বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ৯










তুমি চলে যাবার পর সবচেয়ে বেশী যে কাজটা করা হয়েছে তা হলো মানুষের মুখ দেখা। কোত্থাও,কারোর মুখে একটু কি তোমার  ছোঁয়া পাওয়া যায় ? সেই চেষ্টা।
জানো ,একেক মানুষের কষ্টের অভিব্যক্তি একেকরকম। এমনকি আনন্দের ও। আমি ভাবতাম বুঝিবা সব্বাই কষ্ট পেলেই আমার মতন নিশ্চুপ হয়ে যায় ,এবং ধীরে চুপে শামুক বাস বেছে নেয়। তা নয় কিন্তু।দেখেছি একেক জনের কষ্টের একেক রকম অভিব্যক্তি। কেউ চিত্কার করে কাঁদে ,কখনো কেও নীরবে অশ্রুর সাগর সৃষ্টি করে।
কিন্তু তুমি কেমন অদ্ভুত ছিলে।খুব বেশি কষ্ট হলে কেমন যেন পাহাড়ের মত হয়ে যেতে।চুপচাপ।থমথমে।তোমায় খুঁজতে খুঁজতে হঠাত অমন থমথমে মুখ দেখলে ওখানেও তোমায় খুঁজে বেড়াই। ভারী অদ্ভুত জানো ?কারোর মুখের মাঝে তোমার ছায়া নেইতো।

আচ্ছা ?মায়েদের হাসি কি একটু অন্যরকম ?মুক্ত ঝরেনা ,ভালবাসা ঝরে পড়ে। তাই কি ?আর অদ্ভুত কামিনীর সুবাস হয় কি তখন ?তুমি হাসলে যেমন হতো ?জানো ,হঠাত বাড়ির উঠোনের ছোট্ট কামিনীর গাছ টা যখন জেগে ওঠে আমার আজো বড্ড অসুবিধে হয়।

তোমার গুনগুন গানের জন্যে একটা নির্দিষ্ট গান ছিলো। "কিছুক্ষণ আরো নাহয় রহিতে কাছে। "তুমি গাইতে নিলে মূল গান কোথায় যে পালাতো। আজো মনে পড়লে হাসি পায়। আমি প্রায়ই বলতাম :'উফ ,মা ,চুপ করোতো।এত্ত বেসুরো  গান গায় কেউ ?'
তুমি বলতে ,"রুদ্মি ,তুইতো আমার কাছে আসিস কষ্ট ওড়াতে। সুরে গান গাইলে কষ্ট উড়েনা। আরো জমা হয়ে থাকে। বেসুরো গান গাইবো। তুই একসময় হেসে উঠবি খিলখিলিয়ে।তোর্ ওই ভীষণ সংক্রামক হাসি একটু পর আমাতেও ছড়াবে। আমিও হাসবো। আর কষ্টগুলো উধাও। "
সেদিন গান টা হঠাত বাজলো কানে। ছুটে গেলাম।কোথাও কেউ নেই।মুখটা হারিয়ে ফেলেছি। আর কারোর মুখের মাঝে ওই মুখখানা কেনো খুঁজে পাইনা কো ?এতো অদ্ভুত মা আর নেই কেনো বলতে পারো ?

আর কিছুক্ষণ। আর কটা দিন সত্যিই রইতে কাছে ?আরো কটা দিন বেসুরো গানের বেসুরো সুরের হাওয়ায় কষ্টের মেঘ উড়িয়ে দিতাম। এখন কোথায় ,কেমন করে এতো কষ্ট উড়াই বলতে পারো ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন