রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৫










প্রিয় রূপচাঁদা
একটা বৃহৎ গোলকের ভেতর মনোভূমি নৃত্য করে বেড়াচ্ছে। পৃথিবীর মানচিত্রের ওপর আলতো পদচ্ছাপে সৃষ্টি হওয়া সামুদ্রিক গতিপ্রকৃতি যেন হঠাত করেই আবিস্কৃত স্রোতের শীতল প্রবাহমানতা । আশ্চর্য্ ঐ অধরের মাঝ দিয়ে ধাবমান রেখার সংলাপ যেন ক্রমশ সমান্তরাল রেখা থেকে তীরের মতো বেঁকে গিয়ে পৃথিবীকে আরো বেশি নিকটতম করে তুলছে। ভেবে দেখো সম্মুখস্থ এই সংযোজন  ক্রমশ: পশ্চাতের বিয়োজনের মধ্যে দিয়ে যে মানচিত্র দাঁড়াবে একদিন ,তখন ফিরে আসা ডাহুকগুলো নিজেদের আবাসস্থল খুঁজে পাবে না, মাটির তলদেশ থেকে জেগে ওঠা উঁইপোকা খুঁজে পাবে না আকাশ । ল্যুভ মিউজিয়ামের পেইন্টিংগুলোর রেখা মুছে গিয়ে সাদা ক্যানভাস ঝুলবে অনর্থক।
ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে কেবল একটিই রেখা দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করবে,সে তোমার হাস্যজ্জল প্রতিবিম্ব ছাড়া আর কিছু নয়।


ওই গালের টোলের ভেতর,ওই বৃহৎ গোলকের ভেতর আমি হারাতে চাই।
ইতি
তোমার পাখি

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৪

প্রিয় রূপচাঁদা
তুমি কেবল একটি সভ্যতার নামই নও;অপরাপর সভ্যতার সারসংক্ষেপও বটে।
 
হে ভগবতী,
আমাকে অনুমতি দাও,তোমার পৃষ্ঠা উন্মোচনের অনুমতি দাও,অক্ষরের ওপরে জমে থাকা বরফের ইতিহাস সরিয়ে তোমাকে পাঠ করি শুদ্ধভাবে। যথার্থভাবে তোমার নামের উচ্চারণের মধ্যেই রয়ে গেছে ধ্বনির ফজিলত।
যখনই আমি সেই ধ্বনিকে উচ্চারণের প্রস্তুতি নিচ্ছি,তুমি তখন ধ্বনির কেন্দ্র থেকে এসে দাঁড়ালে আমার মুখোমুখি।
আমি কি একটা সভ্যতার মুথোমুখি দাঁড়ানোর যোগাভ্যাস করেছি! আমাকে কী তুমি যুক্ত করে নিয়েছিলে এই ঘটনার পূর্বে।
তীব্র আলোর মুখোমুখি দাঁড়ানো বর্ণমালার মতই অসহায় হয়ে গেলাম।সকলের পাঠ থেকে বিরতী দিয়ে আমাকে তোমার অক্ষর করে নিলে অতর্কিতে।

একটা আবছা আভাও আজ অবশিষ্ট নেই! তোমার চোখে কাজলের রসায়ন ছাড়া আমার ভিন্ন কোন অস্তিত্ব আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
প্রিয় রূপচাঁদা ,
ওই চোখে তাকিয়োনা আর। 
ওই চোখে তাকিয়োনা তুমি।

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৩










প্রিয় রক্তজবা
তোমাকে আমার রূপচাঁদা বলেই ডাকার কথা ছিলো। আমাকে এ্যাতোটুকু করুনা করো আজ।আমি তোমার দেয়া নামটা ধরেই ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজ আমি যে রক্তের মুখোমুখি হয়েছি সেই রক্তের নিজস্ব কোন রূপ নেই। কিন্তু একটা রূপাভাস আছে! যেমন এই সমস্ত কার্বনসত্বা একটা রূপাভাস মাত্র। অথচ সেই রূপাভাসও তার নিজস্ব অস্তিত্ব হারিয়ে একটা জবাসদৃশ ফুলের কাঠামোতে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি স্বয়ং সেই কাঠামোর জন্যে যে অপেক্ষা করেছিলাম এমন নয়, আমি নামক কোন সত্বা এইখানে কাজ করে নাই। আমার কোন সত্বার নিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে এই কাঠামো হাজির হয় নাই। এই সত্বা আমার পরাশাব্দিকস্তর থেকে পশ্যন্তি হয়ে এমনভাবে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ,আমি যেন প্রবেশ করবো আর তার প্রত্যাগমনের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে নিয়ে এগিয়ে চললো লক্ষ্যবস্তুর দিকে, যেভাবে প্রেমিকারা তাদের নিজেদের উপরে একটা ব্যবধানের আভা দিয়ে নিজেদের অদৃশ্য করে মিলনের একেকটা ধাপ অতিক্রম করেন।



রক্তজবা ,
ঐ আভাসত্বাও তুমি নও,তুমি শেষ পর্যন্ত রক্তজবায়ও থাকোনি! আমি সেই বিস্ময়ের গল্পটা বলার দাবী নিয়েই তোমাকে রক্তজবা ডেকেছি যেন আমরা আমাদের পরিচয়ের চিন্হ থেকে নিজেদের পরিচয়ের অস্তিত্বে নিয়ে যেতে পারি!
তুমি ঠিক ঐভাবেই আমার সামনে এসে দাঁড়ালে যেভাবে বিজ্ঞানীরা ব্লাকহোলের তত্বের সামনে দাঁড়ায় ! বিজ্ঞানীরা কি কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন? না পারেননি,কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করার অর্থই হচ্ছে আদিতে ফিরে যাওয়া। রূপান্তর ক্রিয়ার প্রজনণের উতসে ফিরে যাওয়া। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে কৃষ্ণগহ্বরের অভিকর্ষকে অতিক্রম করে কিছুই বের হতে পারে না, আমি সেই কৃষ্ণগহ্বর, সেই রক্তজবার ভেতরে প্রবেশ করলাম। তারপর আমি রূপান্তর ক্রিয়ার অংশ হয়ে গেলাম। আমি সেই রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে আদিতে পৌঁছে গেলাম। কি সেই আদি? স্ব আত্মানং দ্বেধা পাতয়ত। সেল্ফ বা নিজ , নিজেকে দুই করলেন। নিজেকে দুই করার সময় যে শব্দ হলো সেটা পত্ উচ্চারণের মতো। সেই পত থেকে পতি। অর্থাত সেল্ফ জায়া থেকে পতি বানালেন। আমি আমার জায়ার সাথে মিশে গেলাম। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে কৃষ্ণগহ্বর থেকে যে বস্তু ছিটকে বের হতে পেরেছিলো সে হচ্ছে একটুকরো বিচ্ছুরিত আলো। সেই আলো এক্সপাণ্ড করে করে জগত সৃষ্টি করেছে।তুমি লক্ষ্য করো সেই সময়ের কথা,যখন আমাকে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে,সেই সময়টার কথা যখন আমি কৃষ্ণগহ্বর থেকে ছিটকে পড়া সেই আলোটার মতো। আমি সেই আলো,যে তার জায়ার স্বরূপ দেখেছে,কিন্তু জায়ার সত্বার সাথে মিশে থাকতে পারে নাই। আমি সেই আলো...
সেই আলো সকাল বেলার বালকের দৃষ্টির মতন অনির্দিষ্ট পথ থেকে ছুটে আসা ঘুড়ি। জ্বলজ্বল করছে সবুজ সংকেতের উপর লাল রক্তজবা। ঈশ্বরের উপদেশাবলী জমে জমে ধর্মগ্রন্থের মতো শীতের শিশিরের বিন্দুরূপ জমে জবার পাপড়িতে ব্রহ্মাণ্ডের সকল জবার স্মারকচিহ্নের প্রতিবিম্ব। আমি সেই প্রতিবিম্বের ভেতর রূপান্তরের সাক্ষাত পেয়েছিলাম। রূপান্তরের সাক্ষাত পেয়েছিলাম সূর্যের মতো বহুমাতৃক বহুনামের সারসংক্ষেপ। দিবাকর,রবি,ভানু গো,ইত্যাদি। হে আমার সৌন্দর্য্যের  স্বাক্ষ্য, তুমি ঠিক ইংরেজি সান অর্থে সূর্য নও, তুমি নানান সুরতে হাজির হওয়া উজ্জলতা। এবং এইভাবে দেখলাম তোমার মধ্যে দৃশ্য থেকে দৃশ্যে, অদৃশ্য থেকে অদৃশ্য দৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তুমি বহু থেকে একক হয়ে গেলে, একক থেকে এক হয়ে একটা সকাল বেলার সূর্য হয়ে গেলে খুব সচেতননভাবে কপালে সেঁটে রাখা টিপেরই মতো।এইভাবে মর্তে কীভাবে বহুর মধ্যে নিজেদের একাত্ম করে ফেলা যায় এটা একটা পুরাণ হয়ে গেলো।ঐতিহাসিকেরা বোধ করি এবার অর্ধনারীশ্বরের জন্য আরেকটা নিদর্শন পেলেন। 

স্ব আত্মা নং দ্বেধা পতি:
প্রিয় রক্তজবা,

শুরুতেই বলেছি তুমি সেই কৃষ্ণগহ্বর স্বয়ং।তুমি একটা সময় নও,তোমার ভেতরে সময় একটা অংশ হয়ে থাকে।তোমার থেকে বিকিরিত সত্ত্বা ভেতরের অংশগুলোকে আকর্ষণের মাধ্যমে কর্ষণ করেন।আমি কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর প্রবেশের সাথে সাথেই কর্ষণের ক্ষেত্র হিসাবে প্রস্তত হলাম। শ্রীকৃষ্ণকীর্তণ যে আমারই ভূমি কর্ষণের চিতকার ধ্বনি পদকর্তারা কি এই গোমট কাউকে ফাঁস করে গেছেন! আমি তোমার দ্বারা কর্ষিত হইনি প্রিয়তমা। আমি তোমার আভা দ্বারা রচনার ভূমিকা হয়ে ছিলাম কেবল। ভুমি মানে তো জমি বা ক্ষেত্র আর কা শব্দের অর্থ কোন জনার? বহুকর্তার পদে পদে আমাকে ছড়িয়ে দিলে শস্যের বীজের মতন। জগতের সকল বৃক্ষই সেই ছড়িয়ে দেয়া তোমার সত্বাভার প্রতিফলন। বলো ,বৃক্ষের কথা না বলে কীভাবে আমি ফুলের কথা বলি! কীভাবে আমি ভূমিকে রহিত করে দিয়ে কোন এক নক্ষত্রের অবরোহনের কথা ভাবি?
আমি যা কিছুই বর্ণনা করিনা কেন সব কিছুই তোমার বর্ণনার অংশ হয়ে আছে। প্রকৃতির সকল অস্তিত্বই তোমার বর্ণনার স্বরূপ ব্যাখ্যা করছে কেবল! আমি নিজেও তোমার বর্ণনার একটা স্বরূপ। তোমার নিজ যখন আমি’র ভেতরে প্রবেশ করে,আর তখনই তুমি আমাকে ডাকো,আমাকে নাম ধরে ডাকো,পাখি বলে ডাকো। আমি সেই পাখি, পাখিই আকাশের কেন্দ্রভূমি। যেমন একটা কম্পাস যেভাবে মাত্র একটা বিন্দু নিয়ে নিজের স্থিতি নিশ্চিত করে কেন্দ্রে ,আর প্রান্তের ডানায় অজস্র বিন্দু। আমি সেই বিন্দু, আমি সেই সমগ্রের অংশ মাত্র। জবার ওপরে নড়ে উঠা জলজকণা।


