বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪

স্বপ্ন আমার





আমি একটা দিন সারাদিন তোর্ কাছে চাই
দিবি ?
ঐদিন টা তুই কেবলই আমারই নাম নিবি ,
নিবি ?
আমার চোখে ঐদিনে তোর্ সকাল হবে ,
হবে ?
ভর দুপুরে স্নানের শেষে চুলের পরশ ছুঁইয়ে যাবি,
যাবি ?
বৃষ্টি ছোঁয়া দারুন বিকেল ,দুজন মিলে এক কাপে চা
চলবে ?
অসময়ের বৃষ্টি যদি শীতের কথা চুপে বলে যায়
শুনবি ?
রাত্রি আমায় নাই বা দিলি
হেমন্তেরই রং ঝরানো সন্ধ্যা নামুক
নামুক ?
শীতের রাতের উষ্ণ আদর নাইবা পেলাম
নাইবা হলো কাশের বনে পাগলা হাওয়ায় লুটোপুটি
একটা শুধু দিন কি আমায় দিতে পারিস আপন করে ?
কেও রবেনা সেদিন শুধু আমি রব তোর্ মাঝারে
যতন করে আদর ভরে আমিই রব তোর্ মাঝারে ?




রুদ্মিলার চিঠি ১১








তোমার ছবি আগে খুব দেখতাম। ইদানিং দেখিনা। মানুষ বোধ হয় কোনো না কোনো একটা সময় কষ্টের থেকে মুক্তি খোঁজে। তোমার ছবি দেখার সাথে অনেক কিছু যুক্ত। মন খারাপ হওয়া ,সাহস হারানো ,আরেকটা মুখ তোমার মত খুঁজে বার করার ব্যর্থ চেষ্টা ,তোমার রান্নার মন ভোলানো গন্ধ আরো কত কি।তোমায় নিয়ে টেনে টেনে দুঃখ বার করে আনাটা অনেকের কাছেই এখন দুঃখ বিলাস। আচ্ছা বলতো ?ওদের কি করে বোঝাই অথবা কেনই বা বোঝাই যে যতক্ষণ না হারায় ততক্ষণ কেও হারানোর কষ্ট বোঝেনা। ওরা বলে জীবন আবার থেমে যায় নাকি কারোর জন্যে ?ওদের কি করে বোঝাই তারিখের পর তারিখ পাল্টানো মানেই জীবনের বয়ে চলা নয়।জীবন থামেনা। কিন্তু তার রূপ ,রস, গন্ধের থেমে যাওয়াতো আছে।


তোমায় আজ খুব চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করছে ,,,,শুধু তোমায় ভালোবেসে আমি একটুও ঠকিনি জানো ?দ্বিগুন তিনগুন ফিরে ফিরে পেয়েছি কেবল।
জানো ,আজকাল ভালোবাসতেও ভয় করে।মানুষ যেন কেমন হয়ে গেছে।একটু বেশি ভালোবেসে ফেললে ভেবে নেয় নিশ্চয়ই কিছু একটা কারণ লুকোনো আছে।
 শুধু একজন তুমিই ছিলে যার কাছে কথা বলবার আগে আমার দশবার ভাবতে হয়নি।যেভাবে যে কথাই বলেছি সব কথাতেই তুমি যেনো ভালো কিছু খুঁজে নিয়েছো। তুমি কেনো এতো অদ্ভুত করে আমায় বড় করেছো ?একটুখানি এই পৃথিবীর সাথে চলার মতন করে গড়ে তুলতে ?

একবার একটা  ফ্রিজ বাড়ি থেকে বার করে দিতে হচ্ছিলো। নষ্ট হয়ে গেছিলো বলে।তুমি খুব কেঁদেছিলে। আমি বড় বড় চোখ করে জানতে চেয়েছিলাম ,ফ্রিজের জন্যেও মানুষ কাঁদে ?তুমি কি  বলেছিলে  মনে নেই।শুধু মনে আছে আমরা প্রায় প্রায়ই ওই ফ্রিজ টা নিয়ে গল্প করতাম।তোমার একটুখানি মনটা উদাস হত। একদিন হঠাত বললে:ফ্রিজ অকেজো হয়ে গেছে ফেলে দিয়েছিস। মানুষ অকেজো হয়ে গেলে কি করবি রুদ্মি ?'

মা ,অকেজো হয়ে যাবার ভয়েই কি এত সুন্দর করে চলে গেলে ?
আজ তুমি শুধু আমায় বল ফ্রিজ টার জন্যে কষ্ট লুকোতে পারোনি।তুমি ,আমার একটা মা এর চলে যাবার কষ্ট আমি কি করে লুকোই ?এও কি দুঃখ বিলাস বলতো ?

                                                                                                                                              

বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

ভূত






সাদা ভূত ,কালো ভূত ,আম ভূত ,জাম ভূত ,
কত ভূত আছে ওই শ্যাওড়া গাছে।
কোনো ভূত আসবেনা যদি তুমি প্রতিদিন
পড়তে বস এসে মায়ের কাছে।


অশ্বত্থ নাম ওই গাছটার জানোনাতো
চেনোনাতো এখনো যে বটের ঝুরি ,
পাখিসব সারাবেলা খেয়ে লাল বটফল
রাত্তিরে প্যাঁচা ভয় দেখায় ভারী।


ওরে তুই কার ছেলে ?আমার তো কভূ নয় ?
বুকেতে সাহস ভারী ,নেই কোনো ভয় ?
ভূতেদের সাথে চলে সারারাত কথা মোর
দেখে তবে দৌঁড় ঝাপ দিবি নিশ্চয়ই।


তবে তুমি ভূতেদের বন্ধু হলে কি মাগো ?
ভয় কেনো পাবো আর মাঝরাত্তির ?
যখনই আসবে ভূত ,ডাকবো তোমায় আমি ,
গল্প জমবে খুব ভয়ে তিরতির।


শোন তবে ছোট খোকা ,পড়ালেখা কর যদি ,
হয়ে যাস বড় কোনো ভালো ডাক্তার ,
ভূতেদের পেটেব্যাথা ,চোখেব্যাথা ,কানেব্যাথা ,
নেই কেউ এতো ব্যাথা সারাবার আর।


সত্যি বলছো তুমি ?দুঃখে কি আছে তারা ?
ডাক্তার নেই বলে শ্যাওড়া গাছে ?
এক্ষুনী তবে চলো বসছি বইটি নিয়ে ,
পড়া শেষ করবোই তোমার কাছে।

মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৪

রঙ








পাতাদের কাছে রঙ ছুঁতে গিয়ে দেখি
কচি সবুজের অদ্ভুত এক রঙ
শুধায় তাহারে বিস্ময়ে এই মন
কোনটা আসল?নুতন না পুরাতন ?

আকাশের দ্বারে যেইনা পেতেছি হাত
বললে হেসে ,কোন রঙ তুমি নেবে ?
গোধুলী বেলায় রঙে দের উচ্ছাসে
অদ্ভুত কোনো ধাঁধায় পড়ে যে রবে।

ফুলেদের সাথে এইবার করি ভাব
কোন রঙ নিয়ে ভাসাবো আমার হাত
সন্ধ্যামনির সিঁদুর মাখানো রঙে
কৃষ্ণচুড়ার লালে লালে সংঘাত।

জলের রঙে কখনো নীলের বাহার
কখনো সবুজ ছুঁয়ে যায় অবহেলে
যখনই যে রঙ দিয়েছি জলের পরে
সবকটা রঙ আপন করে যে নিলে।

পাখিদের সাথে আজকে আমার খেলা
জমেছে ভীষণ মাছরাঙ্গা দের সাথে
সবুজ টিয়ে বা পানকৌড়ির মেলা
নেবেকি আমায় দূর আকাশের পথে ?

প্রজাপতিদের ডানা গুলো দেয় ছুট
ঘাসফড়িং এর সবুজের সাথে মিশে
মানুষ আমি আমার তো নেই রঙ 
নাওনা আমায় তোমাদের ওই দেশে।







রুনুর আর দরোজা খোলা হয়না

বাড়িটা ছিলো রাস্তার খুব কাছেই।
সমস্ত রাত্তির অদ্ভুত সব শব্দ ,
কখনো বাসের বিকট আওয়াজ,
অথবা কখনো সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন।
মাঝে মাঝে রিক্সার কিছু টুং টাং শব্দ ও
সে যখন নিঃশব্দ প্রায় রাত্রি নেমে আসতো তখন।
ধুপধাপ ছিনতাইকারীর দৌঁড়ে কতো যে ভেঙ্গেছে ঘুম !
মাঝেমাঝে বড্ড অসহ্য লাগতো।
ঐ যে পলাশ কাকার দুরন্ত ছেলেটা?
নতুন বাইক কিনেছে ,
একবার ভোঁ করে রাস্তার ও মাথা
আবার ভোঁ করে গগন কাঁপিয়ে ,ধূলো উড়িয়ে ,
রাস্তার হৃত্পিণ্ড মাড়িয়ে ,
জানান দিতে অতসী'দি কে ,
'সুন্দরী দেখ। আমি এসেছি।
এবার ঠিক পক্ষিরাজে দেবো উড়াল। '

এসব দেখতে দেখতে আমি ভুলেই যেতাম
আমার অস্থির শ্রবনেন্দ্রিয় কখন কবে
সময় নামক ঘড়ির শব্দে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ,
আমি ভুলেই যেতাম।
অথবা ভুলে যাবার ভান করতাম।

বাড়ীর পাশের শিউলীর টুপটাপ ঝরে পড়ার
শব্দের সাথে
অথবা
সমস্ত হিংস্র যানবাহনের
শব্দের সাথে
দুটো পায়ের কোমল শব্দ কখন একত্রিত হবে !
আমি ভুলে যেতাম
অথবা
ইচ্ছে করেই ভুলে যাবার ভান করতাম।
যেন প্রতিবারই নরম ভোরে
কেও দরোজায় কড়া নাড়ে।
আর চুপিচুপি ডাকে ----
রুনু ,শুনতে পাচ্ছো ?
রুনু ,দরজা খোলো।
শুনতে পাচ্ছো তুমি ?
রুনু ?
শেষ শব্দটা কেবলই মিলিয়ে যায়।
প্রতিদিন ঠিক এই সময়ে
শব্দের সাথে শব্দের খেলা হয়।
আর
আমি অপেক্ষায় থাকি।
কোন শব্দটার জয় হবে ?
রুনু ?
নাকি সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন ?

রুনুর আর দরোজা খোলা হয়না।

রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ১০






তোমায় হারানোর পর থেকে আমার একটা অদ্ভুত সমস্যা শুরু হলো।আমি খুব প্রবল ভাবে বন্ধুহীন হয়ে পড়লাম।এত্তগুলো বছর আমি একটুও বুঝতে পাইনি কি ভয়ঙ্কর রকমের তুমি বৃত্তের ভেতর আবদ্ধ ছিলাম।অদ্ভুত কি জানো ?আমি জীবনে একবারো আমার হারিয়ে যাবার কথা ভেবেছি অথচ তুমি হারাতে পারো একথা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।আমি না থাকলে আমার পাখি গুলোকে কে দেখবে এই নিয়ে কতনা কথা  তোমার সাথে। কতনা বকুনি খাওয়া। আশ্চর্য !একটা বারো ভাবিনি তোমার একটা পাখি আছে। সেই পাখিটা তোমায় ছাড়া  আজো একটা বন্ধু পর্যন্ত বানাতে শেখেনি। সেই পাখির কি অদ্ভুত দুঃসহ জীবন হয়ে যেতে পারে আমি ভাবিনি। আমি ভাবিনি কেন?কেন ভাবিনি ?

মাঝেমাঝে কিছু অদ্ভুত প্রশ্নের মুখোমুখি পড়তে হয়। কে আপনার প্রথম প্রেম ?যখন তুমি ছিলে এই প্রশ্নের একটা সহজ উত্তর ছিলো। যার সাথে প্রেম করেছি ,যাকে বিয়ে করেছি সেই। সেইতো আমার প্রথম প্রেম। আর কে হবে ?সেদিন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন টা করলাম। নিজেকে নিজেই বললাম :'ওই অদ্ভুত মায়াবী নারী আমার প্রথম প্রেম।যার অনুপস্থিতি আজো তার উপস্থিতিকে এতোটুকু ম্লান করতে পারেনি।'
আচ্ছা ,আমিকি একপ্রকার প্রেম করেছি তোমার সাথে ?তুমি এতোটা স্বার্থপর কেনো ছিলে ?কেনো তোমার মুখের মতো আর একটা মুখ ও কোথাও নেই ?কেনো নেই ওই মোহিনী সুবাস ?কেনো এমন দুটো হাত কারোর নেই যেই হাতে সবুজ পাতার সবুজ গন্ধ পাওয়া যায় ?কেনো অমন বিশাল বৃক্ষের মতন একটা ছায়াভরা আশ্রয় নেই আর কারোর কাছে?
কেনো অমন দীঘির মতন কালো চোখ নেই কারোর যে চোখের দিকে চাইলেই মুহুর্তেই স্বপ্নেরা আবার বাসা বাঁধে বুকে ?

সবকিছু একসাথে নিয়ে চলে গেলে ?আর আমায় কি ভীষণ অসুবিধায় ফেললে জানো ?আমি আজকাল কেবল বন্ধু খুঁজে বেড়াই।হঠাত কারোর মাঝে অদ্ভুত কিছু মিল খুঁজে পেয়ে যেইনা ছুঁতে যাই.....................


আমি জানি মায়েরা মায়েদের মতন। মায়েদের মতন কেও হয়না। তবু আমি আশ্রয় খুঁজি। তবু আমি তোমায় খুঁজি।খুঁজতে খুঁজতে দুদিন বা তিন দিন কেমন একটা আশ্চর্য সময় কাটে।কিছু মানুষ এর কাছে যেতে নিয়ে কখনো মনে হয় ওই মানুষ টাকে তুমি আমার জন্যে পাঠিয়েছো।ওই ভেবে যেইনা একটু কাছে যাওয়া। অমনি সব স্বপ্নের ধুলোর মতন উড়ে যাওয়া। এসব ছাইপাশ করতে করতে কোনো মাসের ৩০ তারিখ আসে। কোনো মাসে আসে ৩১ তারিখ।
আমার সময় কেটে যায় মা। আমার সময় কেটে যায়।তোমায় খুঁজতে খুঁজতে। 

শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪

ফুলের নূপুর



ভাবছো কি গো মিষ্টি মেয়ে ,
উঠবে আমার নায় ?
শিউলী দেবো ,বকুল দেবো ,
যখন যে ফুল পাই।

রাত্রি হলে সুবাস পাবে
চাও কি তেমন ফুল ?
কামিনী আর গন্ধরাজে
ভরিয়ে দেবো চুল।

সন্ধ্যামণি রং ছড়াবে
তোমার সিঁথির পর
ঝিঙে ফুলের হলদে রঙে
রাত্রি হবে ভোর।

কৃষ্ণচূড়া আর সোনালু
রাঙিয়ে দেবে পথ
রক্তজবার রাখী হাতে
করবে কি শপথ ?

ফুলের নূপুর  সাজিয়ে পায়ে
আসবে কি মোর ঘরে ?
সকল রঙে রঙিন বাসর
সাজবে তোমার তরে।

ফিরে আয়





ঝকঝক সাদা রোদ
ব্যালকনী ভরপুর
মেঘেদের ছুটি আজ
প্রজাপতি ঘুরঘুর।

পাতাগুলো চকচক
যেন সুখে উড়ছে ,
সবুজের ডানা মেলে
কি যে কথা কইছে।

পাখিসব অস্থির
কিচিমিচি কলোরব
খড়কুটো নিয়ে মুখে
বাড়ী ফেরা উত্সব।

দূর থেকে নীল নীল
আকাশ টা সাজছে ,
আর কোনো রং নেই
নীল সুখে মাতছে।

মৃদু বায়ূ শনশন
ভেজা চুল ছুঁয়ে যায় ,
তৃষিত চক্ষু বলে
আয় তুই ফিরে আয়।

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ৯










তুমি চলে যাবার পর সবচেয়ে বেশী যে কাজটা করা হয়েছে তা হলো মানুষের মুখ দেখা। কোত্থাও,কারোর মুখে একটু কি তোমার  ছোঁয়া পাওয়া যায় ? সেই চেষ্টা।
জানো ,একেক মানুষের কষ্টের অভিব্যক্তি একেকরকম। এমনকি আনন্দের ও। আমি ভাবতাম বুঝিবা সব্বাই কষ্ট পেলেই আমার মতন নিশ্চুপ হয়ে যায় ,এবং ধীরে চুপে শামুক বাস বেছে নেয়। তা নয় কিন্তু।দেখেছি একেক জনের কষ্টের একেক রকম অভিব্যক্তি। কেউ চিত্কার করে কাঁদে ,কখনো কেও নীরবে অশ্রুর সাগর সৃষ্টি করে।
কিন্তু তুমি কেমন অদ্ভুত ছিলে।খুব বেশি কষ্ট হলে কেমন যেন পাহাড়ের মত হয়ে যেতে।চুপচাপ।থমথমে।তোমায় খুঁজতে খুঁজতে হঠাত অমন থমথমে মুখ দেখলে ওখানেও তোমায় খুঁজে বেড়াই। ভারী অদ্ভুত জানো ?কারোর মুখের মাঝে তোমার ছায়া নেইতো।

আচ্ছা ?মায়েদের হাসি কি একটু অন্যরকম ?মুক্ত ঝরেনা ,ভালবাসা ঝরে পড়ে। তাই কি ?আর অদ্ভুত কামিনীর সুবাস হয় কি তখন ?তুমি হাসলে যেমন হতো ?জানো ,হঠাত বাড়ির উঠোনের ছোট্ট কামিনীর গাছ টা যখন জেগে ওঠে আমার আজো বড্ড অসুবিধে হয়।

তোমার গুনগুন গানের জন্যে একটা নির্দিষ্ট গান ছিলো। "কিছুক্ষণ আরো নাহয় রহিতে কাছে। "তুমি গাইতে নিলে মূল গান কোথায় যে পালাতো। আজো মনে পড়লে হাসি পায়। আমি প্রায়ই বলতাম :'উফ ,মা ,চুপ করোতো।এত্ত বেসুরো  গান গায় কেউ ?'
তুমি বলতে ,"রুদ্মি ,তুইতো আমার কাছে আসিস কষ্ট ওড়াতে। সুরে গান গাইলে কষ্ট উড়েনা। আরো জমা হয়ে থাকে। বেসুরো গান গাইবো। তুই একসময় হেসে উঠবি খিলখিলিয়ে।তোর্ ওই ভীষণ সংক্রামক হাসি একটু পর আমাতেও ছড়াবে। আমিও হাসবো। আর কষ্টগুলো উধাও। "
সেদিন গান টা হঠাত বাজলো কানে। ছুটে গেলাম।কোথাও কেউ নেই।মুখটা হারিয়ে ফেলেছি। আর কারোর মুখের মাঝে ওই মুখখানা কেনো খুঁজে পাইনা কো ?এতো অদ্ভুত মা আর নেই কেনো বলতে পারো ?

আর কিছুক্ষণ। আর কটা দিন সত্যিই রইতে কাছে ?আরো কটা দিন বেসুরো গানের বেসুরো সুরের হাওয়ায় কষ্টের মেঘ উড়িয়ে দিতাম। এখন কোথায় ,কেমন করে এতো কষ্ট উড়াই বলতে পারো ?

বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪

পাহাড় নীড়ে

রইলি পড়ে পাহাড়টাতে  ,
আমায় ছাড়া  একলা পাখি
সুবাস পেলি বুনোফুলের ?
বেতফল আর চালতা নাকি ?

সূর্যডোবা দেখলি বুঝি
দুই পাহাড়ের মাঝখানেতে ?
মেঘের সাথে জমলো খেলা
রৌদ্র আলো আর ছায়াতে ?

শিশির  পায়ে জড়িয়ে নিয়ে
লালচে মাটির স্পর্শ পেলি ?
মৌমাছি আর প্রজাপতির
ডানায় চড়ে বেড়িয়ে এলি ?

এইখানে মোর যন্ত্রজীবন
ইট ,পাথর আর কাঠের ভীড়ে ,
ভাবছি বুঝি ভুলেই গেছিস
ভালোই আছিস পাহাড় নীড়ে।
 
রাত্রি সেথা কত্ত নিঝুম ?
তারার সাথে হয়কি কথা ?
মিষ্টি হাওয়া ছুঁয়ে গেলেই
বুকের গভীর হয়কি ব্যাথা ?

আধেক ঘুমে একটুখানি
স্বপ্ন দেখে কষ্ট কি হয় ?
অপেক্ষাতে গুনছি প্রহর
কাটছেনা যে আর তো সময়। 




রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৪

এইতো সে ছুঁয়ে গেলো






টুপটাপ ঝিরিঝিরি
রাতভর বৃষ্টি ,
চুপচাপ এই মন
জানলায় দৃষ্টি।

মেঘ গুলো আরো যেনো
থমথম করছে ,
ছোট্ট শিশুর মত
ফোঁস ফোঁস কাঁদছে।

বিদ্যুত বিজলী
ঝলকানি বাড়ছে ,
বজ্রের হুঙ্কার
যেনো কানে লাগছে।

মাঝি ভাই বহুদূর
নৌকায় জল যে ,
তুফানের ভয়ে তার
হাত দুটো কাঁপছে।

পাতাদের ঘুম নেই
ঝরে যাবে ভয় যে ,
ফুল গুলো ভিজে সারা
প্রজাপতি খুঁজছে।

আমিও তো চেয়ে আছি
প্রজাপতি পাখনায়
এক্ষুনি উড়ে যাবো
ওই দূর সীমানায়।

ঝমঝম ঝমঝম
ট্রেন দৌড়ুচ্ছে
আমারই ঠিকানায়
জানি ছুটে আসছে।

জানলায় চুপচাপ
আর নেই কষ্ট
এইতো সে ছুঁয়ে গেলো
একদম স্পষ্ট।






রুদ্মিলার চিঠি ৮

তোমার চলে যাবার খবর আমি নিজ থেকে কাওকে দিইনি। আমার বন্ধু মহলের  বিরাট অংশ এখনো জানেনা তুমি নেই। ওদের মায়েরা আবার তোমার বন্ধু ছিলো।ছোটবেলায় স্কুল এ বেশ একটা গল্প চলতো তোমাদের।স্কুল ছুটির একটু আগেই পৌঁছে যেতে তুমি। ঐটুকুই তোমার গল্প। ঐটুকুই তোমার অবসর।বিভিন্ন ছাত্র ছাত্রীর মায়েরাই তোমার প্রানের বন্ধু।
এবং তাঁরা আসলেই তোমার প্রানের বন্ধু ছিলো। এখনো তোমার খবর নেয়  কত যত্নের সাথে।ওখানে দু এক জন জানেনা তুমি না ফেরার দেশে চলে গেছো। তেমনই একজনের সাথে সেদিন দেখা।প্রথম চেষ্টা করেছি এড়িয়ে যেতে। কিন্তু তাঁর চোখ এতো তীব্র।তিনি আমায় ডাকলেন। জড়িয়ে ধরলেন। অনেক চুমু খেলেন। এবং তোমার কথা জানতে চাইলেন। আমি অবলীলায় বলে দিলাম ,তুমি বাড়িতেই আছো। বললেন  তোমার ফোন নম্বর টা দিতে। আমি দিলাম। তিনি তক্ষুনি নম্বর চাপলেন।"MOBILE CANNOT BE REACHED AT THE MOMENT.PEALSE TRY AGAIN LATER ."বিচ্ছিরি এই কথাটা তিনি শুনলেন।শুনে বললেন :ফোন তো বন্ধ।"আমিও খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম :এখন তো রান্নার সময় তাই বোধ হয় বন্ধ রেখেছে। উনি বিশ্বাস করলেন। তারপর অনেক আদর করে একসময় আমায় ছেড়ে দিলেন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
মা ,এই কাজ টা আমি প্রায়ই করি। আমার জগতের অনেকের কাছেই তুমি বেঁচে আছো এখনো। এখনো রান্না করছো। গুনগুন গান গাইছো। চুলে বিনুনী করে নিচ্ছো বিকেল হলেই। অথবা বাবার সাথে কিছু না কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া করছো।অথবা আমায় ফোন করতে নিয়ে বরাবরের মত দেখছো ব্যালান্স নেই। তাই আমিও তোমার কোনো ফোন পাচ্ছিনা। আমি রাগ করছি।ভীষণ রাগ করে নিচ্ছি। তারপর অনেক রেগে তোমাকে আবার বকবার জন্যে আমি নিজেই ফোন করছি তোমায়। আবার সেই বিচ্ছিরি আওয়াজের  মেয়েটা বলছে MOBILE CANNOT BE REACHED AT THE MOMENT.PLEASE TRY AGAIN LATER .আমি আবার অপেক্ষা করছি। আমি ধরে নিচ্ছি তুমি ফোন বন্ধ করে রান্না করছো।অথবা ধরে নিচ্ছি তোমার যখন কাজের শেষ আমার ঠিক তখনই কাজের শুরু। প্রতিদিনের মতন আমি আবার আবার আরেকটি দিনের অপেক্ষায় থাকছি। এভাবেই দিন থেকে মাস। মাস থেকে বছর। যাচ্ছে সময়।পালাচ্ছে সময়।এভাবেই যত টুকু আয়ূ ফুরিয়ে আনা যায়। একদিন নিশ্চয়ই সব অপেক্ষার শেষ হবে। একদিন নিশ্চয়ই ফোন এর চেয়ে আরো কাছে তোমায় পাবো। নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই মা।

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৪

কন্যা

কন্যার কালো কেশ মেঘেদের মতো
জলেতে ছড়াইয়া যেনো নাও শত শত।

সূর্যের তেজ যেনো কন্যার রঙ
চাঁদ তারা সকলে যে হারায় তখন।

কন্যার চোখ দুটো সমুদ্র ছাড়ায়
ছলছল কি যে কথা ঢেউ এ তে গড়ায়।

হাসিতে মুক্ত নয় ফুল ঝরে পড়ে
মিষ্টি সুবাসে মন কোথা যায় উড়ে।

বক্ষ তো নয় যেন জোড়া কবুতর।
না জানি কি কথা আছে লুকায়ে ভিতর।
কন্যার হাত দুটো বৃক্ষের পাতা।
সবুজ গন্ধ যেনো আছে তাতে মাখা।

কলসীর জল যেনো মানেনা বারণ
নিতম্ব ছুঁইয়া তারে করিবে ধারণ।

কন্যা হাঁটিয়া যায় নূপুরের সুরে
ধূলো মাখা উঠোনেতে স্বর্ণচাঁপা ঝরে।

কন্যার চুলের সিঁথী যেন কোনো পথ
হারাইবো সেই পথে করিনু শপথ।

রাজকন্যা



হঠাত হাওয়ায় কি ছড়ালো ?
এমন মিঠে সুবাস কেনো ?
মন কি তোমার অনেক ভালো
মিষ্টি হাওয়া বলছে যেনো ?

একটু ঘুমে তোমায় চুমে
হাত টি নিলাম বুকে
চুপিচুপি জানলা গলে
জোসনা এলো  সুখে।

কেমন করে তারপরেতে 
বৃষ্টি এলো ঝেঁপে ?
একটু ফোঁটা চাঁদ মুখেতে
স্পর্শ দিলো এঁকে।

চেয়ে থেকেই রাত চলে যায়
ভোরের পাখি ডাকে
মধুর আলো পড়লো এসে
তোমার চুলের ফাঁকে।

ঘুমকে বলি আজকে তুমি
ওই  চোখেতেই থাকো।
নানা রঙের স্বপ্ন এনে
ওই চোখেতেই আঁকো।

কোন আলোতে রাজকন্যা
কেমন করে সাজে
দেখবো আমি সকল আলোয়। 
সকাল দুপুর সাঁঝে।  


শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ৭

 প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মেয়েরা বাবাদের বেশি ভালোবাসে।রুদ্মিলার সবকিছুতেই ছোটবেলা থেকে ভারী অদ্ভুত।রুদ্মিলার বাবা কন্যাশিশুর বিরোধী বলেই হয়তো শৈশব থেকে বাবার সাথে মধুর সখ্যতা তার হয়ে ওঠেনি।
তাই তার জীবনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়ে গেছে হারিয়ে যাওয়া মা।কিন্তু ওই মা টা কেমন আবার অদ্ভুত ছিলো বলে মাঝেমাঝে রুদ্মিলা নিজেই বেশ একটা দ্বিধায় পড়ে যেতো।মা টা কেমন যেনো মেয়ে ছিলোনা। একটা আশ্চর্য দ্বৈত সত্তা ছিলো।সে কথায় আসছি পরে।
রাজনীতি ব্যাপারটায় রুদ্মিলা খুবই অপক্ক। বুঝতেও ভালো লাগেনা ,যুঝ তেও নয়। দেশের রাজনীতি অথবা বাইরের ,বুঝতে নিলেই ওর ক্লান্ত লাগে।সবসময়।সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা হলো রুদ্মিলার বুঝতে অনেক সময় লেগে গেছে রাজনীতি যে কেবলমাত্র দেশের নেতা নেত্রীর মাঝে সীমাবদ্ধ তা নয়। আসলে সংসার টা ও একটা রাজনীতির ক্ষেত্র বটে।আর অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার টা হলো রুদ্মিলা ছোটবেলা থেকেই এই একটা জায়গায় তার ভুবনজয়ী মা কে হারতে দেখেছে।সংসার যখনই রাজনীতি হয়ে গেছে মা ঠিক তখনই রণে ভঙ্গ দিয়েছে।রুদ্মিলা এখনো ভাবতে নিলে হেসে ফেলে। মা খুব আগ্রহ ভরে ভারতীয় টি ভি সিরিয়াল গুলো দেখতো। সব ভাষার। শুধু জানার জন্যে কেমন করে ট্রাম কার্ড টা কোন সময়ে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে হয় সংসার নামক রাজনীতির খেলার মাঠে। কিন্তু প্রতিবারই বোকা মা টা হেরে ভূত হয়ে থাকতো।ভয়ানক রেগে যেতো।মুখটা করে নিতো পাহাড়ের মতো। কিছুতেই কোনদিন ওই যুদ্ধে মা জিতে আসতে পারেনি।মাঝে মাঝে তাই মায়ের খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হতো। সমুদ্রের চেয়ে পাহাড়ের কথা বলতো বেশি।খুব পাহাড়ে হারাতে চাইতো।
 রুদ্মিলা নানা ভাবে চেষ্টা করত মা কে জিতিয়ে দিতে। কারণ মায়ের ওই পাহাড়ের মত গম্ভীর হয়ে যাওয়া কষ্টের মুখটা ওর একেবারেই অসহ্য লাগতো।আর তাছাড়া মা তো কোনো চাকরি বা আর কোনো কিছু করতোনা। তার সময় টা যদি একটু আধটু সাংসারিক রাজনীতি করেই না কাটবে তবেতো দম বন্ধ হয়ে আসার কথা। তিনি কি করে সময় কাটাবেন ?এই একটা কারণে রুদ্মিলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিলো তার নিজের সমস্ত বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে মা কে জিতিয়ে দেয়া। কিন্তু রুদ্মিলা ভয়াবহ ভাবে তার মা এর প্রতিটি দোষ আর গুন পেয়ে নিয়েছে বড় যত্নে।অনেক চেষ্টা করেও রুদ্মিলা কোনদিন সংসারের নোংরা রাজনীতির মাঠে মা টাকে জিতিয়ে দিতে পারেনি।

এবার আসছি সেই শুরুর কথাটায়। দ্বৈত সত্তা।রুদ্মিলা খুব অবাক হতো তার মায়ের বিভিন্ন রূপ দেখে। খুব ধার্মিক একজন মানুষ অথচ বেশ ভূষায় তার কোনো চিন্হ নেই।খুব আধুনিক অথচ তার কোনো বিরক্তিকর প্রকাশভঙ্গি নেই।দেহে নারী অথচ মনের ভিতর একটা শক্তিশালী পুরুষের মত মানুষ।এমন আরো অনেক রূপের ভান্ডার দেখতে দেখতে রুদ্মিলার একসময় বুঝতে কষ্ট হয় মা কি পুরুষ না কি নমনীয় নারী !
এবং একসময় রুদ্মিলা আবিষ্কার করতে শুরু করে তার মা আসলে একটা মানুষ। পরিপূর্ণ মানুষ। নারী ও নয়। নয় পুরুষ ও।
রুদ্মিলার খুব ইচ্ছে করে চিত্কার করে মা কে বলতে :"অনেক ধন্যবাদ মা। তুমি পারনি বলেই আমিও পারিনি।তুমি পাহাড় ভালবাসতে বলেই আজ আমার গান গাওয়া হয়। তুমি বৃষ্টি ভালবাসতে বলেই তোমার মেয়ে কবিতা লেখে।
থাকনা। সংসারের রাজনীতি থেকে নাহয় একটা নক্ষত্র বিচ্যুত হলো। কি আসে যায়। কিছু সৃষ্টি হলোতো ?সুন্দর ,পবিত্র,কল্যানকর। "
  


বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৪

বুনোফুলটি



সাঁঝের বেলা ফিরবো যখন বাড়ী
বুনোফুলটি বললে হেসে :যাও ,
তোমার সঙ্গে আঁড়ি।

আমি হঠাত ফিসফিসানি শুনে
যেইনা ফিরে তাকাই একটুখানি
চুপিচুপি হাওয়ার দোল টি খেয়ে
করলে শুরু কেমন কানাকানি।

সাঁঝের বেলা গড়িয়ে নামে রাত,
ধূলোয় দুলে বললে হেসে :যাও ,
ছেড়েই দিলেম হাত।

আমি বললাম এত্ত তোমার চাওয়া ,
আমার সাথে যাবে অনেক দূরে ?
নামটি তোমার আজোতো অজানা
রূপটি দেখে নয়ন শুধু ভরে।

রাত্রি তখন মাত্র কেবল হলো ,
একলা তারে ফেলেই যখন ফিরি
অভিমানে নুইয়ে শরীরখানা
বললে কেঁদে :যাও
দাঁড়িয়ে থেকোনা।

আমি বললাম মুক্ত এখন আছো
মিষ্টি হাওয়া নিচ্ছো ভরে বুক
আমার বাড়ীর ব্যালকনি তে এসে
বন্দী হয়েই থাকবে তোমার সুখ।




আলো আসে



মেঘেদের মেয়ে আজ আকাশ ছেঁয়েছে
কেশবতী কন্যা যেনো,
ছড়াতেছে চুল তার
অবাধ্য নারীর মতন।
করিছে যুদ্ধ হেথা সূর্যের সাথে
আঁধারে ভাসিয়ে দেবে সব সব।

কন্যার কালো কেশ কালো শুধু নয়
চোখের মণির কালো যেন তুচ্ছ হয়
মেঘেদের মেয়ে আজ শপথ করেছে
লুকোচুরি লুকোচুরি খেলায় নেমেছে।

আমি হেথা  ক্ষুদ্র মানব ,
আছি বসে ক্লান্ত চোখে চেয়ে।
মেঘেদের মেয়ে কবে আকাশ ছাইবে
এলোকেশী মেয়ে কবে মর্ত্যে লুটাবে ?

সূর্যের সাথে চলে বারেবারে খেলা।
কখনো আঁধার কভূ আলোকিত বেলা
অবশেষে এলোকেশী মুখখানা ঢাকি
করিলো প্রস্থান তার চিহ্ন টুকু রাখি।

আমি হেথা ক্ষুদ্র মানব ,
আছি বসে আকাশ পানে চেয়ে ,
সব খেলা শেষ হলো সুর্যের কাছে
আঁধার ফুরিয়ে গিয়ে আলোটুকু আছে।

জীবন এমনই যেনো আকাশের মতো।
মাঝেমাঝে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা
আমি জানি সূর্যের জয় নিশ্চয়ই ,
আলো আসে আঁধারের ফুরায় যে বেলা।

বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৪

হঠাত অকারণে





হঠাত অকারণে পেয়ে যাই যদি তোমায়
সর্ষে মাঠের হলুদে ,
অথবা ইউকালিপ্টাসের হালকা ছায়ায় ,
নরম নরম বাঁশ বনের মায়ায় ,
অথবা কোনো শালিকের ছোট্ট বাড়ীটায়
পেয়ে যাই যদি তোমায় ?
হঠাত কোনো মেঠো পথে ,
অথবা ঝাউ এর বনে ?
চাঁদ যেথা মাঝরাতে লুকোচুরি খেলে পাতার পেছনে ?
পেয়ে যাই যদি তোমায় ?
জামের মুকুলের লাল রঙে ,
কিংবা কচুরিপানার শ্যেওলা সবুজের আলিঙ্গনে ?
যদি ঘাসফড়িং হয়ে থেকে যাও তুমি
অথবা মাছরাঙ্গা?
ধর হঠাত তোমায় পেয়ে যাই যদি কোনো কুয়াশায়
শিশিরের স্ফটিকে ?
নক্ষত্রের কোনো একলা রাতে
অথবা জোনাকির বিচ্ছুরিত আলোয় ?
আমি আর পিছু ফিরে চাহিবোনা
করিবোনা সময় ক্ষেপন আর কোনো আশ্রয় খুঁজিবার,
করিবোনা সময় ক্ষেপন তোমারে আবার আবার হারাতে দেবার
একবার শুধু একবার যদি
পেয়ে যাই তোমায়
আমি ওই হাতের মুঠোয় এনে দেবো গভীর হাওয়ার রাত। 





রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৪

অসময়



পারুলের  নীলচে শাদা  ফুলে ছেঁয়ে আছে পথ টা
খুব বেশি তীব্র নয়
নেশায় ভরা হালকা সুবাস।
মাঝেমাঝে মনে হয়
এখানে ,ঠিক এখানটাতেই
যদি দেখা হতো ?
যাওয়া হতনা তোর্ আর আমায় ছেড়ে।
পারুল তোকে ফিরিয়ে আনতো
ঠিক আমার কাছে।

এইতো দীঘিটা ,
খুব বেশী বড় নয় কিন্তু।
রুপোলি হাঁস গুলো সব কোথায় ছিলো সেদিন ?
পৌষের কাছাকাছি সময়টা ছিলোনা তো ?
ছিলোনা পরিযায়ী পাখিদের আসবার দিন।
নয়তো এমন দীঘি ছেড়ে
যাওয়া হত কি তোর্ ?
অন্তত দীঘির জন্যে ?

অধীর বাতাসের দিন ছিলোনা সেদিন
ছেঁড়া ছেঁড়া কালো মেঘ এসে
ঢেকে যায় আকাশ।
চারিদিক ফোঁপায় ছোট্ট শিশুর মতন
এই বুঝি ঝরে পড়বে কান্না।
আকাশের বুক চিরে। 
ছিলোনা তো সেদিন টি তেমন।
নয়তো অমন বৃষ্টির আলিঙ্গন ছেড়ে
যাওয়া হতো কি তোর্ ?

বড় বেশী অসময়ে বললি বিদায়।
সময়টা পৌষের ছিলনা
না ছিলো অঘ্রানের
ছিলোনা রঙিন ফাগুনের ও
অথবা শ্রাবন কদমের
সময়টা কিছুতেই
শিশিরের আশ্বিন ছিলনাতো।
আসলে সময় টা বড্ড অসময় ছিলো।



বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০১৪

মূর্তি হয়ে থাকিসনা তুই





আঁধার রাতে
হঠাত জেগে
আপন মনে ভাবি ,
আজকে মাকে দৃষ্টি দেবো
প্রদীপ দিয়ে আঁকি।

বারে বারে জ্বালছি প্রদীপ
নিভছে ততবার।
ঝড়ো হাওয়া বইছে কেনো
এমন চারিধার ?


যতবারই চোখের তারায়
জ্বালতে গেছি আলো
ততবারই রাত্রি হলো
আঁধার নেমে এলো।


ইচ্ছে করে
একটি বারে
একটি প্রানের ছোঁয়া
একটুখানি
জাগিয়ে তুলি
জগৎ রূপী মায়া।

একটিবার প্রাণ পেলে তুই
আর যাবিনা ছেড়ে।
ভুবন জুড়ে দুঃখ ব্যাথা
সবই নিবি কেড়ে।

মূর্তি বানাই
মূর্তি বানাই
মূর্তি কারিগর
মূর্তি হয়ে থাকিসনা তুই
এবার কিছু কর।