মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

আমায় তুমি ভালোবাসো আরেকবার



জামাটা মা বানিয়েছে।
"সুন্দর। খুব মিষ্টি লাগছে তোমাকে। "
মেলায় যাচ্ছি গো। বাবা ডাকছে।
ফিরে এসে প্রথম তোমার কাছেই আসবো।
"আচ্ছা এসো। "

মা কেমন করে শাড়ী পড়ে বলোতো ?
ভারী কষ্টের কাজতো।
একটা টিপ দেবো কি ছোট্ট মতোন ?
ভালো লাগবে ?
"দাও ,আরো অপূর্ব দেখাবে তোমাকে। "
যাচ্ছি গো। রমাদি'র হলুদ বরণ আজ।
ফিরে এসে প্রথম তোমার কাছেই আসবো।
"আচ্ছা  এসো। "

শোনোনা?
মা 'র সাথে এখনো দেখা হয়নি।
কিছু বোঝা যাচ্ছে আমায় দেখে ?
ধরা পড়ে মরি বুঝি ?
"ঠোঁটে আরো কিছু রং ছোঁয়াও,
নয়তো সব রং মুছে ফেলো।
তুমি বেশ কাঁপছো কিন্তু। "
আচ্ছা, আচ্ছা, বইয়ের ভেতর মুখ লুকোই তবে।
ঘুমোবার আগে ঠিক তোমার কাছেই  ফিরে আসবো।
"আচ্ছা এসো। "

ওদের বড্ড ভালবাসি জানো ?
ছেড়ে যেতে প্রাণ চাইছেনা।
কেনো এমন নিয়ম ?
কেন মেয়েরাই শুধু পরের বাড়ি যাবে ?
"এটাই রীতি। চিরন্তন। "
 কেমন লাগছে বললে নাতো ?
"পরীর মতন লাগছে। "
যাই গো।
আবার ঠিক তোমার কাছেই ফিরে আসবো।
"আচ্ছা এসো "


"কি মিষ্টি, কি মিষ্টি!!!
তোমার ভেতর আরেকটা তুমি।
শুনতে পাচ্ছো ?
ঝড়।
তোমার ভেতর দুটো হৃতপিন্ড এর ঝড়।
মেয়ে ,
তুমি অনুভব করে নাও।
এই ঝড় তুমি অনুভব কর মেয়ে। "
অতসব বুঝিনা।
বলনা কেমন লাগছে দেখতে ?
"অপূর্ব এক মা।
সত্যি অপূর্ব তোমার রূপ। "

"মাধবী ,
আজকাল কোথায় হারাও বলোতো ?
তোমায় খুঁজে খুঁজে সারা।"

কেমন আছো তুমি ?

"আমার তো কোনো অনুভূতি নেই।
তুমি যতখানি দাও ততখানিই আমার।
তুমি যেমন আছো তেমনই আছি।
কেন অমন কালো মেঘের ছায়া ?"

কালো মেঘ ?কোথায় ?
দুচোখ কবে থেকে ভাসছে বৃষ্টির জলে !
বুঝি আজ দেখতে পেলে ?
দেখার সময়টা হারালো কোথায় ?
যাই। অনেক কাজ বাকি।
সব কাজ সেরে ঠিক তোমার কাছেই ফিরে আসবো।

"আচ্ছা এসো। "


এই ?
কি আশ্চর্য !
আমার চোখের কোণে ভাঁজ কেনো ?
আমার কপালে অমন কোচকানো ওটা কি ?
আমার অন্ধকার চুল গুলোতে সাদা রঙের কিসের ছটা ?
এই ?
তুমি কে ?
তুমি কে ?
তুমি কে ?
"চিনতে পারছোনা মাধবী ?
এই সমুখে
কত রূপে,কত ভাবে তোমার আবির্ভাব।
সবটাই তো আমার ভালবাসার।"

নাআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআ।
আমি চাইনা।এই তোমাকে আমি চাইনা।
চাইনা। চাইনা। চাইনা।
তুমি চুরমার হয়ে যাও।
তুমি ধংস হয়ে যাও।
তোমার কাছে আমি আর কোনদিন ফিরে আসবোনা।



"মাধবী,
আমায় তুমি ভেঙ্গে ফেললে ??????


এতদিন একাই ছিলাম।
এখন দেখো। দেখতে পাচ্ছো ?
শত শত আমি।
কোথায় পালাবে?
কোথায় যাবে আমায় ছেড়ে ?
আমিই তোমার মাধবী ।
দেখো......
এখনো কি অপরূপ রূপ তোমার ।
তুমি ভালোবাসো।
ভালোবাসো আরেকবার।
আমার সমুখে এসে দাঁড়াও আরেকবার।"


শনিবার, ২২ মার্চ, ২০১৪

হঠাত বৃষ্টি



কাঠফাটা রোদ্দুর
সব যেনো জ্বলছে ,
তোকে ভারী প্রয়োজন
আসবি কখন যে ?

রিনিঝিনি রিনিঝিনি
নূপুরের ছন্দে ,
বিজলী চমক নিয়ে
আসবি কখন যে ?

ফুলগুলো দলছুট
কোথা যে হারাচ্ছে ,
পাতার সবুজ নিয়ে
আসবি কখন যে ?

সোঁদা মাটি গন্ধ
ছুঁতে প্রাণ চায় যে ,
ধূলো বালি ভিজিয়ে 
আসবি কখন যে ?

দুচোখ মেলেছে ডানা
ওই দূর আকাশে ,
চাঁদখানা ঢেকে তুই
আসবি কখন যে ?

পাখি তোরা ঘরে যা
প্রজাপতি ভিজছে ,
টুপটাপ ,ঝুপঝাপ ,
ওই যে সে আসছে।

আয় তোরা ছুটে আয় ,
ওই মেঘ ডাকছে।
হঠাত বৃষ্টি তাই
হঠাতই সে আসছে।

শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০১৪

সানাই



পদ্মপুকুর ,পদ্মপুকুর ,
এখন কি তুই সুখী ?
কাদায় ভরা ফুল তুলতে
আসবেনা আর সখী।

বকুল ফুল ,বকুল ফুল ,
বকুল তলায় সুখ
কোঁচড় ভরে নেবোনা আর
দেবোনা তো দুখ।

ভুলুয়া রে ভুলুয়া তুই ,
সঙ্গে যাবি চল।
রাত বিরাতে ভাত চাইতে
পাবি কি আর বল ?

ডিঙ্গি রে মোর একলা ডিঙ্গি
একলা বাঁধা থাক।
এলো চুলে তুলতে শালুক,
কেও দেবেনা ডাক।

ঘুড়ি আমার ,নাটাই আমার ,
কোথায় তোদের রাখি ?
আকাশ আছে সবখানেতেই
সঙ্গে নেবো নাকি ?

মাটির গড়া পুতুল দুটো
ডাকছে কেনো আমায় ?
মেলার বাঁশি হারিয়ে গেছে ,
বাজছে কেবল সানাই।



বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০১৪

ইচ্ছেঘুড়ি




'পুতুল , এত কম ঘুমোলে হবে ?
শরীর খারাপ করবেতো।
অত চাঁদ দেখাদেখি বন্ধ করতে হবে তোর।'

তুই  কি করে জানলি?

'কোজাগরী পূর্নিমা হয়েছিলাম তোর বারান্দায়।'

'অমন বর্ষা আর নামবেনা বলেছে কেউ ?
একদিনে অত বৃষ্টিস্নান ?
অসুখ করলে কে দেখবে বলতো ?'

তুই  কি করে জানলি ?

'এক টুকরো মেঘ হয়ে এসেছিলাম তোর ছাদে। '

'তোর কাজ আমি কিচ্ছু ভেবে পাইনাকো!
চৈত্রের অমন কাঠফাটা রোদ্দুরেও  পাখির বাসা খুঁজতে হবে ?
কটা পেলি  দুজনে মিলে ?'

তুই  কি করে জানলি  ?

'তোর উঠোনের সজনে গাছটার সাদা ফুল গুলো হয়েছিলাম।'

'একরাতে বেশ শৈত্য প্রবাহ বইছিলো।
অনেক শীত করছিলো তোর ?
ওখানেকি আমার বুকের চেয়ে বেশি উষ্ণতা ?
নাকি তুই  উষ্ণ হবার ভান করছিলি?'

তুই  কি করে জানলি?

'কুয়াশার সাথে বোঝাপড়া চলছিলো।'

'সমুদ্র কে  সামনে রেখে কখনো মিথ্যে বলতে নেই।
সেদিন তোর নিশ্বাসে বিশ্বাস ছিলো  কি ?
অমন সমুদ্রস্নানে মিথ্যে কেমন করে বললি ?

তুই  কি করে জানলি?

'অবুঝ শামুকটা তোর শুভ্র সুন্দর পা দুটো রক্তাক্ত করেছিলো
তাকে চিনতে পারিসনি?'

'আমার সকল সুখ তুই  খন্ডিত করেছিস।
আর কোনো সুখে ওকে জড়াতি।
আর কোনো ভালোলাগায় ?
ওকে কেনো বৃষ্টি দিলি ?
ওকে কেনো সমুদ্র দিলি?
ওকে কেনো পূর্নিমা দিলি?'

তুই  কি করে জানলি ?

'ইচ্ছেঘুড়ির কাছে ।
তোর চোখের পাতায় ওড়াই।
প্রতিদিন। 
তোর চোখ কাঁপে।
আর আমি বুঝি
মিথ্যে বলতে তোর খুব কষ্ট হয় পুতুল।'



রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৪

দেখা হবেই



পাতাঝরা দিনগুলো  কেমন অদ্ভুত,
কাটতেই চায়না।
অথচ সুবাসিত মুকুলের উত্সব ,
থাকতেই চায়না।

কোটি কোটি মুকুলের ভিড়ে
জানি সকলের নয় প্রস্ফুটন।
তবুও মুকুলই আমাকে শেখায়
হারিয়ে বাঁচার বেদন।

আমি সুবাসী আমের বোল ,
করি সুবাসিত মেঠো পথ ,
হেথা লুকিয়ে রেখেছি যতনে
না বলা কথা যে সব।

এই সুবাস ছড়ানো পথে
তোমার একবার চেয়ে দেখা
সেইখানে মোর জীবন
সেই সুবাসেই বেঁচে থাকা।

যা কিছু হারাবে হারাক
জানি সুবাস কথা কইবেই
প্রতি চৈতালী উত্সবে
দেখা হবেই বন্ধু হবেই।

বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৪

হৃদয়ের থেকে দূরে



আমি তোমার তৃতীয় সংখ্যা ছিলাম।
লটারির মত স্বপ্ন
বুঝি পেয়ে যাবে কোনো রত্ন।

আমি খুব আশার একখানা সংখ্যা ছিলাম।
ভালবাসা ছিলো অল্প।
যন্ত্রণা ভরা গল্প।

আমি তোমার গর্ভের মাঝারে ছিলাম।
হৃদয়ের থেকে দূরে। 
শুধু কান্নার সুরে।

আমি তোমাকে খুনী বানিয়ে ছিলাম।
সহজ একটা হত্যা
কেড়েছে তোমার স্বত্তা।

আমি এই পৃথিবী টা একটু দেখতে চেয়েছিলাম।
তোমার হাত টি ধরে
স্নেহেতে ভর কোরে।

আমি ভেবেছিলাম  মানুষ মাত্রই পৃথিবী দেখতে পারে।
অথচ জন্ম আমার অভিশাপ।
হত্যা নয়তো পাপ।


সনাক্ত হবার আগ পর্যন্ত আমি খুব সুখী ছিলাম
কেবলই বাহারি ভাবনা।
মিষ্টি মধুর কল্পনা।


দিন তেমন করেই কাটতো?
খুব কি ক্ষতি হতো ?
কেনো গিয়েছিলে তুমি জানতে ?
রাজকন্যা নাকি রাজপুত্র ?











মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০১৪

নাগলিঙ্গম



যেখানে আমি গিয়েছিলাম
নাগলিঙ্গম এর মেলা বসার কথা ছিলো।
ফাগুনের বৃষ্টি  ছাড়া নাকি নাগলিঙ্গম ফোটেনা।
তার ফোটার প্রতীক্ষায় ছিলাম।

আমি কেমন ভীষণ অপেক্ষায় বাকরুদ্ধ
সে এসে কখন দাঁড়িয়েছে পাশে
চোখে চোখ করেছে বিদ্ধ।

বললে হেসে :"দেখছো কি গো ?
কিসের প্রতীক্ষায় ?
এই ফুলেরই সুবাস নিতে
একটু বৃষ্টি চাই।

ফাগুন মাসে বৃষ্টি বল সহজ বুঝি পাওয়া ?
ওই কঠিনেরে বেসেছি ভালো
ওই না পাওয়ারেই চাওয়া।

তাকিয়ে কেনো  মিষ্টি মেয়ে
নাগ কলির ঝাঁকে?
বৃষ্টি ছাড়া ওই কলি তো
ফুল দেবেনা তোকে।"

আমি শুনলাম ,শুনে হাসলাম।
চেয়ে রইলাম তার পানে।
সে ও বোঝেনি ,কভূ জানেনি
কবে ফুটেছে ফুল এ প্রাণে।    

সোমবার, ১০ মার্চ, ২০১৪

ওরা




সারাবেলা বড় অস্থির
মন যে কেমন করে।
বুক কেঁপে চলে তিরতির
ওই ছোট্ট পাখির তরে।

পাখি মেলছেতো ডানা দিনদিন
গুটিগুটি পায়ে চলছে।
বুঝি আদরের মাঝে প্রতিদিন
নিজেকেই খুঁজে নিচ্ছে।

"তুই ওখানটাতে বসে
অমন হা করে দেখিস কি ?
ওই রঙিন বাক্স এ সারাদিন
মন কেবলই হারায় কি ?

আজ থেকে খাওয়া বন্ধ
তুই যেমন ছিলিস থাক। 
কেনো আমার পাখিটা দিনদিন
শুকিয়ে হচ্ছে কাঠ ?

কাজের মাঝে তো নেই মন
শুধু আকাশ পানেতে চাওয়া।
খাঁচার পাখির হয় কি
ওই আকাশের স্বাদ নেয়া ?

যারা চেঁচিয়ে আকাশ মাতায়
যা তাদের কাছেই যা।
ওরা বলবেই তোরে দেখিস
খেটে মরেই খা।

শিশু শিশু করে ওরা
যতই মরে মরুক ,
জানি ওদের বাড়ি ও খাঁচা
কেড়ে নিচ্ছে তোদের  সুখ।"



 

"তুমি যতই ভয় দেখাও  
দেখো গর্জে উঠেছে ওরা। 
হবেই হবে একদিন 
ওই দূরের আকাশে ওড়া। 

শুরুই যখন হলো 
শেষ আছে নিশ্চয়ই। 
আমি অপেক্ষাতে আছি 
একদিন তালা ভাঙ্গবই।"




রবিবার, ৯ মার্চ, ২০১৪

আমি একলা তো নই কভূ



পাঁচ বেলাতে হাত বাড়িয়ে তোমায় ছুঁতে চাই
কোথায় তুমি ?
দেখছিনা তো।
দেখার চোখ কি নাই ??
ভোরের ঘোরে
করুন সুরে,
যাই যে তোমায় ডেকে।
কবে অন্ধকারে প্রদীপ জ্বেলে
আসবে দূরের থেকে?


সন্ধ্যাবাতি জ্বালিয়ে খুঁজি
কোথায় তুমি আছো ?
রক্তজবা ফুল টি নিয়ে
বুকের ভিতর বাঁচো। 
সিঁদুর মাখা ঢাকের সুরে
কখন গেলে চুমি ?
প্রসাদ পেতে আসন পাতি
কোথায় আছো তুমি ?

গীর্জা জুড়ে
ঘন্টা বাজে

মধুর মূর্ছনায় ,
আছোই তুমি। 
জানি আমি।
সকল প্রার্থনায়।


অহিংসাতে ,মানবধর্মে
কোথায় আছো বল?
সবার মাঝেই
বিরাজ কর। 
লুকিয়ে শুধু চল।

অন্ধকারে আলোক জ্বেলে
দাঁড়িয়ে আছো  প্রভূ,
দেখা নাইবা হলো
আছোই তুমি।
একলা তো নই কভূ।



শনিবার, ৮ মার্চ, ২০১৪

আলোয় ভরা বিশ্ব



কদম দিলে খোঁপায় ?
চাইনা ,চাইনা।
আনতে পারতে  বেলী ,
অথবা হাসনাহেনা ?
বাদল দিনে নেইতো বাদল 
সুবাস কোথায় ফুলে ?
বৃষ্টিভেজা কদম এনো।
খোঁপায় রাখি তুলে।

তোদের এত্তো কিসের ঝগড়াঝাটি ?
সাতসকালে এসে ?
ওরে গন্ধ কিসের ?
শিউলি নাকি ?
আশ্বিন এসে গেছে ?

শালিক গুলো কদিন হলো
জ্বালায় বড্ড বেশি।
ধান পাকলো নাকি  ?
সুবাস কেনো ?
অঘ্রান  এলো বুঝি ?

কুয়াশার ও সুবাস আছে।
অনুভবে পাই।
আমি গন্ধ কিনি
গন্ধ চিনি
যদি শিশির ঝরে গা'য়।
পৌষ এসছে  দ্বারে
আজকে তারে
জানাই  নিমন্ত্রণ।
মধুর রোদ্র ছটা
মাখবো গায়ে।
জানিয়ে দিও ক্ষণ।

একটা দুটো ছোট্ট কুঁড়ি
দিচ্ছে নাকি উঁকি ?
মাটি হাসছে কেনো ?
ঘ্রাণ আসছে কেনো ?
ফাগুন এলো  নাকি ?

উউফ উড়িয়ে দিলো
প্রাণ হারালো
ঝড়ো  হাওয়া বইছে।
আম কাঁঠালের গন্ধে বাতাস
বোশেখের কথা কইছে।

দৃষ্টি নেইতো কি হয়েছে ?
আছে গভীর  দুটি  চোখ।
আমার আঁধার কালো বারান্দাতেই
লুকিয়ে সকল  সুখ।

আমি সুবাস কিনি
সুবাস চিনি।
সুবাস করি স্পর্শ।
লোকে যতই বলুক আঁধার,
আমার আলোয় ভরা বিশ্ব।

 




 





বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০১৪

পারবিনা আর কষ্ট দিতে



রৌদ ,
জানলাটাতে একটুখানি
দিতে পারিস উঁকি।
ঠাঁই পাবিনা নিস যদি তুই
পুড়িয়ে দেবার ঝুঁকি।

হাওয়া ,
আসতে পারিস মিষ্টি হয়ে
জানলা খোলা সদাই।
যদি বৈরী হয়ে আসবি তবে
দরজা কিন্তু বাঁধাই।

মেঘ ,
দাঁড়াবি নাকি একটুখানি ?
ছায়াসঙ্গীর মতন ?
বৃষ্টি হয়ে কাঁদাস যদি
ফিরিয়ে দেবই তখন।

ওরে তুই ,
ছিটেফোঁটা ঝাপটা হয়ে 
গ্রীলের ধারেই আসিস।
বন্যা হয়ে ভাসাস যদি
বাইরে পড়েই থাকিস।

আমি ,
ভীষণ স্বার্থপরের মতন
নিতে শিখেছি।
পারবিনা আর কষ্ট দিতে
পণ যে করেছি।

আমার ,
জানলা খোলা সবার তরে
দরজা কভূ নয়।
ফিরে যা যতই মিষ্টি দেখতে তোরা
সবটা অভিনয়।

মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০১৪

অপেক্ষা



পৃথিবীটা এমন হয়ে গেছে আজকাল মানুষ ভালোবাসতেও ভয় পায়,যদি ওই ভালবাসা একদিন ভুল হয়ে যায়। যদি কষ্ট পায়। ভালবাসা দিতে ভয় পায় যদি কেও দূর্বল ভাবে।
ভালবাসা নিতেও ভয় পায় যদি তা দুঃখ হয়ে আবির্ভূত হয়।
ভারী অদ্ভুত ভাবে পাল্টাচ্ছে পৃথিবী।
তবেকি অবিশ্বাস আর ঘৃনাই একদিন ওই ভালবাসার অমুল্য স্থান টা দখল করে নেবে?
আমি কখনো হতাশাপ্রবণ মানুষ নই। আমি স্বপ্নজুয়াড়ী টাইপ মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগে।ভালবাসি।হাজার দুঃখ পেয়েও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি।

ওই  যে একটা কথা আছেনা ?
মানুষ অপেক্ষা ভালবাসে।
Life Is Nothing But Waiting????
অপেক্ষাই সত্য। অপেক্ষাই সব।

প্রতিরাতে  চাঁদ ওঠে। সব চাঁদে পাগল জোসনা হয়না। তাইতো  অপেক্ষা প্রবারণার চাঁদের।
কখন অমন জোসনা হবে ?সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ?
জানি ওই জোসনায় কিছুই ভেসে যাবেনা। জানি ওই জোসনায় স্নান করেও অবিশ্বাসের হাত টি ধরেই বলতে হবে "ভালবাসি"।

তবু মানুষ অপেক্ষা করে এক পূর্নিমার জোসনা স্নান বুঝি সবকিছু পাল্টে দিয়ে নতুন সকাল এনে দেবে।
জয়তু সেই অপেক্ষা ..........................

রুদ্মিলার চিঠি ৪



মা যখন ঘুমাতো কোনদিন তার ঘুম মুখের পানে চাইনি। কখনই না। বরং অনেক নাক ডাকতো বলে বিরক্তই থাকতাম সবসময়। পাশে ঘুমাতেই চাইতামনা। আর কিছুক্ষণ পর পর ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতাম। বলতাম : "তুমি এভাবে নাক ডাকলে  আমি কিভাবে ঘুমাবো ?"

খুব অবাক করা ব্যাপার হলো ঠিক একই সময়ে আমার ছেলেটা যখন ঘুমায় আমি কি ভীষণ আদর ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকি। ঘুমের ভিতর ও কি কি করে দেখি।দেখতে দেখতে কখনো রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যায়। আমার দেখা আর শেষ হয়না। ঘুমের ভিতর কি যে  তোলপাড় করে ও বিছানায় !এত্ত বড় বিছানা। আমার জায়গাই মেলেনা। আমার তবু ভালো লাগে। আমি একটুও বিরক্ত হইনা। কত শত রাত অসুস্থ হয়ে নানাভাবে কত বিরক্তই না করেছে ও।
আমি ওই ঘুমচোখে সব ভালোবাসা ,সব আদর ওকে দিয়েছি।আমি প্রাণপণে প্রার্থনা করেছি ওর কষ্টগুলো সব আমার হউক তবু ও ভালো থাকুক। ওর  দেয়া কোনো যন্ত্রণা আমার কাছে যন্ত্রনাই মনে হয়নি।একজন মা তার সন্তানের জন্যে কতো  ভালবাসা ধরে রাখেন ????

অথচ আমার মা এর একটু ব্যাথা কেনো কোনদিন নিতে চাইনি ?এই বিশেষ ঘটনাটা কি  সব মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে ?না শুধু আমার ক্ষেত্রেই ঘটেছে ?আমিকি আর দশজনের চেয়ে আলাদা ?নাকি আমি আর দশজনের মত ?
সম্পর্কের এই সমীকরণ গুলো আমাকে বড্ড ভাবায়।

আসলে আমি একটা অদ্ভুত ভাবনা থেকে এই লেখাটা শুরু করেছিলাম।প্রতিদিন কাজে যাবার সময় যে রাস্তাটা পেরিয়ে আমি যাই তার পাশে একটা দোকান আছে। "খাটিয়ার দোকান"। অন্তিম শয্যায়  চলে গেলে যে বিছানায় সব মানুষ কে শোয়ানো হয়। সেই  বিছানার দোকান। মা বেঁচে থাকাকালীন আমি কোনদিন ওই দোকানটা দেখিনি। মানে চোখে পড়েনি। এটাও একটা আশ্চর্যের ব্যাপার।

আমার অসম্ভব রূপবতী ঘুমচোখ মা টাকে  খাটিয়ায় শোয়ালে কেমন দেখতে লাগে তা আমার জানা  নেই। আমি জানি শুধু সাদা কাপড়ে আমার মা আজীবন অপরূপা।তাই এটুকু বলতে পারি পুরোপুরি  সাদা কাফনে মা কে অপরূপাই লেগেছে নিশ্চয়ই । কেবল ঘুমিয়ে গেলে ওই মুখটাতে কি চুমু খেতে প্রাণ চায় নাকি এটা  খুব জানতে ইচ্ছে করে। নিজেকে অনেক প্রশ্ন করি শেষ ঘুম ঘুমিয়ে গেলে সব চাওয়ার সংযোজন কি একসাথে ঘটতে শুরু করে?
 

তোমাদের যাদের মা আছে তোমরা সবাই একটু দেখোতো ,,,তোমাদের মা কে ঘুমচোখে কেমন দেখতে ????আমি  কখনো দেখে রাখিনিতো তাই বললাম। এখন যে আর কোনদিন দেখতে পাবোনা ঘুমিয়ে গেলে আমার মা কে কেমন দেখতে লাগে ????

সোমবার, ৩ মার্চ, ২০১৪

বর্ষায় খুঁজি ফাগুন



কেমন মিষ্টি মিষ্টি হাওয়া
বুঝি ফাগুন এসেছে।
সবুজে রঙিন দোলা
যেনো আগুন লেগেছে।

কাল পেরিয়ে গেলাম যে পথ
শুকনো বালির কণা।
আজ চলেছি সেই  পথে
সুবাস মাটিতে বোনা।

কুয়াশা ঢাকা যে আকাশ
কাল জানলা ঢেকেছে
আজ নানান বরণ রোদে
ঐ আকাশ সেজেছে।

লাল কৃষ্ণচূড়া গুলো
কিছু উঁকি দিয়েছে।
সুবাস নেইতো জানি
তবু প্রাণ তো ছুঁয়েছে।

মরার কোকিলটারই কথা
নাইবা মুখে নিলাম।
জানে সেইতো আমার ব্যাথা
কার অপেক্ষাতে ছিলাম।

সেই মধুর ফাগুন শেষে
কত বয়ে গেছে বেলা।
আমার শীতের সাথেই সন্ধি
কুয়াশার সাথে খেলা।

আমি অঝোর ধারায় এখন
বর্ষায় খুঁজি ফাগুন।
জানি আসবেনা সে ফিরে
বুকে যতই লাগুক আগুন।