়ই নেবেন?
বারবার আমি ঐ একটা পঙক্তি হারিয়ে ফেলছিলাম।
'হৃৎপিণ্ডের বাঁ পাশে কেও আছে'
এই বাক্য টা হারিয়ে যাচ্ছিলো ওদের চিৎকারে।

প্রতিদিন তাই হয়,
কবিতার যে জায়গাটা আমার জন্যে রাখা
আর শোনা হয়না।।
রাতগুলো আমার নয়
তাই রাতের নীরবতা চাইতে পারিনা।

রাত গুলোতে কেও একজন তোমার পাশে বসে ,
আদর করে বলে," শোবে এসো"
তারপর
ঠিক তোমার হৃৎপিণ্ডের বাঁ পাশে এসে শুয়ে পড়ে ঐ মিষ্টি মুখ।
আর অনেক দূরের থেকে আমি অপেক্ষায় থাকি সকাল হবার
একটা কবিতা শুনবো বলে
আর কোথাও না হউক
তোমার কবিতার হৃৎপিণ্ডে তো আমি আছি।