বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ৬



রাস্তা টা বড্ড ব্যস্ত। আজীবন তোমার ভয়। কিন্তু আবার ভালো ও বাসতে।গাড়িতে চড়ে অনেকটা রাজকুমারীর মতন যাত্রা।সে যেখানেই যাওয়া হউক।কোনদিন আমার পাশে বসা হতনা তোমার।মনে পড়ে কেনো ?
ব্যাক ভিউ মিরর এ তোমার মিষ্টি মুখটা দেখার  অবাধ্যতা ছিলো বরাবর;তুমি ওখানটায় বসতে ঠিকই কিন্তু চোখ টা আমার হাতের কাছে। আর একটু পর পর চুলের ভেতর তোমার আঙ্গুলের স্পর্শ।তোমার কেমন অদ্ভুত একটা গন্ধ ছিলো ।আরো অদ্ভুত হলো তোমার শরীরটার একেক জায়গায় একেক রকম গন্ধ। না ,কোনো ফুলের নেই ওই গন্ধটা।পাতার ও নেই। তবু তোমার আঙ্গুলের স্পর্শে একটু হালকা কাঁঠাল চাঁপার সুবাস হতো।আবার হাতের মুঠোয় সুর্যের গন্ধ।সূর্যের  গন্ধ বললেই তুমি হাসতে।আচ্ছা তুমিকি জানোনা রোদ্দুরের ও গন্ধ আছে ?আছে মাটির ও। তোমার বুকের ভেতর মাটির গন্ধ পেতাম আমি।তুমি হাসতে। বলতে, মাটির ও ?আমি বলতাম ,পাওনা ?যখন তোমার বুকের ভেতর আমার কান্না ঝরে ঠিক তখন ভেজা মাটির গন্ধ করে।
তোমার অভ্যেস একরাশ ভেজা চুল নিয়ে গাড়িতে ওঠা।জানোতো ওই চুলে আমি কুয়াশার গন্ধ পাই।হাসি আবারো। কুয়াশার বুঝি গন্ধ আছে ?কতবার যে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি জানা নেই।কুয়াশা আর ধূপের গন্ধ অনেকটা একই।
যেদিন প্রথম তুমি ভেজা চুলে উঠলে গাড়িতে ,তোমার বোঝা উচিত ছিলো ওটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তোমার ভাবা উচিত ছিলো আমার ঘ্রানেন্দ্রিয় অন্তত তোমার ব্যাপারে বড্ড সবল।তোমার বোঝা উচিত ছিলো ওই তীব্রতা নিয়ে তুমি চলে গেলে কোথাও একটা কিছু অঘটন ঘটে যাবে।

আমাদের একটা দুর্দান্ত মজার সময় কাটতো শরত এলে।দুধারে কাশবন। মাঝখানে অনেকটা পিচ ঢালা রাস্তা।কি অদ্ভুত কালো দেখাতো রাস্তাটা। তুমি প্রায়ই বলতে ,রুদ্মি দেখ দেখ,রাস্তা টা যেন তোর্ মাথার একরাশ কালো চুল;আমি তক্ষুনি গাড়িটা থামাতাম। রাস্তায় চুল পেতে দিয়ে বলতাম ,এই রাস্তাটা যতদূর চলে গেছে তুমি অমন মিশে থেকে যাবেতো আমার সাথে ? ততদূর ?তুমি আবার হাসতে। এই তুমি কি জানতে নাকি ,ওই হাসিটা বড় বেশি দুস্প্রাপ্য। পৃথিবীর আর কোনো মানুষ এমন করে হাসতে জানেনা।তুমি জানতে তাইনা ?আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে চলে যাবার সময়েও কি অমন করে হেসেছিলে ?

তুমি প্রায়ই বলতে ,রুদ্মি জানিস ,হঠাত যাওয়া ভালো। এই যেমন দেখনা মাত্র কদিন হলো কাশবন বেড়িয়ে এলাম।আজ কেমন বৃষ্টি ছুঁয়ে গেলো। টেরই পাইনি।কখন কেমন করে বর্ষা এলো !তুইকি বুঝিস ?
আমি তোমায় অবাক করে দিয়ে বলতাম ,তুমি পাশে থাকলে শুধু গন্ধ বুঝি। গন্ধ চিনি। গন্ধ করি স্পর্শ। আর কিছুতো বুঝিনা।বৃষ্টি বুঝি। কারণ চুল ভেজাবেতো তুমি। আবার সেই অদ্ভুত গন্ধ;পাগলের মতন তোমায় নিয়ে আবার বেরিয়ে যাওয়া। এবার অবশ্যই লং ড্রাইভ। ঝুম বৃষ্টি। তুমিও জানো। আমিও জানি। আমরা দুজনেই জানি একটু পরেই গাড়িটা আর চলবেনা। আমরা রিক্সা খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হব। রিক্সার ঘোমটা সরিয়ে আমরা দুজন ভিজে ভিজে সারা হবোনা তাও কি হয় ?তুমি বলতে ,রুদ্মি তোরতো ভিজলে জ্বর আসেনা। কিন্তু আমার আসে। কি হবে তখন ?আমি অনেক অনেক হাসতে হাসতে বলতাম ,আসুক। জ্বরের ও গন্ধ আছে।নেবো তোমার থেকে।
রাজকুমারী মা আমার ,
সেদিন কি জ্বর ছিলো তোমার ?অনেক কষ্ট হচ্ছিলো ?অনেক গন্ধ ছিলো জ্বরের ?আমায় ডাকছিলে কি তুমি ?অত দূর থেকে তুমিকি আমায় ডাকছিলে ?গন্ধ নেবার জন্যে ?আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে মা।



                                                                                                                                            

1 টি মন্তব্য:

  1. তোমার অভ্যেস একরাশ ভেজা চুল নিয়ে গাড়িতে ওঠা।জানোতো ওই চুলে আমি কুয়াশার গন্ধ পাই।হাসি আবারো। কুয়াশার বুঝি গন্ধ আছে ?কতবার যে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি জানা নেই।কুয়াশা আর ধূপের গন্ধ অনেকটা একই।
    যেদিন প্রথম তুমি ভেজা চুলে উঠলে গাড়িতে ,তোমার বোঝা উচিত ছিলো ওটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তোমার ভাবা উচিত ছিলো আমার ঘ্রানেন্দ্রিয় অন্তত তোমার ব্যাপারে বড্ড সবল।তোমার বোঝা উচিত ছিলো ওই তীব্রতা নিয়ে তুমি চলে গেলে কোথাও একটা কিছু অঘটন ঘটে যাবে।
    excellent romantic.............

    উত্তরমুছুন