প্রিয় রূপচাঁদা ,
তুমি আর লাল শাড়ি পড়োনা। লাল চুড়ি তো নয়ই।

শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৪

পাহলভী পাখির পাগল কথা



হে আমার শংখ নদীর মাছ ,


কিরিলিয়ান ফটোগ্রাফি আবিস্কৃত হবার পর আমি ঠিক বুঝে গেছি কেবল প্রাণ হলেই চলবে না,চৈতণ্যই সর্বশেষ কথা নয়,জড়ও হতে হবে,মাঝে মধ্যে অচৈতণ্য হলেও ঈশ্বরের সমান ভুগোল প্রাপ্তী ঘটে।তোমার প্রতি আমার চৈতণ্যই সর্বশেষ কথা নয়,তোমার দৃষ্টি,বাক,বায়োপ্লাজমিক কেশান্টিনা এবং স্পর্শের তরঙ্গবিস্তার সে আমার অধিগত আলয়। তবু এই যে চেয়ারে তুমি বসে আছো,সামনের টেবিল,ক্যামেরার লেন্স স্টুডিওর আলোকসজ্জা হাতের নিচে শায়িত স্ক্রিপ্ট এই সব অচৈতন্য জড়ও তোমার সামষ্টিক সত্তার ধারক তো আমি যেন ঐ চেয়ার,আর তোমাকে ঘিরে থাকা জড় ও অজড় হই,হতে চাই।আমি ঐ আসনটি হতে চাই বা যে পথ দিয়ে তুমি হেটে প্রবেশ করো প্রক্ষেপণালয়ে। আমি ঐ দেয়ালটি হতে চাই যে দেয়াল তোমার পেছনে থেকে গৃহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
কিরিলিয়ান ফটোগ্রাফি আবিষ্কৃত হবার পর জানা গেল সকল বস্তুরই আছে বায়োপ্লাজমিক বডি। যে শ্বাস প্রশ্বাসের ফলে বায়ুর অস্তিত্ব সজাগ,তোমার ঐ এস্ট্রাল বডির সাথেও ঘুরে বেড়াতে চাই সমান্তরাল।
কোনো ফটোগ্রাফি নয়;
আমি স্বয়ং তোমার কিরিলিয়ান হতে চাই।


ইতি তোমার পাখি

মেঘের জন্যে গান ১

জোনাকিরা জ্বলছে
কিছু কথা বলছে
টুপটাপ ঝরছে
রাতের শিশির।
একটুকু ছোঁয়া
হয়নাকো পাওয়া
হয়নাকো ধরে রাখা
বুকের গভীর।

কেঁদে কেঁদে মন বলে
রাত্রি ছায়ায়
মন কি তোমার আর
ডাকেনা আমায় ?
তবু ঝড় ঝরঝর
রোদ্দুর নেই যে
একবার কাছে এসে
ছুঁতে প্রাণ চাইছে।

মেঘ তবু কাটেনা
বিরহবেলায়
ঘুম আর খেলেনা
চোখের পাতায়
তবু মন গুনগুন
কি সুরে গাইছে
একবার ধরা দাও
ছুঁতে প্রাণ চাইছে।





বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

উষ্ণতা

 সৌরবিজ্ঞানের হিসাব মতে পৃথিবীর বুকে সূর্যের উপস্থিতি কয়েক লক্ষ বছরের হয়তো। কিন্তু সেই সূর্য প্রায় চার পাঁচ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে আলো পৌঁছতে পারছে না। এই যে বাধাটা কোথা থেকে ঠিক আসলো সেটা সূর্যেরও জানা নেই। তো আজ সেই সূর্য তার সমস্ত শক্তি খরচ করে পৃখিবীর বুকে তার আলো স্থায়ি করার বাসনা নিয়ে অনেকটা আক্রমনাত্মকভাবেই মহাকাশমণ্ডলের পথ অতিক্রম করে পৃথিবীর পথের ভেতর প্রায় প্রবেশ করবে ঠিক এমন সময় সৌরদেবের আলো যে বাধার মুখোমুখি হলো সে আমার হলুদ পাখির ডানার। সূর্য যতোই আলোর প্রভু হোক না কেন পাখির ডানায় জড়ানো রোদ্দুর আর হলুদিয়ার শক্তিশালী তরঙ্গবিস্তারের মুখোমুখি দাড়াতে সক্ষম হলো না। পৃথিবী আজ অতীব উজ্জল ছিলো।জ্ঞানী আর অজ্ঞানীর ভেতরকার দ্বন্দ্ব,মাঠ আর গুহার আভ্যন্তরীন সংকট কীভাবে মুছে গেলো সে কথা হয়তো ভাববার সময় নেই ঘাসফড়িংয়ের।কিন্তু আমি জানি ঐ পৃথিবী উজ্জল করা আলোকময়তা সূর্যের ছিলো না,ছিলো কেবল আমার সেই হলুদিয়া পাখির নিরব বসে থাকা পালকের নিপুঁন বুনটের। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কাছে এই খবর পৌঁছানোর পূর্বেই প্রেমিকের কাছে বিশ্রাম নিয়েছে এই বার্তা।
আমি তো কেবল আলোই পেলাম প্রিয় হলুদিয়া
উষ্ণতা দেবে কে আমাকে!


মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৪

পাখি আর জলকন্যার ভালবাসা




দূর পাহাড়ের সবুজ কোলে
আকাশ যেথা কথা বলে
সেই সবুজের মায়ার থেকে
উড়াল দিলেম ডানা মেলে।

পেরিয়ে যেতে সমুদ্দুর
মেঘের সাথে দেখা
বৃষ্টি বলে নাওনা আমায়
যেওনাকো একা।

বৃষ্টি জলে লুকোচুরি
কৃষ্ণচুড়ার সাথে
কাকাতুয়া বললে ডেকে
যাচ্ছো কোথায় ছুটে?

হেসেই বলি জানিনাতো
কোথায় পথের শেষ
মনের মানুষ খুঁজতে যেতে
হলাম নিরুদ্দেশ।

এমনি করেই রাত্রি নামে
জোনাক জোছনা
ভাবছি আমি আর কত দূর
নদীর ঠিকানা।

একটু পরেই ভোরের আলো
ঝলমলিয়ে ফোটে 
নদীর জলে মিষ্টি মধুর
খেলায় মেতে ওঠে।

হঠাত জলে মাছের সাথে
একটুখানি দেখা
শুধায় আমায় দেবে কি সেই
ভালবাসা রাখা ?

প্রানটি আমার যেই সঁপেছি
জলের কন্যা মাঝে
বাতাস বলে ওরে পাখি
প্রাণ কি তোমার বাঁচে ?

পাখির সাথে জলকন্যার
ঘর বাঁধা কি হয় ?
বিষন্ন এক ব্যর্থ প্রেমের
স্মৃতিই হয়ে রয়।





সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪

পারবিনা আর কষ্ট দিতে





রৌদ ,
জানলাটাতে একটুখানি
দিতে পারিস উঁকি।
ঠাঁই পাবিনা নিস যদি তুই
পুড়িয়ে দেবার ঝুঁকি।

হাওয়া ,
আসতে পারিস মিষ্টি হয়ে
জানলা খোলা সদাই।
যদি বৈরী হয়ে আসবি তবে
দরজা কিন্তু বাঁধাই।

মেঘ ,
দাঁড়াবি নাকি একটুখানি ?
ছায়াসঙ্গীর মতন ?
বৃষ্টি হয়ে কাঁদাস যদি
ফিরিয়ে দেবই তখন।

ওরে তুই ,
ছিটেফোঁটা ঝাপটা হয়ে 
গ্রীলের ধারেই আসিস।
বন্যা হয়ে ভাসাস যদি
বাইরে পড়েই থাকিস।

আমি ,
ভীষণ স্বার্থপরের মতন
নিতে শিখেছি।
পারবিনা আর কষ্ট দিতে
পণ যে করেছি।

আমার ,
জানলা খোলা সবার তরে
দরজা কভূ নয়।
ফিরে যা যতই মিষ্টি দেখতে তোরা
সবটা অভিনয়।

বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৪

পথিক




থমকে চলা একলা পথে
একলা হেঁটে যায়।
কোন সে পথিক পথের ধূলায়
চিহ্ন রেখে যায় ?

চোখের ভিতর কি জানি তার
স্বপ্ন আছে ভাসা
ঠোঁটের কোণে ক্ষণিক হাসি
করছে যাওয়া আসা।

চলতে পথে ফুল কুড়িয়ে
নেয় সে বক্ষ জুড়ে ।
তৃষ্ণা তবু রইলো অটুট
পথের ধারে পড়ে।

রাত্রিশেষে গানের পাখি
মিষ্টি সুরে বলে ,
পথিক আমায় ভুলোনাকো
পথ ফুরিয়ে গেলে।

চাঁদের আলো ফুরিয়ে যখন
সকাল হয়ে আসে ,
আকাশখানা রঙিন হয়ে
হাতছানি দেয় হেসে।

মধুর হাওয়া লুটিয়ে পড়ে
পায়ের কোলে এসে
ধূলোর কাছে যায় যে বলে
পথ কি তবে শেষে ?

পথিক বলে নেইকো আমার
চলার কোনো শেষ
রইবে যত ফুল,পাখি আর
প্রজাপতির দেশ।









সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৪

জোছনায় বৃষ্টিস্নান




সারি সারি পাহাড়ের আলিঙ্গনে লুকোনো মাটির পথ
শিমুলের চোখ ধাঁধানো লাল পাপড়ি
অথবা 
কখনো কখনো হলদে সোনালু ফুল গুলো মিতালি করেছে রোদ্দুরের সাথে।
আর রোদ্দুর ছুঁয়ে গেছে ছোট্ট নীল বুনোফুল
প্রজাপতির দল বড় উচ্ছল ,
আনন্দে মত্ত।
নাম না জানা অজানা পাতাদের সবুজের ভীড়ে
ঝলমলে সূর্যের মিষ্টি লুকোচুরি।
ওই অদ্ভুত রঙিন পথে আজ আমার পথ চলা
প্রেয়সী আমার রয়েছে দাঁড়িয়ে
হয়নিকো তারে প্রেমের কথাটি  বলা।  

একসারি সবুজ বুনো টিয়ে
দিচ্ছে উড়াল দূর বহুদুর
বিশাল বৃক্ষের গা ছুঁয়ে সোনালী স্বর্ণলতা
যেনোবা পণ করেছে ছুঁয়ে দেবে রোদ্দুর
আধো আলো আধো ছায়ায় নামছে বিকেল
মেঘেদের শুরু হলো বুঝি রঙ চুরি খেলা
একটু পরেই নামবে এসে মিষ্টি গোধুলি বেলা।
এই কি তবে সময় প্রেয়সীর চোখে চাওয়া?
মনের যত  না কথা চোখ চোখে বলে যাওয়া ?

সোনার থালার মতন সোনালী সূর্য নীরবে লুকোচ্ছে পশ্চিমে
খুব হঠাত,একেবারেই হঠাত যেন মিলিয়ে গেল পাহাড়ের মাঝখানে।
বড্ড দ্রুত নামলো আঁধার।
নয়তো কালো ,নয়তো ধূসর রঙ তার
রুপোলি চাদর গায়ে গুচ্ছ গুচ্ছ রুপোলি জোছনায়
রাত্তিরের হাত ধরে পূবের আকাশে একফালি চাঁদ
স্পষ্ট ,বড় বেশি উজ্বল আজ।
বলছে আমায় কোথায় বল প্রেয়সী তোমার লুকিয়ে ?
জোছনার রঙে সাজাবো তারে তারার ফুলটি দিয়ে।
এই কি তবে সময় ?
ওই হাতে হাত রাখবার ?
নিশ্বাসে নিশ্বাসে
বিশ্বাস ভরে নেবার ?

এমনি করেই রাতের আলোয় স্পর্শ করব তারে
কালো মেঘখানা বললো হেসে
ভুললে কি তবে আমারে ?
পাহাড়ের সাথে সন্ধি করেছি
আজকে জোসনা রাতে
নামবে বৃষ্টি প্রেয়সী তোমার
ভিজবে সেই ধারাতে ,
বৃষ্টির সাথে জোছনার হবে আলিঙ্গনের খেলা
প্রেয়সী তোমার বুকের ভিতর আঁকবে কথা না বলা।

সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৪

নীলাম্বরী










আজকে হঠাত নীলচে টিপে
সাজলে কেনো মিষ্টি মেয়ে ?
সমুদ্দুরের নীল কে বুঝি
হার মানাবে এদিক চেয়ে ?

নীলাম্বরী শাড়ির ভাঁজে
আকাশ টাকে রাখলে এঁকে,
বন্ধ হলো আকাশ দেখা
তোমার পানে চেয়ে থেকে।

হঠাত যেদিন চোখ রেখেছি
তোমার চোখের নীলাভ জলে ,
অপরাজিতার মাঠ খানা যে
হার মেনেছে সেই অতলে।

একটুখানি ছুঁতে গিয়ে
হাত রেখেছি কপোল জুড়ে ,
নীল পদ্ম উঠলো ফুটে
শিরার উপশিরার ভীড়ে।

এত্ত সুখের নীলের মাঝে
কষ্ট কি আর ফুরিয়ে গেছে ?
ভালবাসার নীল বেদনা
বলতে পারো কে দেখেছে ?

হারিয়ে আকাশ তোমার মাঝে
খুঁজতে নীলের সমুদ্দুর ,
অপরাজিতার মাঠ টি বলে
বন্ধু তুমি কোন সুদূর ?

বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৪

ভ্রম

মেঘ গুলো সব তুলো হয়ে
নেমেছে আজ কাশের বনে ,
অবাক আমি তাকিয়ে ভাবি
আকাশ কেনো ফুলের সনে ?

কামরাঙ্গা গাছ সবুজ সবুজ
যেই কাছে যাই ছুঁতে গিয়ে ,
হঠাত সবুজ দিলো উড়াল
আরে একি !ওরা টিয়ে।

আঁধার রাত্রি নামলো ভেবে
ডুব সাঁতারে তার মাঝারে
মিষ্টি সুবাস পেতেই বুঝি
নয়কো আঁধার ,চুল আহারে।

রঙিন প্রজাপতি ভেবে
যেই না ছোঁয়া মুখ খানি তার
হারিয়ে গেলো ,পালিয়ে গেলো ,
মানুষ সে যে ,রঙের বাহার। 

বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৪

আগন্তুকের ফেরার আশায়



রাত্তিরের ভয়ঙ্কর শব্দ গুলো
সকালের আলোতে কেমন অদ্ভুত পাল্টে যেতে থাকে।
সারা রাতের কুয়াশায় ভেজা শিউলী ঝরে পড়ে,
আর একখানা পথ হয়ে যায় আগন্তুকের।
আকাশ হঠাত রং পাল্টে নীলের থেকে নীলে গড়ায়।
মেঘ গুলো সব রং চোয়ানো
হাসতে থাকে গোধূলিবেলায়।
অপরাজিতার মাঠ খানা হয় সবুজ থেকে আরো সবুজ।
ওই সবুজে চলতে গিয়ে মানুষ হয়ে হয়না থাকা ,
প্রজাপতির ডানায় চড়ে  দূর অজানায় চলতে থাকা
হঠাত আকাশ পাড়ি দিতে পাখির সাথে যেইনা দেখা
বলে :মৌটুসী নামটি আমার ,
আমার সাথে যাবে একা ?
ভাবছি আমি কেমন করে পাখি হয়ে দেবো উড়াল ,
ঠিক তখনই নদীর কিনার ডাকে আমায় একটু আড়াল
তবেকি আমি নদী হবো ?
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে
ঢেউ এর সাথে হারিয়ে যাবো?
চলতে পথে হঠাত কোনো মাছরাঙ্গা দের রঙের সাথে
আবার কোনো পাখি হয়ে পথ হারাবো 
পথ হারাবো ?
পথের মাঝে শুভ্র শাদা শিউলী যদি ডাকে আমায়
আমি নাহয় ফুলের দেশেই হারিয়ে যাবো। 
হারিয়ে যাবো ?
রইবো পড়ে পথের ধূলোয় আগন্তুকের ফেরার আশায়
রাত্রি শেষে ভোরের আওয়াজ আবার আমায় জাগিয়ে দেবে
পথের ধূলো মাড়িয়ে সে যে আমার পথেই পথ হারাবে।



















ইচ্ছে করে



যখন শিউলী ফোটে পাগল হয়ে
একচিলতে উঠোন জুড়ে ,
শিশির হতে ইচ্ছে করে।

হলুদ সর্ষে মাঠের পরে এলিয়ে দিয়ে
মেঘ কালো চুল 
আমার বড় প্রজাপতি হতে ইচ্ছে করে।

আমের বোলের মিষ্টি সুবাস
যখন ডাকে পথের পথিক
চৈতালি হাওয়া হতে ইচ্ছে করে।

ক্লান্ত গরুর গাড়ি যখন
পার হয়ে যায় ঘামভেজা পথ 
আমার তখন জল খোঁজা চাতক হতে ইচ্ছে করে।

মেঘ গুলো সব পাহাড় খুঁজে
ঠিক যখনই বৃষ্টি নামায় ,
মেঘ্মায়াবী কদম হতে ইচ্ছে করে।

আর যখন তুমি আঁকড়ে ধরে চাদরটা তে
ওম খুঁজে নাও
আমি আর আমার মাঝে থাকিনা।
আমার খুব কুয়াশা হতে ইচ্ছে করে।