বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ৫


শুয়েছিলো। আমার খুব ভাবতে ইচ্ছে করছিলো শুয়েই আছে। আমার ভাবতে ইচ্ছে করছিলো উঠেই আমাকে ডাকবে। আমি জেগে ওঠাটা দেখতে চাইছিলাম। প্রাণপণে ওই অপার্থিব হাসিমুখের প্রতিক্ষায় ছিলাম।কিন্তু কেমন অদ্ভুত শুয়েছিলো।

আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। ঠোঁট শুকিয়ে আসছিলো। আমি শব্দ করার প্রানান্ত প্রচেষ্টায় ছিলাম। পারছিলামনা।যা ঘটছিলো সেই ঘটনার মোড় ঘোরানোর চেষ্টায় ছিলাম। আমার কেবলই মনে হচ্ছিলো ওটা একটা গল্প হউক। আমার হাতে একটা পেন্সিল থাকুক।মুছে মুছে ওই গল্পের মোড় ঘোরাবো। কিন্তু বারেবারে ব্যার্থ হচ্ছিলাম। গল্পের শেষটা প্রতিবারই একইরকম হয়ে যাচ্ছিলো। আমি কাউকে ডাকতে চাইছিলাম কিন্তু কোনো শব্দ করতে পারছিলামনা।
আশ্চর্য ধরনের কষ্ট তো। এই মুহুর্তে কেও আসেনা কেনো ?আমি  কিভাবে এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে বেরুবো ?
আমার মস্তিষ্কের একপাশে একা শুয়ে থাকা মানুষটা, অন্য পাশে গল্পটাকে ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা।দুটো অদ্ভুত অবস্থা একইসাথে বহমান। আমি কিছুই করতে পারছিলামনা ।
পরপর চারবার এভাবেই।একসময় আমার ভেতরটা ক্লান্ত হয়ে পড়লো যুদ্ধ করতে করতে।গলার ভেতরটা খুব তৃষ্ণার্ত লাগছিলো।কেমন ভয় করছিলো।
শ্বাস প্রশ্বাস দেখে নিলাম। এইতো পিঠের জায়গাটা ওঠানামা করছে।আমিকি তবে ভুল দেখছি ?আমি কি
ডাকবো ?আমি চাই চোখ মেলে একবার আমাকে দেখুক। একবার।তাহলে আর যেতে পারবেনা।পারেনিতো কখনো। 
কি অসহনীয় অনুভূতি।কি আশ্চর্য আমি অনুভব করছি নেই।কিন্তু এত বিচ্ছিরি ভাবে তো যাবার কথা নয়।এত সোজা নাকি ?এভাবে কেও  যায়  নাকি ?যেখানে যাচ্ছো আর ফিরতে পারবেনা তো।তোমার চোখ আমার আগে কখনো বন্ধ হতে পারে নাকি?আমিতো সেই ছোট বেলা থেকে আমার আগে কখনো তোমায় ঘুমুতে দিইনি।আমার চেয়ে তুমি বেশি ঘুমোবে তাও আবার হয় কখনো?

দুঃস্বপ্নে সঙ্গী কেনো থাকেনা যে আমার স্বপ্নটাকে পাল্টে  দেবে?অথবা আর ঘুমুতেই দেবেনা।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো কোনো স্বপ্নেরই কোনো সঙ্গী থাকেনা। স্বপ্ন বড় নিঃসঙ্গ।
মস্তিস্ক যা ভাবে ,যা দেখতে চায় তাই স্বপ্ন হয়ে আসে। তাহলে স্বপ্নে সত্যি যাকে দেখতে চাই সে এতো অল্পক্ষণের জন্যে কেনো আসে ?
আর যে স্বপ্ন ভাঙ্গতে চাই সেই দুঃস্বপ্ন এত দীর্ঘ কেনো হয়?
আমি যতবার স্বপ্ন টা পাল্টাতে  চেয়েছি ততবারই সে তার নিজের মতই এগিয়েছে। আশ্চর্য !আমি যেন স্বপ্নের হাতে বন্দী।

তুমি যখন পাশে ছিলে এই দুঃস্বপ্নের পর আমি নিজেই নিজেকে বকতাম। এই দেখ রুদ্মিলা। মা আছেতো। আমি স্বপ্নের ভেতরেই তোমায় আটকাতে পারিনি।সত্যি তেও না। তুমি কি চলে যাবে বলেই এত ভালবেসেছিলে?
 
আজ তোমায় খুঁজলাম মা। পাচ্ছিনা।আমি চাই তুমি আগের মতন আসো। প্রতিদিন প্রতিরাত। আমার ঘুম দরকার নেই মা। তুমি এসো। আবার গল্প হবে। তুমি জানতে চাইবে কি রান্না হয়েছে।কোথায় কে আমায় কি কষ্ট দিলো। আমার খুব দম বন্ধ লাগছে মা.আমি অনেকদিন তোমার গন্ধ পাইনা। আশ্চর্য এভাবে বাঁচা যায় নাকি ?আমি রুদ্মিলার স্বপ্ন নিয়ে আর লিখতে পারছিনা মা। আমি ধীরে ধীরে তোমায় ভুলে যাচ্ছি। আমি তোমাকে এভাবে চাইনা মা।আমি আজীবন অসুস্থ থেকে যাবো তবু আমি তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চাই মা।আমি ওই স্বপ্ন গুলোতে তোমায় বাঁচাই ,প্রতিদিন।তুমিতো কোত্থাও নেই।আমার স্বপ্ন গুলোতেও থাকবেনা ?আমার স্বপ্ন গুলোকে সবাই দুঃস্বপ্ন কেন বলে মা ?

অনেক রাত মা ,সবাই ঘুমে। তুমি এসো মা। আমি জানি আজ তুমি আসবেই।খুব কষ্ট হচ্ছে মা।বাচ্চার কষ্ট হলে মা পাখিরাই চলে আসে আর তুমিতো মানুষ মা আমার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন