প্রিয় বাবা,
কেমন আছ তুমি?
শ্রাবণের প্রায় শেষ।
এবার আকাশটা যা দেখালো
দিন নেই , রাত নেই, ঝমঝম ঝমঝম
একটানা যেন কোন ট্রেন চলেছে অনেক দূর থেকে দূরের দেশে।
এমন বৃষ্টি মনটা বড় অস্থির করে তোলে বাবা,
সবার কথা মনে পড়ে শুধু।
কিন্তু জানো ব্যস্ততা এত কঠিন ভাবে আমায় গিলে খাচ্ছে
দিন দিন আমি যেন একটা মাটির পুতুল হয়ে যাচ্ছি।
অবশ্য তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।
তোমার মেয়ে একদিন রানি নয় রাজা হবে।
রাজাদের তো এমনই জীবন তাইনা বাবা?
আমি এখন প্রায় সব কাজেই প্রথম হই।
তোমার মনে আছে স্কুলে প্রথম হয়ে এসে
যখন তোমার গলা ধরে ঝুলতাম
তুমি কি আদরটাই না করতে,
এখনো আমি পরীক্ষা দিই বাবা
আমি প্রথম হই
কিন্তু
ঐ সংবাদ তোমার কাছে পৌঁছুবার ব্যস্ততা আর আমার নেই।
কেউ নেই তোমার মতন
আমার মাথায় হাত রেখে বলবে
অনেক বড় হতে হবে মা
অনেক বড় হতে হবে তোর
দেশটা বড় অভাগা রে
দেশটা কে কিছু দিতে হবে মা
তুই প্রস্তুত হ। আমি আছি।
আমি আছি, আমি আছি বলতে বলতেই তো বড় করেছো।
কিন্তু কেমন দেখ তো?
ঠিক তুমি নাই হয়ে গেলে,
তোমরা সবাই নাই হয়ে গেলে
এক দুঃসহ দুঃস্বপ্নে
আমার কাছে তো দুঃস্বপ্নই মনে হয়।
বাবা,
ঐদিন যারা নির্মম ভাবে তোমাকে
তোমাদের সবাইকে হত্যা করেছিলো
আর ভেবেছিল ওখানেই বুঝি সমাপ্তি আমাদের
ওখানেই বুঝি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাঙালির কবর
তাদের প্রত্যেকের কবর খোঁড়া হয়ে গেছে।
তাদের পরিবার গুলোকে এখন সবাই চেনে
লজ্জায় তারা অনেকেই দেশ ছেড়েছে
আমার দেশের মানুষ কে সাথে নিয়ে
এই কঠিন পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়েও
তোমাকে একবার
শুধু একবার জড়িয়ে ধরতে পারিনি,
বাবা,
ঐ রাজাকার গুলোর ও বিচার হয়েছে
যারা তোমায় নয়টা মাসের অসহনীয় যন্ত্রণা দিয়েছে,
তোমার প্রানের মানুষ গুলোকে যারা নির্বিচারে হত্যা করেছে
হত্যার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
আমি তাদের ফাঁসির ব্যবস্থা করে দিয়েছি,
যারা তোমার মা বোন দের নির্যাতন করে মৃত্যুর দড়ি গলায় ঝুলাতে বাধ্য করেছে
আমি তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি
একেবারেই নিশ্চিহ্ন,
লজ্জার মৃত্যু বরণ করেছে তারা
কবরেও জায়গা দেয়নি তাদের
আমার দেশের মানুষ।
আমি আবার প্রথম হয়েও
তোমায় চিৎকার করে বলতে পারিনি,
বাবা,
তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?
বাবা, তুমি কি সত্যি দেখতে পাও?
তুমি কি দেখতে পাও তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশের স্বপ্ন যাত্রা ।
বিশ্বের দরবারে তোমার বাংলার পোশাক কি করে পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে
তুমি কি দেখতে পাও?
দেখতে পাও?
আমাদের সেই পিছিয়ে পড়া মা বোনদের সাহসী পদক্ষেপ?
তোমার স্বপ্ন কি আমি একটুও পূরণ করতে পেরেছি বাবা?
তবু কেন এত অস্থির লাগে?
কেন এখনো কিছু দুর্বৃত্ত প্রতিরাতে
আমার দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে?
সেই ১৫ আগস্টের মতন?
কেন বাবা?
এখনো কেন আমার ভয় করে?
আমাকে নির্ভীক করে দাও আবার আবার বাবা।
আমি তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশের সমস্ত কষ্ট নষ্ট করে দিতে চাই,
আমাকে আরেকবার আঙুল তুলে দেখিয়ে দাও চেনা শত্রু।
আরেকবার বাবা
আরেক বার।
কথা দিচ্ছি আমি তোমায় নিরাশ করবোনা
আমি আবার প্রথম হব বাবা সবসময়ের মতন।
দেখনা,
বৃষ্টি হচ্ছে,
আচ্ছা বাবা,
এই বৃষ্টি কে ছুঁয়ে দিলে কি
তোমাদের সবাই কে ছুঁয়ে দেয়া যায়?
তোমরা কত দূরে?
কত দূরে? তোমরা সবাই?
ইতি
তোমার স্নেহধন্য কন্যা
শেখ হাসিনা।