শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৪

নীরব শব্দ






সূর্যোদয় হলো।
একটা দুটো পাখির কিচিমিচি
আর ডানার ঝাপটানি।
কাছের আজান শেষ হয়ে কবে
মিলিয়ে গেছে দুরের আজান ও।

কি অদ্ভুত !
একটু আগেও মাঝরাত ছিলো।
শা শা করে হুটহাট রাতের গাড়ী,
পাহারাদারের হুইসেল ,
রাস্তার কুকুরের ডাক ,
আরো কত সহস্র নীরব শব্দের ভিতর
সরব শব্দের আর্তনাদ।

কি অদ্ভুত !
একট আগেই না রাতের খাবারের প্লেটে
তর্জনীর নকশা কাটছিলাম ?
তার একটু আগেইকি
সূর্য ডোবা দেখা হলো ?
অনেক নিভৃতে তোর্ সাথে ?

ভারী অদ্ভুত!
এমনি করেই  দিন যায়কি ?
এমনি করেই রাত ?
তুই চলে যাবি জেনেও কেন
ধরেছিলাম হাত ?





বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

মিষ্টি মেয়ে









তখনও ফুল ফোটেনি

ওড়েনি তুলোর ঝাঁপি ।
তখনও ঢাক বাজেনি
অস্থির সুরে কাঁপি।

ওখানে একটি মেয়ে
হঠাত দেখি একা।
খুঁজছে পেঁজা তুলো
যেন মেঘের ঢঙে আঁকা।

বুঝতে পাইনি কখন
অনেক কাজের ভীড়ে
শরত এসেছে একা
যান্ত্রিক এই শহরে।

শুদ্ধ মিষ্টি মেয়ে
তুমি কেমন করে হাসো ?
অস্থির এই ধরায়
প্রানের জোয়ারে ভাসো ?

ওই একাকী কাশবনে
মেয়ে,আমায় তুমি নেবে ?
নাইবা থাকুক ফুল
কেবল ছোঁয়া টুকু দেবে ?



keats

O let me lead her gently o'er the brook,
Watch her half-smiling lips and downward look;
O let me for one moment touch her wrist;
Let me one moment to her breathing list;
And as she leaves me, may she often turn
Her fair eyes looking through her locks auburne.”
John Keats, Bright Star: Love Letters and Poems of John Keats to Fanny Brawne


 
“My love has made me selfish. I cannot exist without you – I am forgetful of everything but seeing you again – my Life seems to stop there – I see no further. You have absorb’d me. I have a sensation at the present moment as though I was dissolving – I should be exquisitely miserable without the hope of soon seeing you … I have been astonished that Men could die Martyrs for religion – I have shudder’d at it – I shudder no more – I could be martyr’d for my Religion – Love is my religion – I could die for that – I could die for you.”
John Keats, Bright Star: Love Letters and Poems of John Keats to Fanny Brawne


বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

না







আজ আর তোর্ সাথে কথা হবেনা   ?


না।

কেমন স্পষ্ট করে বলে দিলি "না "!

স্পষ্ট করে বলতে ঠিক কতটা কষ্ট হলো
তা দেখলিনা ?
বাড়ি ফিরছি।
একবার বারান্দায় আয়।
কি হলো ?
চুপ কেনো ?
এখন স্পষ্ট করে বলে দে তবে "না "
পারছিস না ?

না
পারছিনা।

কেন ?

কারণ আমি যে তোর্ মতন না।
গাধা ,
তুই আয়।
আমি আসছি বারান্দায়।
তুইও পারবিনা
আমিও পারবোনা।

মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

হাসছে নারী

যেমন করেই
হাসছে নারী
হাসুক না।

এই হাসিতে
চোখ পড়েছে
মন্দ কি গো
হাসুক না।

নার্সিশাস



পাহাড়ের নির্জনতায় থাকতে থাকতে কোনো একটা সময় সমুদ্রের গর্জনের কাছে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে।বৃষ্টির সৌন্দর্য্য, বৃষ্টির বাহুল্যে একসময় অভিশাপের মতন মনে হয়।জলের তরে জীবন আবার জলের বাহুল্যই জলোচ্ছাস।
সব ভালবাসাই অদ্ভুত করে আপেক্ষিক। শুধুমাত্র নিজেকে ভালোবাসার কোনো শেষ নেই। কোনো পরিমিতি নেই।মানুষ নিজে ভালো থাকার জন্যে যাকে যাকে প্রয়োজন ভালবাসে।সবার আগে মানুষ আসলে নিজেকেই ভালবাসে। প্রত্যেকটা মানুষ নিজের মতন করে নার্সিশাস হতে চায়।সেই কবে কোনকালে নার্সিশাস জলের মাঝে নিজের রূপে মুগ্ধ হয়েছিল।অতঃপর নিজের অপরূপ প্রতিবিম্বের কাছে আত্মবিসর্জন। কি অদ্ভুত।পুরাণ কথা কাহিনী গুলো কি ভেবে, কতটা ভেবে লেখা ?নার্সিশাস আজীবন ফিরে ফিরে আসবে।এত বছর আগেও কি করে মানুষ জানতো ?

রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ৪




ফোন টা  বেজেই যাচ্ছে।রুদ্মিলা ধরছেনা।
আর কি ?
জানতে চাইবে :" কিরে রুদ্মি ?বাসায় ফিরেছিস ?ভালো আছিস?মাইগ্রেন পেইন কমেছে ? সোনামনি গুলো ভালো  আছে?"
প্রতিদিন এক কথা। কেন যে  বোঝেনা ?এককথা প্রতিদিন ভালো লাগেনা।অফিসের জরুরী  ফোনে টাতে  কথা হচ্ছে। এর মাঝে কল ওয়েটিং।
ওয়েটিং  এই থাকুক। এখন ফোন  টা ধরা মানেই একঘন্টার গল্প।
আজ শরীরটাও তেমন ভালো নেই। কেমন যেনো জ্বর জ্বর। রাতে একটা অনুষ্ঠান আছে।শরীরটা ভালো থাকলেই হয়।জ্বর এলে বিরাট ঝামেলায় পড়তে হবে। অনেক কাজ বাকী।

যা ভাবা হয়েছে তাই হলো।সন্ধ্যার দিকে হু হু কোরে  এলো জ্বর।কোনোরকমে ফোন টা টেনে নেয় রুদ্মিলা:"খুব কষ্ট হচ্ছে, পারলে চলে এসো। "
ঐ একবারই বললে হবে। হাজির হয়ে যাবেতো। কোনো চিন্তা নেই। যত দূরেই থাকুক ,যেখানেই থাকুক আসবে।রুদ্মিলা জানে।

রুদ্মিলা এমনই জানতো মা কে  খুব বেশি না ডাকলেও চলে আসে। মা দের পিঠে ডানা থাকে।ডানায় ভর করে চলে আসে । মা দের দশটা হাত ও থাকে। সব কাজ করে দিতে পারে এক নিমেষে।হাজার টা  বকা দিলেও আবার ফোন করে।একটু অভিমান করে।ওটা পাত্তা না দিলেও হয়।অসুবিধা হয়না।মনে রাখেনা কিছু। বিরাট একটা আদর আদর বুক আছেতো। ওখানে আবার টেনে নেয়।চাই কি না চাই কিছুতে কিছু এসে  যায়না।
কি অদ্ভুত ভাবনা ছিলো রুদ্মিলার।সে জানতো মায়েরা পুতুল হয়। কখনো রাগ করে কোথাও চলে যায়না।আর বাচ্চার অসুখ করলেতো  পুতুল মা দের কোত্থাও যেতে নেই। বারণ আছে।

রুদ্মিলা কেবল জানতোনা পুতুলেরও অসুখ করে। পুতুল ও রাগ করে।সে জানতোনা পুতুলের মত ওই মুখ অনেক দিন না দেখেও ঘুমানো যায়।সে জানতোনা পুতুল টার  সাথে খেলা ধুলা  না করলেও দিনের পর দিন কাটানো যায়।
রুদ্মিলার বিশ্বাস ছিলো ,পুতুলটার অনেক অসুখ করলেও ,অনেক কষ্ট হলেও ওর অসুখে সে আসবেই মিষ্টি হেসে।আর ওই হাসিতেই অসুখ ওর একদম ভালো হয়ে যাবে।


রুদ্মিলা এখন শুধু ঘুড়ির পাতায় চিঠি লেখে। ............
পুতুল মা ,
আমি কথা দিচ্ছি একবার তুমি এসে দেখো। আমি আর কোনদিন তোমার কল ওয়েটিং এ রাখবোনা। 
একটা চুমুর জন্য তোমায় আর কোনোদিন বলতে হবেনা। 
একবারের জন্যেও জড়িয়ে ধরতে চাইতে হবেনা।
আমি তোমাকে আর কোনদিন একবিন্দু বকবনা।তোমার সব কথা শুনবো।শুধু একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতটা তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি।আমি সব ফোন কেটে দিয়ে শুধু তোমার কথা শুনবো।আর কোনদিন তোমার কল ওয়েটিং এ রাখবোনা।তুমি শুধু একবার এসে দেখ আমার কাছে।  

রুদ্মিলার চিঠি ৩







মা যখন ঘুমাতো কোনদিন তার ঘুম মুখের পানে চাইনি। কখনই না। বরং অনেক নাক ডাকতো বলে বিরক্তই থাকতাম সবসময়। পাশে ঘুমাতেই চাইতামনা। আর কিছুক্ষণ পর পর ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতাম। বলতাম : "তুমি এভাবে নাক ডাকলে  আমি কিভাবে ঘুমাবো ?"


খুব অবাক করা ব্যাপার হলো ঠিক একই সময়ে আমার ছেলেটা যখন ঘুমায় আমি কি ভীষণ আদর ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকি। ঘুমের ভিতর ও কি কি করে দেখি।দেখতে দেখতে কখনো রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যায়। আমার দেখা আর শেষ হয়না। ঘুমের ভিতর কি যে  তোলপাড় করে ও বিছানায় !এত্ত বড় বিছানা। আমার জায়গাই মেলেনা। আমার তবু ভালো লাগে। আমি একটুও বিরক্ত হইনা। কত শত রাত অসুস্থ হয়ে নানাভাবে কত বিরক্তই না করেছে ও।
আমি ওই ঘুমচোখে সব ভালোবাসা ,সব আদর ওকে দিয়েছি।আমি প্রাণপণে প্রার্থনা করেছি ওর কষ্টগুলো সব আমার হউক তবু ও ভালো থাকুক। ওর  দেয়া কোনো যন্ত্রণা আমার কাছে যন্ত্রনাই মনে হয়নি।একজন মা তার সন্তানের জন্যে কতো  ভালবাসা ধরে রাখেন ????

অথচ আমার মা এর একটু ব্যাথা কেনো কোনদিন নিতে চাইনি ?এই বিশেষ ঘটনাটা কি  সব মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে ?না শুধু আমার ক্ষেত্রেই ঘটেছে ?আমিকি আর দশজনের চেয়ে আলাদা ?নাকি আমি আর দশজনের মত ?
সম্পর্কের এই সমীকরণ গুলো আমাকে বড্ড ভাবায়।

আসলে আমি একটা অদ্ভুত ভাবনা থেকে এই লেখাটা শুরু করেছিলাম।প্রতিদিন কাজে যাবার সময় যে রাস্তাটা পেরিয়ে আমি যাই তার পাশে একটা দোকান আছে। "খাটিয়ার দোকান"। অন্তিম শয্যায়  চলে গেলে যে বিছানায় সব মানুষ কে শোয়ানো হয়। সেই  বিছানার দোকান। মা বেঁচে থাকাকালীন আমি কোনদিন ওই দোকানটা দেখিনি। মানে চোখে পড়েনি। এটাও একটা আশ্চর্যের ব্যাপার।

আমার অসম্ভব রূপবতী ঘুমচোখ মা টাকে  খাটিয়ায় শোয়ালে কেমন দেখতে লাগে তা আমার জানা  নেই। আমি জানি শুধু সাদা কাপড়ে আমার মা আজীবন অপরূপা।তাই এটুকু বলতে পারি পুরোপুরি  সাদা কাফনে মা কে অপরূপাই লেগেছে নিশ্চয়ই । কেবল ঘুমিয়ে গেলে ওই মুখটাতে কি চুমু খেতে প্রাণ চায় নাকি এটা  খুব জানতে ইচ্ছে করে। নিজেকে অনেক প্রশ্ন করি শেষ ঘুম ঘুমিয়ে গেলে সব চাওয়ার সংযোজন কি একসাথে ঘটতে শুরু করে?
 

তোমাদের যাদের মা আছে তোমরা সবাই একটু দেখোতো ,,,তোমাদের মা কে ঘুমচোখে কেমন দেখতে ????আমি  কখনো দেখে রাখিনিতো তাই বললাম। এখন যে আর কোনদিন দেখতে পাবোনা ঘুমিয়ে গেলে আমার মা কে কেমন দেখতে লাগে ????

শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৪

ভালো আছি

একটা যন্ত্রের জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় আছি
কখন আসবে চিঠি
কখন বলবে,আমি আছি।

চিঠির ভিতর সংসার
দেখেছে কখনো কেউ ?
চিঠিই আমায় দোলায়
ওই চিঠির ভিতর ঢেউ।

যন্ত্র থেকে একটা শব্দের অপেক্ষায় আছি
যদিও এখন রাত
আমার জন্যে প্রভাত।

কত যে নাম তোমার
কত রঙিন তোমার বরণ
আমার কাছে তুমি
শুধু বেঁচে থাকার কারণ।

আমি কেবল একটা আলোর অপেক্ষায় আছি
কখন জ্বলবে আলো
কখন বলবে ভালো আছি।



 

The founder of Bangladesh

সবার ডাকে যুদ্ধ হয়না।
সবার ডাকে মানুষ একত্রিত হয়না।
কিছু কিছু মানুষের ডাকে অনেক কিছু হয়।
সেই ক্ষণজন্মা মানুষ গুলো সব সময় জন্মায়না।
এ পৃথিবী একবার পায় তারে বারে বারে পায়না।

বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ২

সব কটা দরজা বন্ধ করা হয়েছে। ভালোভাবে কয়েক বার দেখে নেয়া হয়েছে।এবারে রুদ্মিলার প্রস্তুতি খুব ভালো।এর মাঝে সে বেশ কয়েকবার কেঁদেছে। কাওকে বুঝতে দেয়নি।রুদ্মিলার এই একটা সমস্যা। সে জানে তার হাসি সুন্দর। সে ওই মুখ টাই সবাইকে দেখাবে।অবশ্য কষ্ট প্রকাশ করে লাভ কি ?কিছু সমবেদনা ছাড়া আর কিই বা পাওয়া যায়?রুদ্মিলা এই ধারনায় বিশ্বাসী।
যাই হউক ,আজ সবার প্রস্তুতি ভালো।বাড়িতে লোকজন ভরতি।এতো লোকের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যাওয়া ?অসম্ভব। রুদ্মিলার তাই বিশ্বাস।ও আজ শাড়ি  পড়েছে। ও জানে শাড়ি পড়লেই ওকে কোনো উপন্যাসের নায়িকার মতন লাগে।সমস্যা হলো রুদ্মিলা ঠিকঠাক শাড়ি পড়তে এখনো জানেনা।ওই ভদ্রমহিলার শাড়ি পড়ার স্টাইল এর প্রতি ওর খুব আকর্ষণ। মহিলা এতো সুন্দরী কেনো ? সবকিছু এতো গোছানো। গায়ে কেমন অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ। এই গন্ধ রুদ্মিলা কোনো ফুলের মাঝেও পায়নি। এমনকি ওর পাশে শুয়ে থাকা ছোট শিশুটির গায়েও ওই গন্ধ টা নেই।আর মহিলাটার হাত গুলো কেমন যেনো শীতল। অদ্ভুত ঠান্ডা। ভীষণ গরম পড়লে রুদ্মিলার মনে হয় ওই হাত ধরলে সারা শরীর শীতল হয়ে যায়। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো রুদ্মিলার মনের সাথে ওই মহিলার শরীরের উত্তাপ ওঠানামা করে। খুব শীত করলে পরে ওই হাত গুলো আবার উষ্ণ অনুভব দেয়। রুদ্মিলার মাঝে মাঝে মনে হয় ভদ্রমহিলা মানুষ নয়।জাদুকর টাইপের। কারণ ওর হাসিতেও যেনো কি আছে।যখন খুব বেশি অস্থির লাগে সে ওই মহিলার মুখ কল্পনা করে নেয়। ওই হাসির ভেতর গল্প আছে।খুব কষ্ট হলে রুদ্মিলা তাকে ভেবে একটু কেঁদেও নেয়।
রুদ্মিলার শ্বশুর বাড়ি অনেক দূরে।আজ আসবেন উনি রুদ্মিলার শ্বশুর বাড়িতে।এখান থেকে ঝগড়া ঝাটি করেও চলে যাওয়া সম্ভব না। একারণে এখানেই তাঁকে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রুদ্মিলা চারপাশ বন্ধ করেছে। সবাইকে তটস্থ রেখেছে। বলে দিয়েছে আজকের ঘুমে রুদ্মিলাকে যেন জাগানো না হয় কোনভাবেই।আজ সে পুরো স্বপ্ন টা দেখবে।
রুদ্মিলার স্বপ্নের শুরু।
ভদ্রমহিলা এসেছেন।অদ্ভুত মিষ্টি  গন্ধ ছড়িয়ে।এসেই তাঁর সেই হাসি হাসলেন।রুদ্মিলা পণ করেছে কিছুতেই মুগ্ধ হবেনা আজকে। তিনি শান্ত অথচ গভীর করে একটা নিশ্বাস ফেললেন। বললেন :"রুদ্মি ,জানলা গুলো খুলে দে। দম বন্ধ হয়ে আসছে।"রুদ্মিলা শক্ত হয়ে আছে।আজ সে জানালা খুলবেনা। কিছুতেই না।হঠাত পাশে শুয়ে থাকা শিশুটি একটু কেঁদে উঠলো। রুদ্মিলা কেবল পলক সরালো মাত্র।
একটা দমকা হাওয়া। চলে গেছেন। তিনি চলে গেছেন।রুদ্মিলা আজও নিজকে ক্ষমা করতে পারেনা। কেনো সে পলক ফেরালো ?রুদ্মিলা স্বপ্ন টাকে অনেক চেষ্টা করেছে পাল্টাতে। কিন্তু প্রতিবারই ঠিক এখানে এখানটাতেই কেন সবকিছু ভেঙ্গে যায় ?এতগুলো মানুষ আজ বাড়িতে তবু ওই অদ্ভুত মিষ্টি সুবাসে ভরা মা টা কেমন ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো।
রুদ্মিলা স্বপ্নের হাতে বন্দী বারেবার। রুদ্মিলা শত আয়োজন করেও স্বপ্ন কে নিজের মতন করে দেখতে পারেনা। কোনদিন পারেনা।অদ্ভুত সুন্দর মা' টা অদ্ভুত করে চলে যায়।

সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

পাতার ঘড়ি



অবস্থা বেশ খারাপ করেছিস তো ,
চোখেতো দেখছিস না কিছুই।
ডাক্তার দেখাবিনা ?
এমনি করে ভুগবি ?
আর কষ্ট দিবি আমাকে ?
কটা বাজে বলতো ?
অনেকটা রাত হয়ে গেলো।
তোকেতো বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে।
এমন করে ছাড়া যায় নাকি একা ?

তোর হড়বড় কথা বলার অভ্যেস টা আজো রয়ে গেছে।
যেদিন প্রথম একটু ঝাপসা দেখেছিলাম
সেই কোন কৈশোরে,
তুই নারকেল পাতার কেমন
একখানা চশমা গড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলি :'অবন্তি ,এটা পড় । তোর চোখ একদম ঠিক হয়ে যাবে।"
তারপর আর জানিনা।
জানিনা কোথায় হারালো অপরূপ কৈশোর আমার
কোথায় তুই
জানিনা কিছুই ,
শুধু জানি ওই পাতা দিয়ে একটা ঘড়িও হয়েছিলো।
সেই থেকে সময় আমার ওখানেই থমকে গেছে।

বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০১৪

রোদ্দুর

 এসি চলছিলো। এতো ঠান্ডা হয়ে গেলো একসময় একটু শীত শীত করছিলো। বিছানায় শুয়েছিলাম। রোদ্দুর পাশে বসে টি ভি দেখছিলো।ওকে বললাম :"বাবা ,শীত করছে ,এ সি টা বন্ধ কর নয়তো একটা চাদর দাও। "রোদ্দুর আমার গায়ের ওপর লাফ দিয়ে শুয়ে পড়ে বললো :"এইত চাদর হয়ে গেলাম আমি। এখন কি আর শীত করে মা ?"







বাসার ল্যান্ড লাইন বৃষ্টি হলেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই অদ্রী কে একটা সেল দেয়া হয়েছে। আমার অনুপস্থিতিতে খবর রাখার জন্যে। আমার মেয়ে আবার আমি খবর পড়তে গেলে ওই সেল থেকে আমাকে এস এম এস পাঠায় :মাম্মি ,আজকে তোমাকে দারুন লাগছে ,ইত্যাদি ইত্যাদি।এই দেখে রোদ্দুর খুব ঈর্ষান্বিত। সে রেগে মেগে আমাকে টেক্সট করবেনা। বাবাকে করবে। আমি  তবু ওকে শিখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে লিখতে হয়। বললাম :"বাবাকে I LOVE U লেখ। "কিছুতেই লিখছেনা। আবার বলছে ও না কেন লিখছেনা। অনেক জানতে চাওয়ার পর আমার ছেলের উত্তর :"I LOVE U তো শুধু তোমার জন্যে মা।"

রোদ্দুর পড়ে কে জি তে।আমার মেয়ের ছোটবেলার প্রথম শ্রেনীর বাংলা পাঠ্য বই কোত্থেকে যেন খুঁজে পেয়েছে।ওখানে বায়েজিদ বোস্তামী কে নিয়ে একটা অসাধারণ গল্প আছে। সাথে আঁকা ছবিও। বায়েজিদের ছোটবেলা। তিনি একগ্লাস পানি হাতে মায়ের মাথার শিয়রে দাঁড়িয়ে আছেন।
রোদ্দুর বলল :এই ছবির গল্পটা বল ".
গল্প টা সবাই জানে। বায়েজিদের মা অসুস্থ। তিনি পানি খেতে চাইলেন। বায়েজিদ অনেক দূরে ঝর্না থেকে পানি নিয়ে এসে দেখেন মা ঘুম। তিনি সারারাত ওই পানি নিয়ে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলেন। সকালে মা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যাবে বলে মা কে আর ডাকেনি। বায়েজিদের মা অভিভূত হয়ে তাঁকে অনেক দোয়া করলেন।

পুরো গল্প বলার ভেতর আমার ছেলে একটা প্রশ্ন ও করেনি। খুব মন দিয়ে শুনলো।
সব শুনে রোদ্দুর  যে মতামত দিলো তা হলো :"মা ,বায়েজিদ তো মাকে ভালোই বাসেনা ।"
অবাক হয়ে জানতে চাইলাম :"কেনো বাবা?ও সারারাত ঘুমায়নি। মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যাবে বলে মা কে ঘুম থেকে ডাকেনি। কতো লক্ষী ছেলে দেখ। "
রোদ্দুরের উত্তর :"মা,ওতো বুদ্ধু। সারারাত পানিটা নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে পানিটা সিদ্ধ করে নিলেই হতো। ও ওর  মা কে কাঁচা পানি খাওয়ালো মা ?তুমিতো বলেছো BAD BOY রা কাঁচা পানি খায়। ওতো BAD BOY."



বিশ্বকবির গালে হাত  চিন্তিত মুখর ছবি দেখিয়ে  বললাম :"বাবা,উনি আমাদের বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।"
 রোদ্দুর বললো :মা,উনার দেখো মন খারাপ। একটা কবিতা লেখার পর আর লিখতে পারছেনা। তাই মিস বকা দেবে তাই উনি গালে হাত দিয়ে ভাবছেন।"



রোদ্দুর আর আমি প্রায়ই দোকান দোকান খেলি।আজকে ওর দোকানে আমি জিনিসপত্র কিনতে আসছি। ওখানে আবার সবকিছু পাওয়া যায়।এবং অনেক সুবিধা আছে। একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি।
১)মোবাইল কিনলে হ্যান্ডস ফ্রি ফ্রি।
২)ড্রেসিং টেবিল কিনলে আয়না ফ্রি।
৩)টর্চ লাইট এর সাথে অন্ধকার ফ্রি।
৪)পর্দার সাথে জানালা ফ্রি।
৫)পাঞ্চ ক্লিপ এর সাথে চুল ফ্রি।
৬)বিছানার চাদরের সাথে খাট ফ্রি।
এতো ফ্রি জিনিসের ভিতর জানতে চাইলাম :"বাবা ,রোদ্দুর কে কিনলে কি পাওয়া যাবে ফ্রি ?"
ঝটপট উত্তর :"চশমা ফ্রি। "




আমাদের বাড়ীতে ৩ টে বাচ্চা। আমার ছেলে ,মেয়ে এবং তাদের বাবা। প্রত্যেকেই অদ্ভুত।যেন আমার কোনো অসুখ করতে নেই। ওরা আমার অসুখ করলেই আমার চেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে।কিছুদিন হলো ভাইরাল জ্বর এ পড়লাম। তেমন কিছুনা।সামান্য। চেষ্টা ছিলো রোদ্দুর কে একটু সামলে রাখার ওই ছোঁয়াচে জ্বরের থেকে।কারণ রোদ্দুর সারাদিন রাতে আমায়  প্রায় ৫০০ টা চুমু খায়।বাড়ীর অসহায় ৩ টে মানুষ বেজার মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখতেও খারাপ লাগছে। এমনি করেই রাত হলো। অনেক রাত। আমার ঘুম আসছেনা। চোখ খুললেই দেখছি রোদ্দুর চোখ পিটপিট করছে। রাত ৩ টের দিকে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম :'বাবা ,ভয় পাচ্ছো ?'ওই রাতে আবার  ভূতের সিনেমাও দেখেছি। নাম গয়নার বাক্স।
আমার ছেলের উত্তর :না ,মা ভয় পাচ্ছিনা তো।
তাহলে ঘুমোচ্ছো না কেনো বাবা ?মন খারাপ তোমার ?
ছেলে বললো :হুম মা।
কেনো ?
মা ,তুমি কখন সুস্থ হবে ?আমি কখন তোমার বুকে আসতে পারবো ?
এইতো বাবা ,আর মাত্র একদিন।
ছেলেটা তারপর বলে :"তুমি ভালো না থাকলে আমি কেমন করে ভালো থাকি মা ?"


 ছুটির দিনে রোদ্দুর :বাবা বাসায় থাকাটা কিন্তু DISGUSTING মা।
:কেনোরে বাবা ?
:এই যে সারাক্ষণ তোমার সাথে গল্প করে। আর আমি তোমাকে মিস করি।


সবুজ দেখতে গিয়ে রোদ্দুরের প্রশ্ন :মা ,ড্রয়িং খাতার সবুজ ঘাস আর গাছ গুলো নাহয় আমরা দুজন মিলে আঁকি ,কিন্তু এখানের গাছ আর ঘাস কে এঁকেছে ?ওর রংতুলির বাক্স কোথায় ? আমি ওকে জিজ্ঞেস করবো ও এতো সুন্দর করে কি করে রং করে ?একটুও বর্ডার লাইন ক্রস করেনাতো ?



 আমরা খুব ভালো একটা ছুটি কাটিয়েছিলাম আমার দাদার বাড়ীতে। আদরের এতোটাই আতিশয্য ছিলো যে এই যান্ত্রিক শহরে ফিরে আসার পর আমার ছেলে বা মেয়ে কোনভাবেই নিজেদের আর মানিয়ে নিতে পারছিলোনা। আজ নিয়ে বেশ কিছুদিন হলো আমরা ফিরেছি।ফেরার পর থেকে প্রায় প্রতিরাতে রোদ্দুর কাঁদে। ভয়ানক মিস করতে থাকে সবাইকে।আমার দাদা বাড়ী মানেই ওদের নানা বাড়ী। এবং অপরিসীম আনন্দ। কিন্তু যা বলতে নিয়ে এতো কিছু লেখার আয়োজন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন।আমার ছেলেটা প্রতিরাতে এভাবে কাঁদতে শুরু করে সেই ফেলে আশা আদর গুলোর জন্য,আর আমি কোনভাবেই ওকে কাঁদতে দিইনা।একটা কিছু মজার গল্প বলে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু ভুল টা আমার সেখানেই হলো। কালরাতে আমার ছেলে একটা অদ্ভুত কথা বললো :"মা ,কান্না খুব বেশি পেলে কাঁদতে দিও। নয়তো কান্না গুলো জমতে থাকে আর শেষ হয়না। প্রতিদিন কান্না আসে।একসাথে সব কান্না কেঁদে ফেললে আর কখনো কান্না আসবেনা মা। "
কি অদ্ভুত !!!!!!!!


 হরতালের কারণে রোদ্দুরের স্কুল হয় এখন শুক্র আর শনিবারে।গতরাতে  একটা দাওয়াতে যাবার কারণে রাতের বেলা কিছু গুছিয়ে রাখা হয়নি। গোছাতে নিয়ে আজকে স্কুল যেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে তাই ওকে বললাম ,বাবা ,এইজন্যেই মা সবকিছু রাতেই গুছিয়ে রাখি। তাহলে সকালে আর হুলুস্থুল হয়না। ছেলে আমাকে উত্তর দেয় :মা ,তাহলে কি দাঁত ব্রাশ টাও রাতে একবার করে রাখলেই হবে ?"



মানুষতো মাটি দিয়ে তৈরী তাইনা মা ?
হ্যা বাবা।
মানুষ যখন মরে যায় তখন তো তাকে কবর দেয়া হয় মাটিতে। তাহলে মানুষ কবরে গিয়ে আবার মাটি হয়ে যায়। তাইনা মা ?
হ্যা বাবা।
তাহলেতো মা ,আম্মা আর কোনোদিন তোমার কাছে ফিরে আসতে পারবেনা মা ,এতদিনে আম্মা তো তাহলে মাটি হয়ে গেছে। তুমি তাহলে কেনো আম্মার জন্যে অপেক্ষা কর মা ?
আচ্ছা বাবা ,আমি মরে গেলে তুই কি করবি ?কবরে দিয়ে আর অপেক্ষা করবিনা তাইনা ?
একটু হেসে রোদ্দুর :মা ,তুমি মরে গেলে আমিওতো মরেই যাব মা।


মানুষদের  তো বিয়ে করতেই হয় তাইনা মা ?
হুম।
আর বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েদের তো শশুরবাড়ি তে থাকতেই হয় তাইনা মা ?
হুম।কেনো ?কি সমস্যা ?
তোমাকে নিয়ে খুব টেনশন হচ্ছে ।বিয়ে হয়ে গেলে তুমি কোথায় থাকবে মা ?

হেলিকপ্টার

খায়রুল সাহেব পায়চারী করছেন।এই রুম থেকে ওই রুম এর মাঝে কম করে ২৪ বার হয়ে গেছে।রাবেয়া খুবই বিরক্ত। এই এক সমস্যা। খায়রুল সাহেব কে কোনো দায়িত্ব দেয়া পাপের পর্যায়ে পড়ে।

সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০১৪

সমুদ্রের ভালবাসা




waves sky beach

তোমায় আমি সমুদ্রের ভালবাসা দিতে চেয়েছিলাম।
তুমি খুঁজে নিলে এক ফোঁটা বৃষ্টি।
এখন কেঁদে কি লাভ বল ?

সবুজ সবুজ সুন্দরবন দেবো ভেবেছি।
নিলে কাঁটা ভরা একটা মোটে ক্যাকটাস।
এখন ব্যাথা পেয়ে কি লাভ বল ?

চেয়েছি দিতে অনেক কষ্টে শেখানো কথা বলা ময়না।
সারাবেলা বলবে "ভালবাসি".
তুমি চেয়ে নিলে ছটফটে ,চঞ্চল মুনিয়া।
পোষ না মানলে আমার কি করা ?

আমি তোমায় শান্ত দীঘি দেবো ভেবেছিলাম।
তুমি হরিণী ঝরনা চেয়ে নিলে।
ঝরনার জলতো দূর দুরান্তরে হারাবেই।

আমি তোমায় মাতাল করা ,দীর্ঘায়ু বকুলের মালা দিতে চেয়েছিলাম।
তুমি কামিনীর পাগল সুবাস নিয়েছো।
রাত ফুরোলে সেতো গন্ধ হারাবেই।

তারায় ভরা আকাশ ছেড়ে পূর্নিমার বায়না ধরেছো।
সব রাতের চাঁদে কি আর অমন ভালো জোস্না পাবে ?
তুমি নিজেই যদি হারাও সবই
আমার কি আর করার তবে?

শনিবার, ২ আগস্ট, ২০১৪

স্বপ্নের কোনো রং নেই






এক জন্মান্ধের সাথে পুরোটা জীবন,
ভালই ছিলাম তো
সে দেখেনি আমার  অপরূপ রূপের বাহার
বোঝেনি কি করে ছেনে নিতে হয় ওই রূপ
বোঝেনি,
বোঝেনি কখনো আমায়।
বোঝেনি পূর্নিমা রাতে ভালবাসি শব্দের ব্যবহার
বোঝেনি বর্ষা
বোঝেনি ফাগুন।
বোঝেনি কখন
লেগেছে আগুন।

শত পূর্নিমা বড় অযত্নে হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেছে বৃষ্টি আমার কুচকুচে কালো বর্ষাতির আলিঙ্গনে
হারিয়ে গেছে
হারিয়ে গেছে সব
বড় বেশি অবহেলায়,অযত্নে।

সম্বলে এখন কেবল দুটো রং
সাদা আর কালো
কারণ 
আমি এখন কেবল স্বপ্নের ভিতর থাকি
স্বপ্নের যে আর কোনো রং নেই।