শীতলক্ষ্যা ,আর কতো লাশ পেলে তোমার স্রোতধারা তৃপ্ত হবে ?এ প্রশ্ন এখন সকলের অন্তরে। পুরো শীতলক্ষ্যার একধার লোকে লোকারণ্য।কত পেশার মানুষ যে ওখানে ওই মুহুর্তে উপস্থিত।
ঠান্ডা মাথায় ,সাংবাদিকদের নানান প্রশ্ন আর জনরোষের সমুখে কাজ করে চলেছেন পুলিশ।
সাংবাদিক রা অস্থির করে তুলছেন চারপাশ। প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তুলছেন, কার আগে কে বের করে নিয়ে আসতে পারবেন সর্বশ্রেষ্ঠ ,নির্ভরযোগ্য উত্তর। কারণ তাঁকে এগিয়ে থাকতে হবে অন্য চ্যানেল গুলোর চেয়ে একটু বেশি।আমরাতো তাঁদের দিকেই পলকহীন তাকিয়ে থাকি।
ফটোগ্রাফার সমানে ছবি তুলছেন। দুর্দান্ত একটা ছবি হয়তো তাঁকে অ্যাওয়ার্ড জিতিয়ে দিতে পারে।ওই ছবিই একসময় পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে ইতিহাস হয়ে উঠবে।
উত্সুক জনতার ভিড়ে মিশে আছেন পকেটমার। ওই ভীষণ দুর্যোগে তিনিও তাঁর কাজটি সেরে নিচ্ছেন।
আছেন মৃতদের স্বজনেরা। যাঁদের বুকে ওই মুহুর্তে বোবা যন্ত্রণা। এসেছেন বিকৃত হয়ে ওঠা লাশ সনাক্ত করতে। হয়তো এই কাজ সেরেই কোনো না কোনো কাজে ছুটে যেতে হবে।
সংবাদ পাঠক অত্যন্ত স্থিরভাবে ,কখনো কষ্টমাখা মুখে ,কখনো হাসিমুখে পরিবেশন করে চলেছেন সংবাদ। সকলের উত্সুক দৃষ্টি তাঁর দিকে। এই ভয়াবহ দুঃসময়েও তিনি কিন্তু মেক আপ ছাড়া সংবাদ পরিবেশন করতে বসেননি।নিজেকে সাজিয়েছেন এবং সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে চলেছেন।কারণ তাঁকে কেবল এই দুঃসংবাদ নয় ,আরো অনেক মজাদার সংবাদ ও একই সময়ে পরিবেশন করতে হবে।
এই একটা সময়ের কেবল বর্ণনা দিলাম। কত পেশার মানুষ একসাথে।
এখন যাঁর কথা লিখবো তাঁর ও একটা পেশা আছে।
তিনি একজন খুনী।তাঁর কাছে সর্বশেষ প্রশ্ন ছিলো :"আপনার সন্তান কে যদি এমন নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় আপনার কষ্ট হবেনা ?"
তিনি মুহুর্তেই উত্তর দিলেন :"নিশ্চয়ই হবে। "
:"তাহলে এই কাজটি কেনো করছেন ? "
তাঁর স্বতস্ফুর্ত উত্তর : "এটা আমার পেশা "
পেশার ভিন্নতা নিয়ে একেকজন শ্রমিক একেক কাজ করছেন।শ্রম দিবসের এই দিনে কেবলই মনে হচ্ছে মেধা আর শ্রম মিলিয়ে যাঁরা কাজ করে যান তাঁরা আর দশজন সাধারণ শ্রমিকের মতন নন।
খুনি একরকম শ্রমিক। খুন তাঁর একরকম পেশা। কিন্তু যিনি খুনের নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি কিন্তু শিক্ষিত,ভীষনভাবে সময়ের সাথে প্রচলিত একজন মানুষ।তিনি নিশ্চয়ই আমাদের কষ্টকর সংবাদ সংগ্রহ এবং পরিবেশনা অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় উপভোগ করছেন।কারণ তিনিতো জানতেন লাশ গুলো কোথায় ছিলো। আমরা কেবল পন্ডশ্রম করলাম এতগুলো দিন।
এই পুরো শীতলক্ষ্যার পারে যত রকমের শ্রমজীবি মানুষ আছেন তাঁদের মাঝে ওই সময়ের সাথে প্রচলিত লোকটাও একটা মানুষ।সবাই কিন্তু মানুষ। হায়রে মানুষ। হাত আছে ,পা আছে। সবই আছে। কিন্তু সবাই কি মানুষ ?
মানুষ নিয়ে লেখা এত কষ্টের হবে কে জানতো ?মানুষ নিয়ে লিখতে গিয়ে নিজের অমানুষত্ত বেরিয়ে পড়বে কে জানতো?আমিওতো এখনো মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি। কারণ মানুষের ব্যাথা যে আমাকে এখনো কাঁদতে শেখায়নি। আমি সমব্যেথি হতে পারছিনা কেনো ?আমার শিক্ষা যুক্ত শ্রম কেনো কেবলই কায়িক শ্রমের সাথে একাকার হয়ে যাচ্ছে?
বড় বেশি মনে হচ্ছে কোনো এক দুঃসময়ে বুঝি মনুষ্য জন্ম পেয়েছিলাম। এই জন্ম আমায় ধন্য করেনি।ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করেছে।