বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭

কবির প্রস্থান







অলিন্দ নিলয়ে যখন তোলপাড় 
করে রক্ত।
সেই রক্ত মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় 
আর ঠিক আমার ডান হাত ঐ
সংকেত কে শব্দে পরিণত করে,
আমি এতদিন এভাবেই
কবিতা লিখে আসছি 
বেশ অনেকদিন হল আমি কবিতা লিখতে পারছিনা ।
কবিতা কেন আমি কোন শব্দের কোন খেলাই 
খেলতে পারছিনা।
আমি লিখতে পারছিনা আর মৃত্যুর কথা 
কত রকমের মৃত্যু!
ভূমিধ্বস 
বন্যা 
রোহিঙ্গা আক্রমণ
ধর্ষণ 
আর পুরো পৃথিবী জুড়ে জঙ্গি জঙ্গি খেলা 
আমি আর লিখতে পারছিনা।
আমার হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলে
অসুবিধে হচ্ছে,
আমার মস্তিষ্কে ওরা কোন সংকেত পাঠাচ্ছেনা
আমার হাত অথবা আঙুল আর কথা বলছেনা
আমি আমার কবিতায় সৃষ্টির কথা বলতে চাই
ধ্বংসের নয়
আমি আমার কবিতায় শান্তির কথা বলতে চাই
যুদ্ধের নয়
আমি আমার কবিতায় পুণ্যের কথা বলতে চাই
পাপের নয়
সবাই বলে একজন লেখক কে নাকি সকল অন্যায়ের 
বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হয়
কলম দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বার করে আনতে হয় প্রেম
সেই কলম দিয়েই যুদ্ধ ।
আমি এখন আর বুঝতে পারিনা 
সবার আগে আমি মানুষ নাকি লেখক!!!!!!
হে ঈশ্বর,
আমায় তবে অন্ধ এবং বধির করে দাও
আমি আর কোন পাপের ইতিহাস শুনতে চাইনা 
আমি আর কোন যন্ত্রণার মৃত্যু দেখতে চাইনা
আমি আবার ভালোবাসার গল্প লিখতে চাই
আমি শুধু পরম যত্নে প্রেমের কবিতা লিখতে চাই।

রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭

লিফট

নিরুপায় হয়ে অবশেষে লিফটে ।
একটা লিফট হয়ে উঠতে পারে
চুম্বনের একমাত্র স্বর্গীয় স্থান
কে জানতো ?
কে জানতো ঐ চারটে চুমু
আমার দু চোখ , ঠোঁট এবং কপাল কে চিরজীবনের জন্য
তৃষিত করে দেবে?
কে জানতো?
লিফট ফুঁড়ে আকাশের সাথে
দেখা হয়ে যেত যদি কাল
আমি ঠিক মেঘের গায়ে একটা বাড়ি বাঁধতাম।

জলের মেয়ে ১৬

বর্ষা আসার আগেই কদম ফুটেছে
বাতাসে বৃষ্টির ছাঁটে
ভেবেছে এই বুঝি ফোটার সময়
ওদের মতন কখনো
তুমিও ভাবতে যদি
আমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে
একবার ভিজতে যদি
আর তোমার চোখে উঠতো ফুটে
হাজার কামিনী, হাস্নাহেনা অথবা কেতকি
বেশ খোঁপায় পড়ে নিতাম।

জলের মেয়ে ১৫

আমি তো তার ঠিকানা রাখিনি
হঠাৎ কোথা হতে উড়ে এসে
একঝুড়ি বৃষ্টি দিয়ে চলে গেল
আমার হাতের লুকনো রোদ 
তাকে যে দেয়া হলোনা
আমার রোদটা ভিজে যাচ্ছে জলে
আহা আমার রোদ যে ভিজছে জলে।

অনুকাব্য ১৩

তুমি হচ্ছ আমার কাছে কিছু সময়।
সময়গুলো আমি ভালোবাসার দামে কিনেছিলাম কিন্তু কষ্টের দামে বিক্রি করে দিয়েছি।

জলের মেয়ে ১৪

মেয়েটি রাত দেখতে চেয়েছিল।
আমি আমার বুকের বাঁ পাশ থেকে
চাঁদটা বের করে দিলাম।
হঠাৎ ছোঁ মেরে চাঁদটা কেড়ে নিয়ে বলল,
তোমার চারপাশে এত অন্ধকার কেন?
তুমি কি অন্ধকারের মানুষ?
তারপর মেয়েটি চলে গেল।
এখন ওরা ঐ যে দূরে
আমার চাঁদের জোছনায়
জোছনাস্নান করে।

জলের মেয়ে ১৩

মেলে ধর তোমার অভিযোগের সমস্ত ডানা
যত বেশী অভিযোগ 
তত বেশী দূরে সরতে মানা।
আমার সকল অপারগতায় তোমার লক্ষকোটি অভিযোগ চাই
আমি আমার জন্য একটা পাগল আজীবন দেখে যেতে চাই।

অনুকাব্য ৯

সোনালু ফুল, সোনালু ফুল
সোনা রঙের মেয়ে
তোমার সঙ্গে সখ্য হল
ফুল কুড়োতে যেয়ে।
ফুল নেব কি তোমায় নেব
যখন ভেবেছি
হঠাৎ চোখে পড়লো ছায়া
স্বপ্ন দেখেছি।

অনুকাব্য ১০

যাও তো যাও 
অন্য কাউকে ভালোবাসো
গ্রহণের অসুবিধে নিয়ে 
আমার কাছে কেন আসো?

অনুকাব্য ১১



কর্ণে তাহার পুষ্পদলের শোভা
মুখমন্ডলে শেষ বিকেলের আভা।

আকাশ তাহার চোখের কিনার ঘেঁষে 
রাত্রি নামায় ভালোবেসে ভালোবেসে।

অনুকাব্য ১২




কচুপাতার সবটুকু জল ফেলে দিলাম
শিশিরবিন্দু হল কিনা খবর নিয়ো।
তোমার কাছে একটি চিঠি ভাসিয়ে দিলাম
নৌকোখানা ভিড়লো কিনা খবর নিয়ো।

রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭

নারসিশাস

তোমায় যেদিন প্রথম দেখেছিলাম
ঠিক সেদিনই আমি
ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার না হয়ে
সরাসরি রাস্তাটা পেরিয়ে যাচ্ছিলাম
একটা ভয়াবহ ট্রাক দুর্ঘটনা
হতে গিয়েও হলনা।
দ্বিতীয়বার যখন তোমায় দেখি
ফুটপাথের ধারে একটা শিঙ্গাড়া মুখে পুরে
যেই না দিয়েছি মন চা পানে
হঠাৎ কেমন করে যেন
রাজ্যের বিষম এসে জড়ো হল
সেই বিষম এখনো কাটেনি
হিক্কায় পরিণত হয়ে গেছে।
তৃতীয় বার তোমায় দেখি
এক কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠানে,
আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কবিতার
সবচেয়ে সুন্দর পঙক্তিগুলো পড়ার মুহূর্তেই
কেন যে তোমায় দেখে ফেললাম।
কবিতা গিলে ফেলার অভ্যেস আমার ছিলোনা
ঠিক সেদিন থেকে অভ্যেসটা হয়ে গেল।
ঠিক সেদিন থেকে আমি আর কবিতা পড়তে পারিনা।
মেয়ে,
তুমিকি এমন মানুষ গুলোর খবর রাখো ?
নাকি নিজের রুপে নিজেই মুগ্ধ হয়ে থাকো?

বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭

ইতি তোমার স্নেহধন্য কন্যা শেখ হাসিনা

প্রিয় বাবা,
কেমন আছ তুমি?
শ্রাবণের প্রায় শেষ।
এবার আকাশটা যা দেখালো
দিন নেই , রাত নেই, ঝমঝম ঝমঝম
একটানা যেন কোন ট্রেন চলেছে অনেক দূর থেকে দূরের দেশে।
এমন বৃষ্টি মনটা বড় অস্থির করে তোলে বাবা,
সবার কথা মনে পড়ে শুধু।
কিন্তু জানো ব্যস্ততা এত কঠিন ভাবে আমায় গিলে খাচ্ছে
দিন দিন আমি যেন একটা মাটির পুতুল হয়ে যাচ্ছি।
অবশ্য তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।
তোমার মেয়ে একদিন রানি নয় রাজা হবে।
রাজাদের তো এমনই জীবন তাইনা বাবা?
আমি এখন প্রায় সব কাজেই প্রথম হই।
তোমার মনে আছে স্কুলে প্রথম হয়ে এসে
যখন তোমার গলা ধরে ঝুলতাম
তুমি কি আদরটাই না করতে,
এখনো আমি পরীক্ষা দিই বাবা
আমি প্রথম হই
কিন্তু
ঐ সংবাদ তোমার কাছে পৌঁছুবার ব্যস্ততা আর আমার নেই।
কেউ নেই তোমার মতন
আমার মাথায় হাত রেখে বলবে
অনেক বড় হতে হবে মা
অনেক বড় হতে হবে তোর
দেশটা বড় অভাগা রে
দেশটা কে কিছু দিতে হবে মা
তুই প্রস্তুত হ। আমি আছি।
আমি আছি, আমি আছি বলতে বলতেই তো বড় করেছো।
কিন্তু কেমন দেখ তো?
ঠিক তুমি নাই হয়ে গেলে,
তোমরা সবাই নাই হয়ে গেলে
এক দুঃসহ দুঃস্বপ্নে
আমার কাছে তো দুঃস্বপ্নই মনে হয়।
বাবা,
ঐদিন যারা নির্মম ভাবে তোমাকে
তোমাদের সবাইকে হত্যা করেছিলো
আর ভেবেছিল ওখানেই বুঝি সমাপ্তি আমাদের
ওখানেই বুঝি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাঙালির কবর
তাদের প্রত্যেকের কবর খোঁড়া হয়ে গেছে।
তাদের পরিবার গুলোকে এখন সবাই চেনে
লজ্জায় তারা অনেকেই দেশ ছেড়েছে
আমার দেশের মানুষ কে সাথে নিয়ে
এই কঠিন পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়েও
তোমাকে একবার
শুধু একবার জড়িয়ে ধরতে পারিনি,
বাবা,
ঐ রাজাকার গুলোর ও বিচার হয়েছে
যারা তোমায় নয়টা মাসের অসহনীয় যন্ত্রণা দিয়েছে,
তোমার প্রানের মানুষ গুলোকে যারা নির্বিচারে হত্যা করেছে
হত্যার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
আমি তাদের ফাঁসির ব্যবস্থা করে দিয়েছি,
যারা তোমার মা বোন দের নির্যাতন করে মৃত্যুর দড়ি গলায় ঝুলাতে বাধ্য করেছে
আমি তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি
একেবারেই নিশ্চিহ্ন,
লজ্জার মৃত্যু বরণ করেছে তারা
কবরেও জায়গা দেয়নি তাদের
আমার দেশের মানুষ।
আমি আবার প্রথম হয়েও
তোমায় চিৎকার করে বলতে পারিনি,
বাবা,
তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?

বাবা, তুমি কি সত্যি দেখতে পাও?
তুমি কি দেখতে পাও তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশের স্বপ্ন যাত্রা ।
বিশ্বের দরবারে তোমার বাংলার পোশাক কি করে পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে
তুমি কি দেখতে পাও?
দেখতে পাও?
আমাদের সেই পিছিয়ে পড়া মা বোনদের সাহসী পদক্ষেপ?
তোমার স্বপ্ন কি আমি একটুও পূরণ করতে পেরেছি বাবা?
তবু কেন এত অস্থির লাগে?
কেন এখনো কিছু দুর্বৃত্ত প্রতিরাতে
আমার দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে?
সেই ১৫ আগস্টের মতন?
কেন বাবা?
এখনো কেন আমার ভয় করে?
আমাকে নির্ভীক করে দাও আবার আবার বাবা।
আমি তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশের সমস্ত কষ্ট নষ্ট করে দিতে চাই,
আমাকে আরেকবার আঙুল তুলে দেখিয়ে দাও চেনা শত্রু।
আরেকবার বাবা
আরেক বার।
কথা দিচ্ছি আমি তোমায় নিরাশ করবোনা
আমি আবার প্রথম হব বাবা সবসময়ের মতন।
দেখনা,
বৃষ্টি হচ্ছে,
আচ্ছা বাবা,
এই বৃষ্টি কে ছুঁয়ে দিলে কি
তোমাদের সবাই কে ছুঁয়ে দেয়া যায়?
তোমরা কত দূরে?
কত দূরে? তোমরা সবাই?

ইতি
তোমার স্নেহধন্য কন্যা
শেখ হাসিনা। 

অনুকাব্য ৮

দূরত্ব সবসময় মূল্যবৃদ্ধি করে
তবে তাই হোক
যে নদীর জলে দিনরাত স্নান
সে জল তবে মেঘ হোক।

অনুকাব্য ৭

আমরা একসময় চুম্বক ছিলাম
তাই এত বেশি ভয় হয়
চুম্বক যত দূরে যায়
আকর্ষণ তত ক্ষয়।

অনুকাব্য ৬

আজ বিকেলের আমন্ত্রনে হঠাৎ হলেম পাখি
আকাশখানা ঠাঁই দিলো না ছাদেই ডাকাডাকি।

অনুকাব্য ৫

মিষ্টি ভোরের সাথে পাখিদের ডাক
দুপুরের কড়া রোদ থাক পড়ে থাক
সবুজের ভাঁজে আর রোদ আসেনা কো
যতক্ষণ পারো তুমি পাশে বসে থাকো।

অনুকাব্য ৪

একটি সোনালি বিকেল যখন
হার মানে তার রুপে
তড়িঘড়ি করে সন্ধ্যা নামে
সূর্য লুকায় ঝোপে ।

বাবা, তুই কত ভালো আছিস?

বাবা, 
তুই ভালো আছিস তো?
এখানে আমার সংগে
আরও অনেক বোকা মা
ঘুরে বেড়ায়।
সবাই কাঁদে 
আমি কাঁদিনা।
বাবা,
তুই ভালো আছিস তাইনা?
এখানে আমার সংগে
আরও অনেক মমতাময়ী মা
অভিমানে অভিযোগ করে
মাঝে মাঝে শাপ শাপান্তও করে।
আমি করিনা ।
বাবা, 
তুই খুব ভালো আছিস তাইনারে ?
এখানে মায়েরা মাঝে মাঝে
স্মৃতি হাতড়ে খিলখিল হেসে ওঠে
কখনো বা বাঁকা চাঁদের মতন
মিষ্টি ।
হঠাৎ দেখে ফেলবো বলে 
আর বুকের পাঁজরটা চুরমার হয়ে যাবে বলে 
আমি ওদের দিকে তাকাই না। 
বাবা, 
তুই নিশ্চয়ই খুব খুব ভালো আছিস।
কারণ তুই জন্ম নেবার পর থেকেই 
আমি দেখেছি 
তুই কেবল খারাপ থাকলেই আমায় খুঁজিস ।
বাবা, তুই কত ভালো আছিস?
আমাকে তুই খুঁজিস না কতদিন!!!!!!!!!

অনুকাব্য ৩

সোনালু ফুল, সোনালু ফুল
সোনা রঙের মেয়ে
তোমার সঙ্গে সখ্য হল
ফুল কুড়োতে যেয়ে।
ফুল নেব কি তোমায় নেব
যখন ভেবেছি
হঠাৎ চোখে পড়লো ছায়া
স্বপ্ন দেখেছি।

জলের মেয়ে ১২

তোমার সঙ্গে প্রতিদিন
যে পথটা দিয়ে হাঁটি 
এখন সে পথে একা আমি।
তোমাকে জানালেই তুমি বল,
সামলে নাও,
জীবন কখনো একইভাবে চলেনা।
তোমার সঙ্গে প্রতিদিন
যে টং ঘরটাতে চা খেতাম
এখন ঐ ঘরটা আমায় একলা দেখে হাসে।
ঝাঁপ খোলা ঐ ঘরটাকে 
দেখে মনে হয়
কি বিদ্রূপ ঐ হাসির মধ্যে।
তোমাকে জানালেই তুমি বল
সামলে নাও,
জীবন কখনো একইভাবে চলেনা।
একেকটা ঋতু আমাকে একেক স্মৃতির কষ্ট দেয়।
বর্ষায় রিক্সা বাসরে তোমার তীব্র চুমু,
গ্রীষ্মে আমার চিবুকের বিন্দু বিন্দু ঘাম লেহন
যেন বড় স্বাদের কোন পানীয় ,
শরতে কাশের দোলায় দুলিয়েছো নাভিমূল ,
হেমন্তে সোনালী চড়ুই এর সাথে
নবান্নের শৈশব,
শীতে তোমার সোয়েটারের ভিতর 
আমার ঠাণ্ডা হাত দুটোর উষ্ণতার খোঁজ,
আর বসন্তে?
বসন্তে কাকের বাসা খুঁজে খুঁজে
কোকিলের কুহু শোনার বিলাসি অপেক্ষা,
এ সমস্ত কিছু মনে পড়ে গেলে
যেই না ভিজে যায় চোখ,
আমি তোমাকে জানালেই তুমি বল,
সামলে নাও,
জীবন কখনো একইভাবে চলেনা।
আজ তোমায় জানাচ্ছি শোন,
আমি আর পুরনো স্মৃতি নিয়ে থাকতে পারছিনা।
ওমা কথাটার শেষ শব্দ দুটো জানার আগেই
তুমি বললে,
আরেকটু সামলে নাও লক্ষিটি,
আমি আসছি
স্মৃতি তোমার আমার সাথেই হবে
একটু পরেই আকাশে ভাসছি
যেওনা কোথাও
অন্য কোন খানে
পাবেনা খুঁজে
আর জীবনের মানে,
সামলে নাও আরেকটু
আমি আসছি
একটু বাদেই
হাওয়ায় ভাসছি।
আমার খুব ইচ্ছে হল বলি,
এখন তবে সময় হল চলি
হাওয়ায় তুমি ভেসে বেড়াও সুখে
আমি একটু মুক্তি খুঁজি
আমার নিজের চোখে।

অদ্ভুত শহর

এই শহরে বৃষ্টি হলে
নৌকা চলে জলেস্থলে
এই শহরে বৃষ্টি হলে
চিকুনগুনিয়া ডানা মেলে
এই শহরে বৃষ্টি হলে
মানুষ মরে দলে দলে
এই শহরে বৃষ্টি হলে
কবিতা যায় অতল তলে।
কলম নাকি লেখার ছুরি
ছুরিতো কাজ করছেনা
মেয়র দুজন বেশতো আছেন
কথার ঝুরি থামছেনা।
এই শহরে বৃষ্টি হলে
সৃষ্টিতো আর থাকবেনা
এই শহরে বৃষ্টি হলে
কবিতা আর জমবেনা।

আকাশ ঘুরে এলাম

দুমাস পরে আজ তোমাকে
হাতের মুঠোয় পেলাম
আজ সূর্য আর ডোবেনি
আকাশ ঘুরে এলাম।
তোমায় পেলে জোস্নাও কি
দিনের মতন থাকে!
মন খারাপের রাতগুলোকে
আলোয় ভরে রাখে?
দুমাস পরে আজ তোমাকে
হাতের মুঠোয় পেলাম
রূপকথা নয়, রূপকথা নয়
আকাশ ঘুরে এলাম।

জলের তাণ্ডব

প্রতিদিন জলের তান্ডব দেখি
চারকোনা বাক্সটা যেন
ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়
জলের ঘূর্ণী।
প্রতিদিন দেখি
শোবার ঘরে আয়েশী চেয়ারে
এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা হাতে
প্রতিদিন দেখি
দেখে যাই
জলের তান্ডব
আর নিজেকে প্রশ্ন করি
মনে মনে 
খুব চুপে
আমি ওদের পাশে দাঁড়াব কি করে!
স্বয়ং ঈশ্বরইতো ওদের পাশে নেই।
আমাদের ভদ্রপল্লীর ঈশ্বর
আমাদের সংগেই থাকেন।

কাছের মানুষ

প্রতিরাতে অমন বৃষ্টি কেন?
শ্রাবণ যে।
শ্রাবণে বুঝি রাতভর বৃষ্টি হয়?
হূম, সারাদিন মেঘ আর রাত এলেই ঝরে পড়ে অভিমান ।
আমার মত ?
কেন? তোমার মত হবে কেন? 
আমিও তো শ্রাবণের মত। রাতভর একা। দিনভর জেগে জেগে কারোর ঘুম দেখা ?
কেন? রাতে তো আমি তোমার কাছেই থাকি।
থাকো? আমার কাছে? নাকি তোমার কবিতার কাছে? 
দেখ আবার বৃষ্টি। দেখনা যেন পানের বরজের মতন লতানো কান্না ।
অথবা মানিপ্ল্যান্ট।
আচ্ছা আমি কার মত?
জানিনা। দেখিনি তো কখনো।
কখনো কেন আমি হই নাকো তোমার কবিতা? কবি, আমাকে কবিতা করে নেবে ? আমি তোমার শ্রাবণ হব।
ধূর পাগলী, কাছের মানুষ কখনো কবিতা হয়?

অনুকাব্য ২





তুমি ছুঁয়ে দিলে কি যেন হয়
হঠাৎ আমার রূপ খুলে যায়
তুমি ছুঁয়ে দিলে কি যেন হয়
লোকে বলে দেখ সুন্দরী যায়।

অনুকাব্য ১



যাও তো যাও 
অন্য কাউকে ভালোবাসো
গ্রহণের অসুবিধে নিয়ে 
আমার কাছে কেন আসো?



শেখ মুজিবর রহমান


প্রিয় বাংলাদেশ,
অনেক দূরের থেকে দেখছি 
এতোটাই দূর যেখান থেকে ফিরে আসা যায়না চাইলেই,
তবে ঠিক চিনে নিতে পারি তোমায়
শুধু তাই নয়
প্রতিরাতে তোমার যে কান্নার ঢেউ 
সেই ঢেউয়ের শব্দ ও আমার দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে ।
দূরে চলে গিয়েছি বলে ভেবোনা
সংযোগ পাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
দেহটা হয়তো দূরে কিন্তু আত্মাটা ঠিক ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
অতৃপ্ত আত্মা কখনো কি শান্তি পায় বলতো ?
অতৃপ্ত কেন?
আমার মৃত্যুটাই তো অতৃপ্ত
এত সহজ মৃত্যু তো আমি চাইনি।
বুড়ো থুড়থুড়ে হয়েও, 
তোমার সবুজ ঘাসের গায়ে পা পিছলে 
পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়েও
তোমার আকাশটাতে চোখ রাখতে চেয়েছিলাম।
চেয়েছি ওভাবেই শেষ দিনটা আসুক
আমি তৃপ্তি ভরে তোমায় দেখে নিতাম শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
কিন্তু হয়নি।
থাক ওসব কথা।
প্রিয় বাংলাদেশ,
তোমার বুকের সবুজ ঘাসগুলোর 
আজকাল কেমন লালচে আভা,
যেন ছোপ ছোপ রক্ত। 
আচ্ছা, আমি এবং আমার পুরো পরিবারের এত লাল রক্ত
যে ঘাস রঙ্গিন করতে পারেনি
এখন কি সেখানে বয়ে যায় আরো খুন?
আরো ধর্ষণ ?
আরো পাপ?
আরো অপরাধ?
এমনকি তিরিশ লক্ষ শহীদ যে রক্ত দিয়ে গেছে
তার রঙ কেমন ছিল?
ও আচ্ছা।
ঐ রঙ তো লাল হতে পারেনা
ঐ রঙ মাটিতে পড়েই সবুজ হয়ে যায়
কেননা ঐ একেকটা স্রোতধারাই তো আমার বাংলাদেশের
একেকটা অংশ
গ্রাম অথবা শহর।
কিন্তু আমার দেশ এখন এত লাল কেন?
অভিমানে?
যেমন করে কিশোরীর কপোল 
গোধূলির মতন রঙিন হয় তেমন অভিমানে?
না না এ তো সেই অভিমান নয়।
প্রিয় জন্মভূমি আমার,
তুমি কি এখনো শৃঙ্খলিত ?
ঐ যে, ঐ যে,
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
তোমার সারা শরীর জুড়ে কতগুলো কুৎসিত হায়না
হাত ধরাধরি করে আছে।
তুমি নড়তে পারছনা,
প্রতিবাদ করতে পারছনা, তুমি আবার যুদ্ধে নামতে চাইছ
তুমি পারছনা।
তুমি পারছনা নিজের সন্তানের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করতে।
প্রিয় বাংলাদেশ,
আমি যে জানলার পাশে আমার মেয়েটাকে
প্রতিদিন ক্রন্দনরত দেখতে পাই
আকুল হয়ে সে আমায় ডাকে
আমি তার দিকে হাত বাড়াই 
কিন্তু এই হাত যে তার কপাল স্পর্শ করেনা।
প্রিয় বাংলাদেশ আমার,
সযত্নে রেখে আসতে পারিনি বলেই কি
আজ তুমি এতোটাই ক্ষত বিক্ষত?
আচ্ছা?
আমার সব দীর্ঘশ্বাস এক করে যদি
একটা কালবোশেখি পাঠাই 
তুমি পারবেনা?
পারবেনা ঐ হায়নাদের শৃঙ্খল ভেঙে আরেকবার মুক্ত হতে?
পারবেনা?
ইতি
শেখ মুজিবর রহমান

মেয়েটি




কর্ণে তাহার পুষ্পদলের শোভা
মুখমন্ডলে শেষ বিকেলের আভা। 
আকাশ তাহার চোখের কিনার ঘেঁষে 
রাত্রি নামায় ভালোবেসে ভালোবেসে।

হাতের মুঠোয় জোনাক দিতে গিয়ে
দিয়ে দিলাম জোস্নাভরা চাঁদ
চাঁদটি এখন লুকিয়ে তাহার হাতে
অভিমানে অশ্রু ঝরায় রাত।