বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ২

সব কটা দরজা বন্ধ করা হয়েছে। ভালোভাবে কয়েক বার দেখে নেয়া হয়েছে।এবারে রুদ্মিলার প্রস্তুতি খুব ভালো।এর মাঝে সে বেশ কয়েকবার কেঁদেছে। কাওকে বুঝতে দেয়নি।রুদ্মিলার এই একটা সমস্যা। সে জানে তার হাসি সুন্দর। সে ওই মুখ টাই সবাইকে দেখাবে।অবশ্য কষ্ট প্রকাশ করে লাভ কি ?কিছু সমবেদনা ছাড়া আর কিই বা পাওয়া যায়?রুদ্মিলা এই ধারনায় বিশ্বাসী।
যাই হউক ,আজ সবার প্রস্তুতি ভালো।বাড়িতে লোকজন ভরতি।এতো লোকের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যাওয়া ?অসম্ভব। রুদ্মিলার তাই বিশ্বাস।ও আজ শাড়ি  পড়েছে। ও জানে শাড়ি পড়লেই ওকে কোনো উপন্যাসের নায়িকার মতন লাগে।সমস্যা হলো রুদ্মিলা ঠিকঠাক শাড়ি পড়তে এখনো জানেনা।ওই ভদ্রমহিলার শাড়ি পড়ার স্টাইল এর প্রতি ওর খুব আকর্ষণ। মহিলা এতো সুন্দরী কেনো ? সবকিছু এতো গোছানো। গায়ে কেমন অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ। এই গন্ধ রুদ্মিলা কোনো ফুলের মাঝেও পায়নি। এমনকি ওর পাশে শুয়ে থাকা ছোট শিশুটির গায়েও ওই গন্ধ টা নেই।আর মহিলাটার হাত গুলো কেমন যেনো শীতল। অদ্ভুত ঠান্ডা। ভীষণ গরম পড়লে রুদ্মিলার মনে হয় ওই হাত ধরলে সারা শরীর শীতল হয়ে যায়। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো রুদ্মিলার মনের সাথে ওই মহিলার শরীরের উত্তাপ ওঠানামা করে। খুব শীত করলে পরে ওই হাত গুলো আবার উষ্ণ অনুভব দেয়। রুদ্মিলার মাঝে মাঝে মনে হয় ভদ্রমহিলা মানুষ নয়।জাদুকর টাইপের। কারণ ওর হাসিতেও যেনো কি আছে।যখন খুব বেশি অস্থির লাগে সে ওই মহিলার মুখ কল্পনা করে নেয়। ওই হাসির ভেতর গল্প আছে।খুব কষ্ট হলে রুদ্মিলা তাকে ভেবে একটু কেঁদেও নেয়।
রুদ্মিলার শ্বশুর বাড়ি অনেক দূরে।আজ আসবেন উনি রুদ্মিলার শ্বশুর বাড়িতে।এখান থেকে ঝগড়া ঝাটি করেও চলে যাওয়া সম্ভব না। একারণে এখানেই তাঁকে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রুদ্মিলা চারপাশ বন্ধ করেছে। সবাইকে তটস্থ রেখেছে। বলে দিয়েছে আজকের ঘুমে রুদ্মিলাকে যেন জাগানো না হয় কোনভাবেই।আজ সে পুরো স্বপ্ন টা দেখবে।
রুদ্মিলার স্বপ্নের শুরু।
ভদ্রমহিলা এসেছেন।অদ্ভুত মিষ্টি  গন্ধ ছড়িয়ে।এসেই তাঁর সেই হাসি হাসলেন।রুদ্মিলা পণ করেছে কিছুতেই মুগ্ধ হবেনা আজকে। তিনি শান্ত অথচ গভীর করে একটা নিশ্বাস ফেললেন। বললেন :"রুদ্মি ,জানলা গুলো খুলে দে। দম বন্ধ হয়ে আসছে।"রুদ্মিলা শক্ত হয়ে আছে।আজ সে জানালা খুলবেনা। কিছুতেই না।হঠাত পাশে শুয়ে থাকা শিশুটি একটু কেঁদে উঠলো। রুদ্মিলা কেবল পলক সরালো মাত্র।
একটা দমকা হাওয়া। চলে গেছেন। তিনি চলে গেছেন।রুদ্মিলা আজও নিজকে ক্ষমা করতে পারেনা। কেনো সে পলক ফেরালো ?রুদ্মিলা স্বপ্ন টাকে অনেক চেষ্টা করেছে পাল্টাতে। কিন্তু প্রতিবারই ঠিক এখানে এখানটাতেই কেন সবকিছু ভেঙ্গে যায় ?এতগুলো মানুষ আজ বাড়িতে তবু ওই অদ্ভুত মিষ্টি সুবাসে ভরা মা টা কেমন ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো।
রুদ্মিলা স্বপ্নের হাতে বন্দী বারেবার। রুদ্মিলা শত আয়োজন করেও স্বপ্ন কে নিজের মতন করে দেখতে পারেনা। কোনদিন পারেনা।অদ্ভুত সুন্দর মা' টা অদ্ভুত করে চলে যায়।

1 টি মন্তব্য: