স্বয়ম্বর সভা চলছিলো। অপরুপা দ্রৌপদীর হৃদয় লাভের আশায়।পুষ্পমাল্য হাতে সিংহাসনে দ্রৌপদী। আকুল অপেক্ষমান দৃষ্টি।কেনোনা রিক্ত হাতে ফিরে চলেছেন একেক রাজার কুমার। অদ্ভুত কঠিন এক খেলায় জয়লাভ করতে হবে যে।
অত বিশাল রাজপ্রাসাদের ঠিক মাঝখানটাতে বসানো হয়েছে এক জলাধার।আর প্রাসাদের ছাদে ক্রমাগত ঘুরছে এক মত্স্য।তার ছায়া পড়েছে ওই জলাধারে।ওই মত্স্যর ছায়া চক্ষু বিদ্ধ করতে হবে জলের দিকে তাকিয়ে। কি অসম্ভব এক খেলা। অসম্ভব হতেই হবে যে।দ্রৌপদী প্রাপ্তি বলে কথা।
ব্যার্থ মনোরথে ফিরে চলেছেন অদম্য ,শ্রেষ্ঠ একেক বীর।দুঃশ্চিন্তায় মগ্ন অসহ্য সুন্দরী।মনে প্রশ্ন ,কেনো এত কঠিন খেলা?চিরকুমারী হয়েই রয়ে যেতে হবেকি তবে ?কে সেই বীর ,ওই ঘুর্নীয়মান মত্স্য চক্ষু সুনিপুণ বিদ্ধ কোরে দ্রৌপদীর মাল্যদানে ভাগ্যবান হবেন ?
ধীরে ধীরে এলো সেই চির ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ। ক্ষিণ পায়ে, বিশাল বক্ষ ,আত্মবিশ্বাসী ,সূক্ষ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী ,সুঠাম যুবক অর্জুন এগিয়ে এলেন।
বিস্তৃত রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের এক প্রান্তে দুরুদুরু বুকে অপূর্বা দ্রৌপদী।অপর প্রান্তে লক্ষ লক্ষ উত্সুক চোখ।অর্জুন এগিয়ে চলেছেন।চোখে স্বপ্ন আর মনে, গুরু দ্রোণাচার্যের শেষ কটা উপদেশ :"অর্জুন ,তুমি ওই মুহুর্তে ওই মত্স্য চক্ষু ছাড়া পৃথিবীর আর সমস্ত কিছুর জন্যে অন্ধ হয়ে যাও। তুমি ভেবে নাও তোমার সমুখে জলের ছায়ায় কেবলমাত্র ওই ঘুর্নীয়মান মত্স্যের ছায়া চক্ষু ছাড়া আর কিছু নেই। বাকি সব অন্ধকার। "
বীর তাঁর প্রশিক্ষকের প্রতিটি অক্ষর অন্তরে ধারণ করে এগিয়ে গেলেন।বীরের চোখে আর কিছুই নেই। আত্মবিশ্বাস,ভালবাসা আর লক্ষ্য।
অর্জুন লক্ষ্যস্থির করলেন। মাথার ওপরে ঘুরতে থাকা মত্সের ছায়া পড়েছে জলে। জলের ছায়ায় ঘুরতে থাকা ওই ছায়া চক্ষুর দিকে তাকিয়ে তীর ছুঁড়তে হবে প্রাসাদের ছাদে ।কি অসম্ভব। কি ভয়ঙ্কর খেলা। পিনপতন নীরবতায় স্তব্ধ চারপাশ।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে দ্রৌপদীর।পারবেনতো এই বীর ?হবেকি মাল্যদান ?
অবশেষে সকল বীর আর উত্সুক জনতার আকুল অপেক্ষমান চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে লক্ষ্যভেদ করলেন অর্জুন। বীর অর্জুন।
গোটা পৃথিবী জানলো ,ইতিহাস জানলো ,যখন তুমি যে কাজটি করবে কেবলমাত্র তাকেই ভালোবাসবে। তুমি পারবে। এই পৃথিবীতে সকলেই বীর। অভাব কেবল ভালবাসার।