মা যখন ঘুমাতো কোনদিন তার ঘুম মুখের পানে চাইনি। কখনই না। বরং অনেক নাক ডাকতো বলে বিরক্তই থাকতাম সবসময়। পাশে ঘুমাতেই চাইতামনা। আর কিছুক্ষণ পর পর ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতাম। বলতাম : "তুমি এভাবে নাক ডাকলে আমি কিভাবে ঘুমাবো ?"
খুব অবাক করা ব্যাপার হলো ঠিক একই সময়ে আমার ছেলেটা যখন ঘুমায় আমি কি ভীষণ আদর ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকি। ঘুমের ভিতর ও কি কি করে দেখি।দেখতে দেখতে কখনো রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যায়। আমার দেখা আর শেষ হয়না। ঘুমের ভিতর কি যে তোলপাড় করে ও বিছানায় !এত্ত বড় বিছানা। আমার জায়গাই মেলেনা। আমার তবু ভালো লাগে। আমি একটুও বিরক্ত হইনা। কত শত রাত অসুস্থ হয়ে নানাভাবে কত বিরক্তই না করেছে ও।
আমি ওই ঘুমচোখে সব ভালোবাসা ,সব আদর ওকে দিয়েছি।আমি প্রাণপণে প্রার্থনা করেছি ওর কষ্টগুলো সব আমার হউক তবু ও ভালো থাকুক। ওর দেয়া কোনো যন্ত্রণা আমার কাছে যন্ত্রনাই মনে হয়নি।একজন মা তার সন্তানের জন্যে কতো ভালবাসা ধরে রাখেন ????
অথচ আমার মা এর একটু ব্যাথা কেনো কোনদিন নিতে চাইনি ?এই বিশেষ ঘটনাটা কি সব মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে ?না শুধু আমার ক্ষেত্রেই ঘটেছে ?আমিকি আর দশজনের চেয়ে আলাদা ?নাকি আমি আর দশজনের মত ?
সম্পর্কের এই সমীকরণ গুলো আমাকে বড্ড ভাবায়।
আসলে আমি একটা অদ্ভুত ভাবনা থেকে এই লেখাটা শুরু করেছিলাম।প্রতিদিন কাজে যাবার সময় যে রাস্তাটা পেরিয়ে আমি যাই তার পাশে একটা দোকান আছে। "খাটিয়ার দোকান"। অন্তিম শয্যায় চলে গেলে যে বিছানায় সব মানুষ কে শোয়ানো হয়। সেই বিছানার দোকান। মা বেঁচে থাকাকালীন আমি কোনদিন ওই দোকানটা দেখিনি। মানে চোখে পড়েনি। এটাও একটা আশ্চর্যের ব্যাপার।
আমার অসম্ভব রূপবতী ঘুমচোখ মা টাকে খাটিয়ায় শোয়ালে কেমন দেখতে লাগে তা আমার জানা নেই। আমি জানি শুধু সাদা কাপড়ে আমার মা আজীবন অপরূপা।তাই এটুকু বলতে পারি পুরোপুরি সাদা কাফনে মা কে অপরূপাই লেগেছে নিশ্চয়ই । কেবল ঘুমিয়ে গেলে ওই মুখটাতে কি চুমু খেতে প্রাণ চায় নাকি এটা খুব জানতে ইচ্ছে করে। নিজেকে অনেক প্রশ্ন করি শেষ ঘুম ঘুমিয়ে গেলে সব চাওয়ার সংযোজন কি একসাথে ঘটতে শুরু করে?
তোমাদের যাদের মা আছে তোমরা সবাই একটু দেখোতো ,,,তোমাদের মা কে ঘুমচোখে কেমন দেখতে ????আমি কখনো দেখে রাখিনিতো তাই বললাম। এখন যে আর কোনদিন দেখতে পাবোনা ঘুমিয়ে গেলে আমার মা কে কেমন দেখতে লাগে ????
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন