রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৩










প্রিয় রক্তজবা
তোমাকে আমার রূপচাঁদা বলেই ডাকার কথা ছিলো। আমাকে এ্যাতোটুকু করুনা করো আজ।আমি তোমার দেয়া নামটা ধরেই ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজ আমি যে রক্তের মুখোমুখি হয়েছি সেই রক্তের নিজস্ব কোন রূপ নেই। কিন্তু একটা রূপাভাস আছে! যেমন এই সমস্ত কার্বনসত্বা একটা রূপাভাস মাত্র। অথচ সেই রূপাভাসও তার নিজস্ব অস্তিত্ব হারিয়ে একটা জবাসদৃশ ফুলের কাঠামোতে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি স্বয়ং সেই কাঠামোর জন্যে যে অপেক্ষা করেছিলাম এমন নয়, আমি নামক কোন সত্বা এইখানে কাজ করে নাই। আমার কোন সত্বার নিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে এই কাঠামো হাজির হয় নাই। এই সত্বা আমার পরাশাব্দিকস্তর থেকে পশ্যন্তি হয়ে এমনভাবে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ,আমি যেন প্রবেশ করবো আর তার প্রত্যাগমনের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে নিয়ে এগিয়ে চললো লক্ষ্যবস্তুর দিকে, যেভাবে প্রেমিকারা তাদের নিজেদের উপরে একটা ব্যবধানের আভা দিয়ে নিজেদের অদৃশ্য করে মিলনের একেকটা ধাপ অতিক্রম করেন।



রক্তজবা ,
ঐ আভাসত্বাও তুমি নও,তুমি শেষ পর্যন্ত রক্তজবায়ও থাকোনি! আমি সেই বিস্ময়ের গল্পটা বলার দাবী নিয়েই তোমাকে রক্তজবা ডেকেছি যেন আমরা আমাদের পরিচয়ের চিন্হ থেকে নিজেদের পরিচয়ের অস্তিত্বে নিয়ে যেতে পারি!
তুমি ঠিক ঐভাবেই আমার সামনে এসে দাঁড়ালে যেভাবে বিজ্ঞানীরা ব্লাকহোলের তত্বের সামনে দাঁড়ায় ! বিজ্ঞানীরা কি কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন? না পারেননি,কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করার অর্থই হচ্ছে আদিতে ফিরে যাওয়া। রূপান্তর ক্রিয়ার প্রজনণের উতসে ফিরে যাওয়া। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে কৃষ্ণগহ্বরের অভিকর্ষকে অতিক্রম করে কিছুই বের হতে পারে না, আমি সেই কৃষ্ণগহ্বর, সেই রক্তজবার ভেতরে প্রবেশ করলাম। তারপর আমি রূপান্তর ক্রিয়ার অংশ হয়ে গেলাম। আমি সেই রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে আদিতে পৌঁছে গেলাম। কি সেই আদি? স্ব আত্মানং দ্বেধা পাতয়ত। সেল্ফ বা নিজ , নিজেকে দুই করলেন। নিজেকে দুই করার সময় যে শব্দ হলো সেটা পত্ উচ্চারণের মতো। সেই পত থেকে পতি। অর্থাত সেল্ফ জায়া থেকে পতি বানালেন। আমি আমার জায়ার সাথে মিশে গেলাম। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে কৃষ্ণগহ্বর থেকে যে বস্তু ছিটকে বের হতে পেরেছিলো সে হচ্ছে একটুকরো বিচ্ছুরিত আলো। সেই আলো এক্সপাণ্ড করে করে জগত সৃষ্টি করেছে।তুমি লক্ষ্য করো সেই সময়ের কথা,যখন আমাকে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে,সেই সময়টার কথা যখন আমি কৃষ্ণগহ্বর থেকে ছিটকে পড়া সেই আলোটার মতো। আমি সেই আলো,যে তার জায়ার স্বরূপ দেখেছে,কিন্তু জায়ার সত্বার সাথে মিশে থাকতে পারে নাই। আমি সেই আলো...
সেই আলো সকাল বেলার বালকের দৃষ্টির মতন অনির্দিষ্ট পথ থেকে ছুটে আসা ঘুড়ি। জ্বলজ্বল করছে সবুজ সংকেতের উপর লাল রক্তজবা। ঈশ্বরের উপদেশাবলী জমে জমে ধর্মগ্রন্থের মতো শীতের শিশিরের বিন্দুরূপ জমে জবার পাপড়িতে ব্রহ্মাণ্ডের সকল জবার স্মারকচিহ্নের প্রতিবিম্ব। আমি সেই প্রতিবিম্বের ভেতর রূপান্তরের সাক্ষাত পেয়েছিলাম। রূপান্তরের সাক্ষাত পেয়েছিলাম সূর্যের মতো বহুমাতৃক বহুনামের সারসংক্ষেপ। দিবাকর,রবি,ভানু গো,ইত্যাদি। হে আমার সৌন্দর্য্যের  স্বাক্ষ্য, তুমি ঠিক ইংরেজি সান অর্থে সূর্য নও, তুমি নানান সুরতে হাজির হওয়া উজ্জলতা। এবং এইভাবে দেখলাম তোমার মধ্যে দৃশ্য থেকে দৃশ্যে, অদৃশ্য থেকে অদৃশ্য দৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তুমি বহু থেকে একক হয়ে গেলে, একক থেকে এক হয়ে একটা সকাল বেলার সূর্য হয়ে গেলে খুব সচেতননভাবে কপালে সেঁটে রাখা টিপেরই মতো।এইভাবে মর্তে কীভাবে বহুর মধ্যে নিজেদের একাত্ম করে ফেলা যায় এটা একটা পুরাণ হয়ে গেলো।ঐতিহাসিকেরা বোধ করি এবার অর্ধনারীশ্বরের জন্য আরেকটা নিদর্শন পেলেন। 

স্ব আত্মা নং দ্বেধা পতি:
প্রিয় রক্তজবা,

শুরুতেই বলেছি তুমি সেই কৃষ্ণগহ্বর স্বয়ং।তুমি একটা সময় নও,তোমার ভেতরে সময় একটা অংশ হয়ে থাকে।তোমার থেকে বিকিরিত সত্ত্বা ভেতরের অংশগুলোকে আকর্ষণের মাধ্যমে কর্ষণ করেন।আমি কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর প্রবেশের সাথে সাথেই কর্ষণের ক্ষেত্র হিসাবে প্রস্তত হলাম। শ্রীকৃষ্ণকীর্তণ যে আমারই ভূমি কর্ষণের চিতকার ধ্বনি পদকর্তারা কি এই গোমট কাউকে ফাঁস করে গেছেন! আমি তোমার দ্বারা কর্ষিত হইনি প্রিয়তমা। আমি তোমার আভা দ্বারা রচনার ভূমিকা হয়ে ছিলাম কেবল। ভুমি মানে তো জমি বা ক্ষেত্র আর কা শব্দের অর্থ কোন জনার? বহুকর্তার পদে পদে আমাকে ছড়িয়ে দিলে শস্যের বীজের মতন। জগতের সকল বৃক্ষই সেই ছড়িয়ে দেয়া তোমার সত্বাভার প্রতিফলন। বলো ,বৃক্ষের কথা না বলে কীভাবে আমি ফুলের কথা বলি! কীভাবে আমি ভূমিকে রহিত করে দিয়ে কোন এক নক্ষত্রের অবরোহনের কথা ভাবি?
আমি যা কিছুই বর্ণনা করিনা কেন সব কিছুই তোমার বর্ণনার অংশ হয়ে আছে। প্রকৃতির সকল অস্তিত্বই তোমার বর্ণনার স্বরূপ ব্যাখ্যা করছে কেবল! আমি নিজেও তোমার বর্ণনার একটা স্বরূপ। তোমার নিজ যখন আমি’র ভেতরে প্রবেশ করে,আর তখনই তুমি আমাকে ডাকো,আমাকে নাম ধরে ডাকো,পাখি বলে ডাকো। আমি সেই পাখি, পাখিই আকাশের কেন্দ্রভূমি। যেমন একটা কম্পাস যেভাবে মাত্র একটা বিন্দু নিয়ে নিজের স্থিতি নিশ্চিত করে কেন্দ্রে ,আর প্রান্তের ডানায় অজস্র বিন্দু। আমি সেই বিন্দু, আমি সেই সমগ্রের অংশ মাত্র। জবার ওপরে নড়ে উঠা জলজকণা।


প্রিয় রূপচাঁদা ,
তুমি আর লাল শাড়ি পড়োনা। লাল চুড়ি তো নয়ই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন