বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪

তুমি আর আমি

আমিতো আমার নিয়মেই আছি।
একটুও পাল্টাইনি তো।
তোমার এত ভালো লাগছে কেনো ?
কারণ আমি যে তোমার স্বপ্নের মতো।
আর আমার  এতো ভালো লাগছে কেনো ?
কারণ তুমিও যে ঠিক আমার স্বপ্নের মতো।

বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

শহর





ইট ,কাঠ ,সুরকির যান্ত্রিক এ শহরে
আকাশ'টা প্রতিদিন লুকোচ্ছে কোথারে ?

পাখিগুলো অস্থির খুঁজে চলে বৃক্ষ
হারিয়ে ছোট্ট নীড়  দুরু দুরু বক্ষ।

একটু সবুজ ছুঁতে প্রাণে ভারী ইচ্ছে
বিবর্ণ চারিধার; সবুজ হারাচ্ছে।

জল কোথা জল কোথা খুঁজি নদী সাগরে ,
ঝর্নার সন্ধানে চোখ যায় পাহাড়ে।

মেঘেদের কানাকানি পাহাড়ের মৃত্যু
আর যে হবেনা দেখা বৃষ্টির নৃত্য।

নিশ্বাসে বায়ূ নেই ,ধোঁয়া শুধু ধোঁয়া ,
বিশ্বাস কালো হয়ে খুন হয়ে যাওয়া।

যান্ত্রিক শহরের যন্ত্র জীবন
পালাচ্ছে প্রতিদিন ক্লান্ত এ মন।

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

যাযাবর


“যে দৃষ্টির সঙ্গে মনের যোগাযোগ নেই সে তো দেখা নয়, তাকানো।”

বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

'চরিত্রহীন'

"যাহাকে ভালবাসি, সে যদি ভাল না বাসে, এমন কি ঘৃণাও করে, তাও বোধ করি সহ্য হয়, কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছি, সেইখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুণ। পূর্বেরটা ব্যথাই দেয়, কিন্তু শেষেরটা ব্যথাও দেয়, অপমানও করে।"
শ্রী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

সোনা বউ





টুকটুক লাল বউ
বসে জুড়ে পালকি
মিঠে মিঠে স্বপ্ন
রয় তার চোখে কি ?

ফুলখোঁপা কালো চুল
আছে বেলী হাসনা ,
সুবাসেতে ভরপুর
বলে দূর যাসনা।

হাতভরা চুড়ি তার
ঝনঝন বাজছে ,
ভালোবাসা ভালোবাসা
হৃদয়েতে নাচছে।

ভীরু ভীরু দুটি চোখ
কাজলের কন্যা ,
কখনো অশ্রু সেথা
কভূ হাসি বন্যা।

লালে লাল আলতা
পায়ে মল ঝমাঝম ,
হঠাত আকাশ জুড়ে
মেঘ কালো থমথম।

সোনা বউ ,সোনা বউ,
ডাকে তার বর'টি ,
একটুও ভয় নেই
আছি ধরে হাত'টি। 

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

রাত্তির




পথ তার ছেয়ে আছে আমলকী জারুলে
গাছ যেনো কথা কয় ঝিঙেফুল পারুলে।
পাখিগুলো উড়ে উড়ে যায় কোথা খেয়ালে
ফিরে ফিরে ঘুরে ঘুরে আসে বেলা ফুরালে।

বধূ হেঁটে যায় দূরে পায়ে মল ঝমাঝম
কলসীর জল সাথে সুর তোলে সারাক্ষণ।
চুলে তার গন্ধের রাজা আছে লুকিয়ে
মৌমাছি মধু  যাচে যেন সেথা চুপিয়ে।

দূরে ওই আকাশটা ঘুমিয়েছে পাহাড়ে
সন্ধ্যের পিছু পিছু রাত নামে আহারে।
সাদা সাদা রূপো রূপো ঝরে পড়ে জোছনা
রাত্তির সেজে চলে নানা রঙে বর্ণা।

হাওয়া এসে ছুঁয়ে যায় থেকে থেকে শরীরে
মহুয়ার গন্ধ লুকোনো যে গভীরে।
সুখ সুখ ঘুম নামে দুচোখের আড়ালে
চাঁদখানা উঁকি দেয় মেঘখানা সরালে।









সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

স্বপ্নকন্যা











মেয়েটির শাড়ী নীল
আকাশের সাথে দেখা।
চোখের কোণেতে সবুজ
বৃক্ষের ছবি আঁকা।

আলতাবরণ হাত
যেনো টকটকে জবা লাল।
গভীর তাহার চুলের ভিতর
আঁধার তুলেছে পাল।

আঙুলেতে স্বর্ণলতা
সূর্যের রং যাচে।
নখের ডগায় রুপোলী ইলিশ
মোহনার স্রোত খোঁজে।

গ্রীবায় তাহার শান্তির ছোঁয়া
ডাহুক জিরায় সেথা।
কমলালেবুর ঠোঁটের মায়ায়
সরিছে দুঃখ ব্যাথা।

অঙ্গে অঙ্গে জোনাকির আলো
গাঁথিছে আলোর মালা
দেখিতে দেখিতে বুঝিনা কখন
ফুরায় যে মোর বেলা।

রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

জলের মেয়ে ১০





অন্যরকম মেঘের গায়ে
অন্যরকম রঙে
আসলে তুমি ভালোবেসে
অন্যরকম ঢঙে।

সেই মেঘেতে জারুল রঙের
স্বপ্ন আছে মাখা ,
সেই স্বপনে দিন রাত্তির
তোমার চোখে আঁকা।

সমুদ্দুরের জলের থেকে
নয়তো সে মেঘ সৃষ্টি ,
সুখ গুড়গুড় শব্দ সেথা
নেইতো ব্যাথার বৃষ্টি।

পানার ফুলের বেগুনী রঙে
অন্যরকম সাজে ,
জলের মেয়ে সাজবে নাকি
ঢাকবে ও মুখ লাজে ?

তারার ফুল





ঝিলেতে জলের কণা চিকচিক করে
সাদা বক খোঁজে মাছ যেনো চুপিসারে।

পদ্মপাতার পরে জমেছে শিশির
কুয়াশার সাথে তার সন্ধি নিবিড়।

ফিঙেদের নাচানাচি নয়ন জুড়ায়
পাকা ধান নিয়ে বধূ ঢেঁকিতে মাড়ায়। 

ঝকঝকে সাদা রোদ রুপোলী আকাশ
গায়ে'তে  দিচ্ছে দোলা পূবের বাতাস।

মৌমাছি দলছুট মাঠের পরে
গাছি ভাই নিয়ে রস ফিরছে ঘরে।

ঝাপসা সন্ধ্যা এসে নামলো হঠাত
চুপিচুপি জানালায় জোছনার রাত।

ফুটেছে তারার ফুল আঁধার গাছে
মাটির বুকেতে তার সুবাস নেমেছে।


বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৭

প্রিয় রূপচাঁদা
অন্ধ হবার আগের গল্প,নগ্ন হবার পূর্বের সম্ভাবনা ।

রাধা’র শরীর জ্বলছেনা,চিতায় উঠানোর পরেও তার বুক থেকে নি:স্বরণ হচ্ছে বরফের সুবাতাস।নীত আগুনের কাছে এসে কৃষ্ণের বিনীত প্রশ্ন, কেন এই স্ব >অর্থ> পরতায় পষ্ণভূত একত্রিত! আগুনের সেকি গুণ প্রভু,স্বয়ং তাপ আর তীক্ষ্ণতার আধার হিসাবে আপনি কৃষ্ণবর্ণা,কলেবর থেকে উচ্চারিত ধ্বনি এই রাধা।ধারাকে উল্টে দিয়ে যিনি ফিরিয়ে নেন সকল চিৎশক্তির বিকিরণ। উৎসে ফিরে গেলে আলো, আমি অন্ধ হয়ে যাই।
দৃষ্টির বন্দনা তবে শুরু হোক এবার ।
সৃষ্টি থেকে হারিয়ে গিয়েছে স্রষ্টার সফেদ কবুতর। চিহ্নহীন গতি নিয়ে সর্পিল আলোয় এঁকে দিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির মানচিত্র। অরুপ ও রূপের বাইরে যদি কোন মানবমানবী দাঁড়ায়,তারা খুঁজে পাবে সেই পখ,পাথেও উভয় ঋতু।স্রাবে ও শ্রবণের টানে জেগে ওঠা সামুদ্রিক চর।
কে আছে ঐখানে! দিগন্ত না দিকশূন্য সবুজ শষ্যের পাহাড়! তার ওই  পাশে কুম্ভকর্ণের ফিসফিস।কাগজী পত্রের থেকে, বৃক্ষ থেকে ফলিত বর্ণমালা।তোমার আঙ্গুলের নিচে চেপে রাখা খবরের ইতিকথা।

কি আছে এইখানে?
দৃশ্যত যা কিছু উড়ন্ত  ছিলো বেলুনের মতো, ত্রিশঙ্কুর মতো বোধ ঝুলছিলো বেহাল চৌরাস্তায়,গন্তব্যের বিপরীতে হেঁটে  আসা নীল প্রজাপতিই অবশেষে প্রজাহীন রাত্রি যাপনের ইতিহাস গড়ে।
উভয় চক্রের বিপরীতে ছিলো একটা উপত্যকা;
যার অতল দিয়ে ধাবমান মহুয়ার রসায়ন;
মাতালের ঐতিহ্য,আর উলঙ্গ রাত্রির ছাদে হেঁটে বেড়ানো কয়েকটি গোল্ডফিস।
মাছগুলো দালির ক্যানভাসে মেটামরফসিস। উড়ন্ত বালিহাঁস। হঠাৎ আচমকা বাকসদৃশ তুলির জবান:
‘আসো, পান করি,ঘনিষ্ঠ স্বপ্নের থেকে বেছে নেই অমৃত জল। সারাবান তাহুরা। বুকের ভেতর থেকে চিরন্তনী ওম;
নখ থেকে নীল বিষ টেনে নিয়ে পান করে নীলকন্ঠ তোমার মানচিত্রহীন পথের দিকে দেবে উড়াল;
সেই মাছ স্রোতের বিপরীতে গতির বিপরীতে আচমকা ঢুকে গেল জালবিস্তৃত কূপে;
আমি সেই আতিথিয়েতার জন্যে দাঁড়িয়ে  আছি বিনীত। আমাকে গ্রহণ করো আর নিজস্ব গৃহে রাখা যতনের প্রসাদটুকু দিয়ে আপ্যায়িত ,,,’

এরপর আর মাছটাকে দেখা যায়নি মিঠাপানির সংসারে;
কেবল শীতের আকাশে একটা হলুদ পাখির ডাক শোনা যায় !

ইতি
তোমার পাখি

মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৪

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৬

প্রিয় রূপচাঁদা,
 
উর্দ্ধারোহনের উপলব্ধিতে আমি পৌঁছে গেলাম আজ।

পৃথিবী থেকে যখন আমার পদযুগল শুন্যে উঠে যাচ্ছিলো তখন আমার প্রিয়বন্ধুরা অর্থাৎ মৌমাছিকূল ভাবছিলো আমি বুঝি মধুর সন্ধানে যাচ্ছি! 

ওরা আমার পিছু নিলো।
 
পিপিলিকারা ভাবছিলো মর্ত্যের  আগুনে আমার আর  চলছেনা,

অতএব সূর্যের আত্মাতে আত্মাহুতি দিতে চলেছি আমি,
ওরা আমার পিছু নিল;
 
বৃক্ষরা ভাবছিলো উর্দ্ধাগমনের ফলে সমগ্র আকাশ আমার দখলে চলে যাবে;বটবৃক্ষগুলো তাই মাটি থেকে নিজেদের শেকড়চ্যুত করে ডালপালা সমেত আমার পথ আড়াল করতে চাইলো;


বৃহৎ প্রতিভারা ভাবলো আমি যদি ঈশ্বরের থেকে দু’য়েকটা কালিদাস বধ করা বর পেয়ে যাই; যদি আমি উজ্জল দুপুরে প্রসব করি সন্ধ্যাকাব্য নামক কোন রাজপুত্তুরের; প্রতিভারা আমার জামাকাপড় টেনে খুলে ফেললো;
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যে কিনা স্বাধীনতার পয়গম্বর,আমার উর্ধারহণ দেখে ভেবে নিলো আমি বুঝি হতে যাচ্ছি রাষ্ট্রকে তুচ্ছ করা পৃথিবীর প্রথম নিজের অধীন নাগরিক;

 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার চক্রাবৃত্তের উর্ধারহণ দেখে  ভেবে নিলো যেন আমিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হ’তে যাচ্ছি এই ব্রহ্মাণ্ডের;

 
সকলের ধারনাকৃত লক্ষ্যবস্তু অতিক্রম করে আমি যে কেবল তোমার বর্ধিত নখের নেইলপলিশ হ’তে চেয়েছি অনুমান দ্বারা কেহই সেসব বুঝতে পারেনি!
আমার লক্ষ্যবস্তু যে আমার সামনে বসে শব্দব্রহ্মপাঠ করছে,
আমি তার কাছে গেলেই যে সকল জায়গায় যাওয়া হয় আমার ।-প্রাণীকূলের এই বিষয় অনুধাবনে পৃথিবীর মতো প্রদক্ষিণ করতে হবে তোমার ক্রিয়াকলাপ।
জীবজগতের অগোচরে তুমি যে ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র হয়ে উঠছো এ সংবাদ আজ আমারই গর্ভে জন্ম নিলো কেবল।

কতিপয় বর্ণমালা ব্যাতিত সবার কাছেই  এযে অধরা সংবাদ।


প্রিয় মাছ ,
কোনো শিল্পের সমূখে তুমি দাঁড়িয়না স্থির। 
আমি উন্মাদ হয়ে যাবো।

ইতি তোমার পাখি

রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৫










প্রিয় রূপচাঁদা
একটা বৃহৎ গোলকের ভেতর মনোভূমি নৃত্য করে বেড়াচ্ছে। পৃথিবীর মানচিত্রের ওপর আলতো পদচ্ছাপে সৃষ্টি হওয়া সামুদ্রিক গতিপ্রকৃতি যেন হঠাত করেই আবিস্কৃত স্রোতের শীতল প্রবাহমানতা । আশ্চর্য্ ঐ অধরের মাঝ দিয়ে ধাবমান রেখার সংলাপ যেন ক্রমশ সমান্তরাল রেখা থেকে তীরের মতো বেঁকে গিয়ে পৃথিবীকে আরো বেশি নিকটতম করে তুলছে। ভেবে দেখো সম্মুখস্থ এই সংযোজন  ক্রমশ: পশ্চাতের বিয়োজনের মধ্যে দিয়ে যে মানচিত্র দাঁড়াবে একদিন ,তখন ফিরে আসা ডাহুকগুলো নিজেদের আবাসস্থল খুঁজে পাবে না, মাটির তলদেশ থেকে জেগে ওঠা উঁইপোকা খুঁজে পাবে না আকাশ । ল্যুভ মিউজিয়ামের পেইন্টিংগুলোর রেখা মুছে গিয়ে সাদা ক্যানভাস ঝুলবে অনর্থক।
ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে কেবল একটিই রেখা দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করবে,সে তোমার হাস্যজ্জল প্রতিবিম্ব ছাড়া আর কিছু নয়।


ওই গালের টোলের ভেতর,ওই বৃহৎ গোলকের ভেতর আমি হারাতে চাই।
ইতি
তোমার পাখি

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৪

প্রিয় রূপচাঁদা
তুমি কেবল একটি সভ্যতার নামই নও;অপরাপর সভ্যতার সারসংক্ষেপও বটে।
 
হে ভগবতী,
আমাকে অনুমতি দাও,তোমার পৃষ্ঠা উন্মোচনের অনুমতি দাও,অক্ষরের ওপরে জমে থাকা বরফের ইতিহাস সরিয়ে তোমাকে পাঠ করি শুদ্ধভাবে। যথার্থভাবে তোমার নামের উচ্চারণের মধ্যেই রয়ে গেছে ধ্বনির ফজিলত।
যখনই আমি সেই ধ্বনিকে উচ্চারণের প্রস্তুতি নিচ্ছি,তুমি তখন ধ্বনির কেন্দ্র থেকে এসে দাঁড়ালে আমার মুখোমুখি।
আমি কি একটা সভ্যতার মুথোমুখি দাঁড়ানোর যোগাভ্যাস করেছি! আমাকে কী তুমি যুক্ত করে নিয়েছিলে এই ঘটনার পূর্বে।
তীব্র আলোর মুখোমুখি দাঁড়ানো বর্ণমালার মতই অসহায় হয়ে গেলাম।সকলের পাঠ থেকে বিরতী দিয়ে আমাকে তোমার অক্ষর করে নিলে অতর্কিতে।

একটা আবছা আভাও আজ অবশিষ্ট নেই! তোমার চোখে কাজলের রসায়ন ছাড়া আমার ভিন্ন কোন অস্তিত্ব আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
প্রিয় রূপচাঁদা ,
ওই চোখে তাকিয়োনা আর। 
ওই চোখে তাকিয়োনা তুমি।

পাহলভী পাখির পাগল কথা ৩










প্রিয় রক্তজবা
তোমাকে আমার রূপচাঁদা বলেই ডাকার কথা ছিলো। আমাকে এ্যাতোটুকু করুনা করো আজ।আমি তোমার দেয়া নামটা ধরেই ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজ আমি যে রক্তের মুখোমুখি হয়েছি সেই রক্তের নিজস্ব কোন রূপ নেই। কিন্তু একটা রূপাভাস আছে! যেমন এই সমস্ত কার্বনসত্বা একটা রূপাভাস মাত্র। অথচ সেই রূপাভাসও তার নিজস্ব অস্তিত্ব হারিয়ে একটা জবাসদৃশ ফুলের কাঠামোতে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি স্বয়ং সেই কাঠামোর জন্যে যে অপেক্ষা করেছিলাম এমন নয়, আমি নামক কোন সত্বা এইখানে কাজ করে নাই। আমার কোন সত্বার নিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে এই কাঠামো হাজির হয় নাই। এই সত্বা আমার পরাশাব্দিকস্তর থেকে পশ্যন্তি হয়ে এমনভাবে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ,আমি যেন প্রবেশ করবো আর তার প্রত্যাগমনের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে নিয়ে এগিয়ে চললো লক্ষ্যবস্তুর দিকে, যেভাবে প্রেমিকারা তাদের নিজেদের উপরে একটা ব্যবধানের আভা দিয়ে নিজেদের অদৃশ্য করে মিলনের একেকটা ধাপ অতিক্রম করেন।



রক্তজবা ,
ঐ আভাসত্বাও তুমি নও,তুমি শেষ পর্যন্ত রক্তজবায়ও থাকোনি! আমি সেই বিস্ময়ের গল্পটা বলার দাবী নিয়েই তোমাকে রক্তজবা ডেকেছি যেন আমরা আমাদের পরিচয়ের চিন্হ থেকে নিজেদের পরিচয়ের অস্তিত্বে নিয়ে যেতে পারি!
তুমি ঠিক ঐভাবেই আমার সামনে এসে দাঁড়ালে যেভাবে বিজ্ঞানীরা ব্লাকহোলের তত্বের সামনে দাঁড়ায় ! বিজ্ঞানীরা কি কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন? না পারেননি,কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করার অর্থই হচ্ছে আদিতে ফিরে যাওয়া। রূপান্তর ক্রিয়ার প্রজনণের উতসে ফিরে যাওয়া। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে কৃষ্ণগহ্বরের অভিকর্ষকে অতিক্রম করে কিছুই বের হতে পারে না, আমি সেই কৃষ্ণগহ্বর, সেই রক্তজবার ভেতরে প্রবেশ করলাম। তারপর আমি রূপান্তর ক্রিয়ার অংশ হয়ে গেলাম। আমি সেই রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে আদিতে পৌঁছে গেলাম। কি সেই আদি? স্ব আত্মানং দ্বেধা পাতয়ত। সেল্ফ বা নিজ , নিজেকে দুই করলেন। নিজেকে দুই করার সময় যে শব্দ হলো সেটা পত্ উচ্চারণের মতো। সেই পত থেকে পতি। অর্থাত সেল্ফ জায়া থেকে পতি বানালেন। আমি আমার জায়ার সাথে মিশে গেলাম। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে কৃষ্ণগহ্বর থেকে যে বস্তু ছিটকে বের হতে পেরেছিলো সে হচ্ছে একটুকরো বিচ্ছুরিত আলো। সেই আলো এক্সপাণ্ড করে করে জগত সৃষ্টি করেছে।তুমি লক্ষ্য করো সেই সময়ের কথা,যখন আমাকে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে,সেই সময়টার কথা যখন আমি কৃষ্ণগহ্বর থেকে ছিটকে পড়া সেই আলোটার মতো। আমি সেই আলো,যে তার জায়ার স্বরূপ দেখেছে,কিন্তু জায়ার সত্বার সাথে মিশে থাকতে পারে নাই। আমি সেই আলো...
সেই আলো সকাল বেলার বালকের দৃষ্টির মতন অনির্দিষ্ট পথ থেকে ছুটে আসা ঘুড়ি। জ্বলজ্বল করছে সবুজ সংকেতের উপর লাল রক্তজবা। ঈশ্বরের উপদেশাবলী জমে জমে ধর্মগ্রন্থের মতো শীতের শিশিরের বিন্দুরূপ জমে জবার পাপড়িতে ব্রহ্মাণ্ডের সকল জবার স্মারকচিহ্নের প্রতিবিম্ব। আমি সেই প্রতিবিম্বের ভেতর রূপান্তরের সাক্ষাত পেয়েছিলাম। রূপান্তরের সাক্ষাত পেয়েছিলাম সূর্যের মতো বহুমাতৃক বহুনামের সারসংক্ষেপ। দিবাকর,রবি,ভানু গো,ইত্যাদি। হে আমার সৌন্দর্য্যের  স্বাক্ষ্য, তুমি ঠিক ইংরেজি সান অর্থে সূর্য নও, তুমি নানান সুরতে হাজির হওয়া উজ্জলতা। এবং এইভাবে দেখলাম তোমার মধ্যে দৃশ্য থেকে দৃশ্যে, অদৃশ্য থেকে অদৃশ্য দৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তুমি বহু থেকে একক হয়ে গেলে, একক থেকে এক হয়ে একটা সকাল বেলার সূর্য হয়ে গেলে খুব সচেতননভাবে কপালে সেঁটে রাখা টিপেরই মতো।এইভাবে মর্তে কীভাবে বহুর মধ্যে নিজেদের একাত্ম করে ফেলা যায় এটা একটা পুরাণ হয়ে গেলো।ঐতিহাসিকেরা বোধ করি এবার অর্ধনারীশ্বরের জন্য আরেকটা নিদর্শন পেলেন। 

স্ব আত্মা নং দ্বেধা পতি:
প্রিয় রক্তজবা,

শুরুতেই বলেছি তুমি সেই কৃষ্ণগহ্বর স্বয়ং।তুমি একটা সময় নও,তোমার ভেতরে সময় একটা অংশ হয়ে থাকে।তোমার থেকে বিকিরিত সত্ত্বা ভেতরের অংশগুলোকে আকর্ষণের মাধ্যমে কর্ষণ করেন।আমি কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর প্রবেশের সাথে সাথেই কর্ষণের ক্ষেত্র হিসাবে প্রস্তত হলাম। শ্রীকৃষ্ণকীর্তণ যে আমারই ভূমি কর্ষণের চিতকার ধ্বনি পদকর্তারা কি এই গোমট কাউকে ফাঁস করে গেছেন! আমি তোমার দ্বারা কর্ষিত হইনি প্রিয়তমা। আমি তোমার আভা দ্বারা রচনার ভূমিকা হয়ে ছিলাম কেবল। ভুমি মানে তো জমি বা ক্ষেত্র আর কা শব্দের অর্থ কোন জনার? বহুকর্তার পদে পদে আমাকে ছড়িয়ে দিলে শস্যের বীজের মতন। জগতের সকল বৃক্ষই সেই ছড়িয়ে দেয়া তোমার সত্বাভার প্রতিফলন। বলো ,বৃক্ষের কথা না বলে কীভাবে আমি ফুলের কথা বলি! কীভাবে আমি ভূমিকে রহিত করে দিয়ে কোন এক নক্ষত্রের অবরোহনের কথা ভাবি?
আমি যা কিছুই বর্ণনা করিনা কেন সব কিছুই তোমার বর্ণনার অংশ হয়ে আছে। প্রকৃতির সকল অস্তিত্বই তোমার বর্ণনার স্বরূপ ব্যাখ্যা করছে কেবল! আমি নিজেও তোমার বর্ণনার একটা স্বরূপ। তোমার নিজ যখন আমি’র ভেতরে প্রবেশ করে,আর তখনই তুমি আমাকে ডাকো,আমাকে নাম ধরে ডাকো,পাখি বলে ডাকো। আমি সেই পাখি, পাখিই আকাশের কেন্দ্রভূমি। যেমন একটা কম্পাস যেভাবে মাত্র একটা বিন্দু নিয়ে নিজের স্থিতি নিশ্চিত করে কেন্দ্রে ,আর প্রান্তের ডানায় অজস্র বিন্দু। আমি সেই বিন্দু, আমি সেই সমগ্রের অংশ মাত্র। জবার ওপরে নড়ে উঠা জলজকণা।


প্রিয় রূপচাঁদা ,
তুমি আর লাল শাড়ি পড়োনা। লাল চুড়ি তো নয়ই।

শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৪

পাহলভী পাখির পাগল কথা



হে আমার শংখ নদীর মাছ ,


কিরিলিয়ান ফটোগ্রাফি আবিস্কৃত হবার পর আমি ঠিক বুঝে গেছি কেবল প্রাণ হলেই চলবে না,চৈতণ্যই সর্বশেষ কথা নয়,জড়ও হতে হবে,মাঝে মধ্যে অচৈতণ্য হলেও ঈশ্বরের সমান ভুগোল প্রাপ্তী ঘটে।তোমার প্রতি আমার চৈতণ্যই সর্বশেষ কথা নয়,তোমার দৃষ্টি,বাক,বায়োপ্লাজমিক কেশান্টিনা এবং স্পর্শের তরঙ্গবিস্তার সে আমার অধিগত আলয়। তবু এই যে চেয়ারে তুমি বসে আছো,সামনের টেবিল,ক্যামেরার লেন্স স্টুডিওর আলোকসজ্জা হাতের নিচে শায়িত স্ক্রিপ্ট এই সব অচৈতন্য জড়ও তোমার সামষ্টিক সত্তার ধারক তো আমি যেন ঐ চেয়ার,আর তোমাকে ঘিরে থাকা জড় ও অজড় হই,হতে চাই।আমি ঐ আসনটি হতে চাই বা যে পথ দিয়ে তুমি হেটে প্রবেশ করো প্রক্ষেপণালয়ে। আমি ঐ দেয়ালটি হতে চাই যে দেয়াল তোমার পেছনে থেকে গৃহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
কিরিলিয়ান ফটোগ্রাফি আবিষ্কৃত হবার পর জানা গেল সকল বস্তুরই আছে বায়োপ্লাজমিক বডি। যে শ্বাস প্রশ্বাসের ফলে বায়ুর অস্তিত্ব সজাগ,তোমার ঐ এস্ট্রাল বডির সাথেও ঘুরে বেড়াতে চাই সমান্তরাল।
কোনো ফটোগ্রাফি নয়;
আমি স্বয়ং তোমার কিরিলিয়ান হতে চাই।


ইতি তোমার পাখি

মেঘের জন্যে গান ১

জোনাকিরা জ্বলছে
কিছু কথা বলছে
টুপটাপ ঝরছে
রাতের শিশির।
একটুকু ছোঁয়া
হয়নাকো পাওয়া
হয়নাকো ধরে রাখা
বুকের গভীর।

কেঁদে কেঁদে মন বলে
রাত্রি ছায়ায়
মন কি তোমার আর
ডাকেনা আমায় ?
তবু ঝড় ঝরঝর
রোদ্দুর নেই যে
একবার কাছে এসে
ছুঁতে প্রাণ চাইছে।

মেঘ তবু কাটেনা
বিরহবেলায়
ঘুম আর খেলেনা
চোখের পাতায়
তবু মন গুনগুন
কি সুরে গাইছে
একবার ধরা দাও
ছুঁতে প্রাণ চাইছে।





বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

উষ্ণতা

 সৌরবিজ্ঞানের হিসাব মতে পৃথিবীর বুকে সূর্যের উপস্থিতি কয়েক লক্ষ বছরের হয়তো। কিন্তু সেই সূর্য প্রায় চার পাঁচ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে আলো পৌঁছতে পারছে না। এই যে বাধাটা কোথা থেকে ঠিক আসলো সেটা সূর্যেরও জানা নেই। তো আজ সেই সূর্য তার সমস্ত শক্তি খরচ করে পৃখিবীর বুকে তার আলো স্থায়ি করার বাসনা নিয়ে অনেকটা আক্রমনাত্মকভাবেই মহাকাশমণ্ডলের পথ অতিক্রম করে পৃথিবীর পথের ভেতর প্রায় প্রবেশ করবে ঠিক এমন সময় সৌরদেবের আলো যে বাধার মুখোমুখি হলো সে আমার হলুদ পাখির ডানার। সূর্য যতোই আলোর প্রভু হোক না কেন পাখির ডানায় জড়ানো রোদ্দুর আর হলুদিয়ার শক্তিশালী তরঙ্গবিস্তারের মুখোমুখি দাড়াতে সক্ষম হলো না। পৃথিবী আজ অতীব উজ্জল ছিলো।জ্ঞানী আর অজ্ঞানীর ভেতরকার দ্বন্দ্ব,মাঠ আর গুহার আভ্যন্তরীন সংকট কীভাবে মুছে গেলো সে কথা হয়তো ভাববার সময় নেই ঘাসফড়িংয়ের।কিন্তু আমি জানি ঐ পৃথিবী উজ্জল করা আলোকময়তা সূর্যের ছিলো না,ছিলো কেবল আমার সেই হলুদিয়া পাখির নিরব বসে থাকা পালকের নিপুঁন বুনটের। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কাছে এই খবর পৌঁছানোর পূর্বেই প্রেমিকের কাছে বিশ্রাম নিয়েছে এই বার্তা।
আমি তো কেবল আলোই পেলাম প্রিয় হলুদিয়া
উষ্ণতা দেবে কে আমাকে!


মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৪

পাখি আর জলকন্যার ভালবাসা




দূর পাহাড়ের সবুজ কোলে
আকাশ যেথা কথা বলে
সেই সবুজের মায়ার থেকে
উড়াল দিলেম ডানা মেলে।

পেরিয়ে যেতে সমুদ্দুর
মেঘের সাথে দেখা
বৃষ্টি বলে নাওনা আমায়
যেওনাকো একা।

বৃষ্টি জলে লুকোচুরি
কৃষ্ণচুড়ার সাথে
কাকাতুয়া বললে ডেকে
যাচ্ছো কোথায় ছুটে?

হেসেই বলি জানিনাতো
কোথায় পথের শেষ
মনের মানুষ খুঁজতে যেতে
হলাম নিরুদ্দেশ।

এমনি করেই রাত্রি নামে
জোনাক জোছনা
ভাবছি আমি আর কত দূর
নদীর ঠিকানা।

একটু পরেই ভোরের আলো
ঝলমলিয়ে ফোটে 
নদীর জলে মিষ্টি মধুর
খেলায় মেতে ওঠে।

হঠাত জলে মাছের সাথে
একটুখানি দেখা
শুধায় আমায় দেবে কি সেই
ভালবাসা রাখা ?

প্রানটি আমার যেই সঁপেছি
জলের কন্যা মাঝে
বাতাস বলে ওরে পাখি
প্রাণ কি তোমার বাঁচে ?

পাখির সাথে জলকন্যার
ঘর বাঁধা কি হয় ?
বিষন্ন এক ব্যর্থ প্রেমের
স্মৃতিই হয়ে রয়।





সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪

পারবিনা আর কষ্ট দিতে





রৌদ ,
জানলাটাতে একটুখানি
দিতে পারিস উঁকি।
ঠাঁই পাবিনা নিস যদি তুই
পুড়িয়ে দেবার ঝুঁকি।

হাওয়া ,
আসতে পারিস মিষ্টি হয়ে
জানলা খোলা সদাই।
যদি বৈরী হয়ে আসবি তবে
দরজা কিন্তু বাঁধাই।

মেঘ ,
দাঁড়াবি নাকি একটুখানি ?
ছায়াসঙ্গীর মতন ?
বৃষ্টি হয়ে কাঁদাস যদি
ফিরিয়ে দেবই তখন।

ওরে তুই ,
ছিটেফোঁটা ঝাপটা হয়ে 
গ্রীলের ধারেই আসিস।
বন্যা হয়ে ভাসাস যদি
বাইরে পড়েই থাকিস।

আমি ,
ভীষণ স্বার্থপরের মতন
নিতে শিখেছি।
পারবিনা আর কষ্ট দিতে
পণ যে করেছি।

আমার ,
জানলা খোলা সবার তরে
দরজা কভূ নয়।
ফিরে যা যতই মিষ্টি দেখতে তোরা
সবটা অভিনয়।

বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৪

পথিক




থমকে চলা একলা পথে
একলা হেঁটে যায়।
কোন সে পথিক পথের ধূলায়
চিহ্ন রেখে যায় ?

চোখের ভিতর কি জানি তার
স্বপ্ন আছে ভাসা
ঠোঁটের কোণে ক্ষণিক হাসি
করছে যাওয়া আসা।

চলতে পথে ফুল কুড়িয়ে
নেয় সে বক্ষ জুড়ে ।
তৃষ্ণা তবু রইলো অটুট
পথের ধারে পড়ে।

রাত্রিশেষে গানের পাখি
মিষ্টি সুরে বলে ,
পথিক আমায় ভুলোনাকো
পথ ফুরিয়ে গেলে।

চাঁদের আলো ফুরিয়ে যখন
সকাল হয়ে আসে ,
আকাশখানা রঙিন হয়ে
হাতছানি দেয় হেসে।

মধুর হাওয়া লুটিয়ে পড়ে
পায়ের কোলে এসে
ধূলোর কাছে যায় যে বলে
পথ কি তবে শেষে ?

পথিক বলে নেইকো আমার
চলার কোনো শেষ
রইবে যত ফুল,পাখি আর
প্রজাপতির দেশ।









সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৪

জোছনায় বৃষ্টিস্নান




সারি সারি পাহাড়ের আলিঙ্গনে লুকোনো মাটির পথ
শিমুলের চোখ ধাঁধানো লাল পাপড়ি
অথবা 
কখনো কখনো হলদে সোনালু ফুল গুলো মিতালি করেছে রোদ্দুরের সাথে।
আর রোদ্দুর ছুঁয়ে গেছে ছোট্ট নীল বুনোফুল
প্রজাপতির দল বড় উচ্ছল ,
আনন্দে মত্ত।
নাম না জানা অজানা পাতাদের সবুজের ভীড়ে
ঝলমলে সূর্যের মিষ্টি লুকোচুরি।
ওই অদ্ভুত রঙিন পথে আজ আমার পথ চলা
প্রেয়সী আমার রয়েছে দাঁড়িয়ে
হয়নিকো তারে প্রেমের কথাটি  বলা।  

একসারি সবুজ বুনো টিয়ে
দিচ্ছে উড়াল দূর বহুদুর
বিশাল বৃক্ষের গা ছুঁয়ে সোনালী স্বর্ণলতা
যেনোবা পণ করেছে ছুঁয়ে দেবে রোদ্দুর
আধো আলো আধো ছায়ায় নামছে বিকেল
মেঘেদের শুরু হলো বুঝি রঙ চুরি খেলা
একটু পরেই নামবে এসে মিষ্টি গোধুলি বেলা।
এই কি তবে সময় প্রেয়সীর চোখে চাওয়া?
মনের যত  না কথা চোখ চোখে বলে যাওয়া ?

সোনার থালার মতন সোনালী সূর্য নীরবে লুকোচ্ছে পশ্চিমে
খুব হঠাত,একেবারেই হঠাত যেন মিলিয়ে গেল পাহাড়ের মাঝখানে।
বড্ড দ্রুত নামলো আঁধার।
নয়তো কালো ,নয়তো ধূসর রঙ তার
রুপোলি চাদর গায়ে গুচ্ছ গুচ্ছ রুপোলি জোছনায়
রাত্তিরের হাত ধরে পূবের আকাশে একফালি চাঁদ
স্পষ্ট ,বড় বেশি উজ্বল আজ।
বলছে আমায় কোথায় বল প্রেয়সী তোমার লুকিয়ে ?
জোছনার রঙে সাজাবো তারে তারার ফুলটি দিয়ে।
এই কি তবে সময় ?
ওই হাতে হাত রাখবার ?
নিশ্বাসে নিশ্বাসে
বিশ্বাস ভরে নেবার ?

এমনি করেই রাতের আলোয় স্পর্শ করব তারে
কালো মেঘখানা বললো হেসে
ভুললে কি তবে আমারে ?
পাহাড়ের সাথে সন্ধি করেছি
আজকে জোসনা রাতে
নামবে বৃষ্টি প্রেয়সী তোমার
ভিজবে সেই ধারাতে ,
বৃষ্টির সাথে জোছনার হবে আলিঙ্গনের খেলা
প্রেয়সী তোমার বুকের ভিতর আঁকবে কথা না বলা।

সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৪

নীলাম্বরী










আজকে হঠাত নীলচে টিপে
সাজলে কেনো মিষ্টি মেয়ে ?
সমুদ্দুরের নীল কে বুঝি
হার মানাবে এদিক চেয়ে ?

নীলাম্বরী শাড়ির ভাঁজে
আকাশ টাকে রাখলে এঁকে,
বন্ধ হলো আকাশ দেখা
তোমার পানে চেয়ে থেকে।

হঠাত যেদিন চোখ রেখেছি
তোমার চোখের নীলাভ জলে ,
অপরাজিতার মাঠ খানা যে
হার মেনেছে সেই অতলে।

একটুখানি ছুঁতে গিয়ে
হাত রেখেছি কপোল জুড়ে ,
নীল পদ্ম উঠলো ফুটে
শিরার উপশিরার ভীড়ে।

এত্ত সুখের নীলের মাঝে
কষ্ট কি আর ফুরিয়ে গেছে ?
ভালবাসার নীল বেদনা
বলতে পারো কে দেখেছে ?

হারিয়ে আকাশ তোমার মাঝে
খুঁজতে নীলের সমুদ্দুর ,
অপরাজিতার মাঠ টি বলে
বন্ধু তুমি কোন সুদূর ?

বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৪

ভ্রম

মেঘ গুলো সব তুলো হয়ে
নেমেছে আজ কাশের বনে ,
অবাক আমি তাকিয়ে ভাবি
আকাশ কেনো ফুলের সনে ?

কামরাঙ্গা গাছ সবুজ সবুজ
যেই কাছে যাই ছুঁতে গিয়ে ,
হঠাত সবুজ দিলো উড়াল
আরে একি !ওরা টিয়ে।

আঁধার রাত্রি নামলো ভেবে
ডুব সাঁতারে তার মাঝারে
মিষ্টি সুবাস পেতেই বুঝি
নয়কো আঁধার ,চুল আহারে।

রঙিন প্রজাপতি ভেবে
যেই না ছোঁয়া মুখ খানি তার
হারিয়ে গেলো ,পালিয়ে গেলো ,
মানুষ সে যে ,রঙের বাহার। 

বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৪

আগন্তুকের ফেরার আশায়



রাত্তিরের ভয়ঙ্কর শব্দ গুলো
সকালের আলোতে কেমন অদ্ভুত পাল্টে যেতে থাকে।
সারা রাতের কুয়াশায় ভেজা শিউলী ঝরে পড়ে,
আর একখানা পথ হয়ে যায় আগন্তুকের।
আকাশ হঠাত রং পাল্টে নীলের থেকে নীলে গড়ায়।
মেঘ গুলো সব রং চোয়ানো
হাসতে থাকে গোধূলিবেলায়।
অপরাজিতার মাঠ খানা হয় সবুজ থেকে আরো সবুজ।
ওই সবুজে চলতে গিয়ে মানুষ হয়ে হয়না থাকা ,
প্রজাপতির ডানায় চড়ে  দূর অজানায় চলতে থাকা
হঠাত আকাশ পাড়ি দিতে পাখির সাথে যেইনা দেখা
বলে :মৌটুসী নামটি আমার ,
আমার সাথে যাবে একা ?
ভাবছি আমি কেমন করে পাখি হয়ে দেবো উড়াল ,
ঠিক তখনই নদীর কিনার ডাকে আমায় একটু আড়াল
তবেকি আমি নদী হবো ?
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে
ঢেউ এর সাথে হারিয়ে যাবো?
চলতে পথে হঠাত কোনো মাছরাঙ্গা দের রঙের সাথে
আবার কোনো পাখি হয়ে পথ হারাবো 
পথ হারাবো ?
পথের মাঝে শুভ্র শাদা শিউলী যদি ডাকে আমায়
আমি নাহয় ফুলের দেশেই হারিয়ে যাবো। 
হারিয়ে যাবো ?
রইবো পড়ে পথের ধূলোয় আগন্তুকের ফেরার আশায়
রাত্রি শেষে ভোরের আওয়াজ আবার আমায় জাগিয়ে দেবে
পথের ধূলো মাড়িয়ে সে যে আমার পথেই পথ হারাবে।



















ইচ্ছে করে



যখন শিউলী ফোটে পাগল হয়ে
একচিলতে উঠোন জুড়ে ,
শিশির হতে ইচ্ছে করে।

হলুদ সর্ষে মাঠের পরে এলিয়ে দিয়ে
মেঘ কালো চুল 
আমার বড় প্রজাপতি হতে ইচ্ছে করে।

আমের বোলের মিষ্টি সুবাস
যখন ডাকে পথের পথিক
চৈতালি হাওয়া হতে ইচ্ছে করে।

ক্লান্ত গরুর গাড়ি যখন
পার হয়ে যায় ঘামভেজা পথ 
আমার তখন জল খোঁজা চাতক হতে ইচ্ছে করে।

মেঘ গুলো সব পাহাড় খুঁজে
ঠিক যখনই বৃষ্টি নামায় ,
মেঘ্মায়াবী কদম হতে ইচ্ছে করে।

আর যখন তুমি আঁকড়ে ধরে চাদরটা তে
ওম খুঁজে নাও
আমি আর আমার মাঝে থাকিনা।
আমার খুব কুয়াশা হতে ইচ্ছে করে।


বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪

স্বপ্ন আমার





আমি একটা দিন সারাদিন তোর্ কাছে চাই
দিবি ?
ঐদিন টা তুই কেবলই আমারই নাম নিবি ,
নিবি ?
আমার চোখে ঐদিনে তোর্ সকাল হবে ,
হবে ?
ভর দুপুরে স্নানের শেষে চুলের পরশ ছুঁইয়ে যাবি,
যাবি ?
বৃষ্টি ছোঁয়া দারুন বিকেল ,দুজন মিলে এক কাপে চা
চলবে ?
অসময়ের বৃষ্টি যদি শীতের কথা চুপে বলে যায়
শুনবি ?
রাত্রি আমায় নাই বা দিলি
হেমন্তেরই রং ঝরানো সন্ধ্যা নামুক
নামুক ?
শীতের রাতের উষ্ণ আদর নাইবা পেলাম
নাইবা হলো কাশের বনে পাগলা হাওয়ায় লুটোপুটি
একটা শুধু দিন কি আমায় দিতে পারিস আপন করে ?
কেও রবেনা সেদিন শুধু আমি রব তোর্ মাঝারে
যতন করে আদর ভরে আমিই রব তোর্ মাঝারে ?




রুদ্মিলার চিঠি ১১








তোমার ছবি আগে খুব দেখতাম। ইদানিং দেখিনা। মানুষ বোধ হয় কোনো না কোনো একটা সময় কষ্টের থেকে মুক্তি খোঁজে। তোমার ছবি দেখার সাথে অনেক কিছু যুক্ত। মন খারাপ হওয়া ,সাহস হারানো ,আরেকটা মুখ তোমার মত খুঁজে বার করার ব্যর্থ চেষ্টা ,তোমার রান্নার মন ভোলানো গন্ধ আরো কত কি।তোমায় নিয়ে টেনে টেনে দুঃখ বার করে আনাটা অনেকের কাছেই এখন দুঃখ বিলাস। আচ্ছা বলতো ?ওদের কি করে বোঝাই অথবা কেনই বা বোঝাই যে যতক্ষণ না হারায় ততক্ষণ কেও হারানোর কষ্ট বোঝেনা। ওরা বলে জীবন আবার থেমে যায় নাকি কারোর জন্যে ?ওদের কি করে বোঝাই তারিখের পর তারিখ পাল্টানো মানেই জীবনের বয়ে চলা নয়।জীবন থামেনা। কিন্তু তার রূপ ,রস, গন্ধের থেমে যাওয়াতো আছে।


তোমায় আজ খুব চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করছে ,,,,শুধু তোমায় ভালোবেসে আমি একটুও ঠকিনি জানো ?দ্বিগুন তিনগুন ফিরে ফিরে পেয়েছি কেবল।
জানো ,আজকাল ভালোবাসতেও ভয় করে।মানুষ যেন কেমন হয়ে গেছে।একটু বেশি ভালোবেসে ফেললে ভেবে নেয় নিশ্চয়ই কিছু একটা কারণ লুকোনো আছে।
 শুধু একজন তুমিই ছিলে যার কাছে কথা বলবার আগে আমার দশবার ভাবতে হয়নি।যেভাবে যে কথাই বলেছি সব কথাতেই তুমি যেনো ভালো কিছু খুঁজে নিয়েছো। তুমি কেনো এতো অদ্ভুত করে আমায় বড় করেছো ?একটুখানি এই পৃথিবীর সাথে চলার মতন করে গড়ে তুলতে ?

একবার একটা  ফ্রিজ বাড়ি থেকে বার করে দিতে হচ্ছিলো। নষ্ট হয়ে গেছিলো বলে।তুমি খুব কেঁদেছিলে। আমি বড় বড় চোখ করে জানতে চেয়েছিলাম ,ফ্রিজের জন্যেও মানুষ কাঁদে ?তুমি কি  বলেছিলে  মনে নেই।শুধু মনে আছে আমরা প্রায় প্রায়ই ওই ফ্রিজ টা নিয়ে গল্প করতাম।তোমার একটুখানি মনটা উদাস হত। একদিন হঠাত বললে:ফ্রিজ অকেজো হয়ে গেছে ফেলে দিয়েছিস। মানুষ অকেজো হয়ে গেলে কি করবি রুদ্মি ?'

মা ,অকেজো হয়ে যাবার ভয়েই কি এত সুন্দর করে চলে গেলে ?
আজ তুমি শুধু আমায় বল ফ্রিজ টার জন্যে কষ্ট লুকোতে পারোনি।তুমি ,আমার একটা মা এর চলে যাবার কষ্ট আমি কি করে লুকোই ?এও কি দুঃখ বিলাস বলতো ?

                                                                                                                                              

বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

ভূত






সাদা ভূত ,কালো ভূত ,আম ভূত ,জাম ভূত ,
কত ভূত আছে ওই শ্যাওড়া গাছে।
কোনো ভূত আসবেনা যদি তুমি প্রতিদিন
পড়তে বস এসে মায়ের কাছে।


অশ্বত্থ নাম ওই গাছটার জানোনাতো
চেনোনাতো এখনো যে বটের ঝুরি ,
পাখিসব সারাবেলা খেয়ে লাল বটফল
রাত্তিরে প্যাঁচা ভয় দেখায় ভারী।


ওরে তুই কার ছেলে ?আমার তো কভূ নয় ?
বুকেতে সাহস ভারী ,নেই কোনো ভয় ?
ভূতেদের সাথে চলে সারারাত কথা মোর
দেখে তবে দৌঁড় ঝাপ দিবি নিশ্চয়ই।


তবে তুমি ভূতেদের বন্ধু হলে কি মাগো ?
ভয় কেনো পাবো আর মাঝরাত্তির ?
যখনই আসবে ভূত ,ডাকবো তোমায় আমি ,
গল্প জমবে খুব ভয়ে তিরতির।


শোন তবে ছোট খোকা ,পড়ালেখা কর যদি ,
হয়ে যাস বড় কোনো ভালো ডাক্তার ,
ভূতেদের পেটেব্যাথা ,চোখেব্যাথা ,কানেব্যাথা ,
নেই কেউ এতো ব্যাথা সারাবার আর।


সত্যি বলছো তুমি ?দুঃখে কি আছে তারা ?
ডাক্তার নেই বলে শ্যাওড়া গাছে ?
এক্ষুনী তবে চলো বসছি বইটি নিয়ে ,
পড়া শেষ করবোই তোমার কাছে।

মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৪

রঙ








পাতাদের কাছে রঙ ছুঁতে গিয়ে দেখি
কচি সবুজের অদ্ভুত এক রঙ
শুধায় তাহারে বিস্ময়ে এই মন
কোনটা আসল?নুতন না পুরাতন ?

আকাশের দ্বারে যেইনা পেতেছি হাত
বললে হেসে ,কোন রঙ তুমি নেবে ?
গোধুলী বেলায় রঙে দের উচ্ছাসে
অদ্ভুত কোনো ধাঁধায় পড়ে যে রবে।

ফুলেদের সাথে এইবার করি ভাব
কোন রঙ নিয়ে ভাসাবো আমার হাত
সন্ধ্যামনির সিঁদুর মাখানো রঙে
কৃষ্ণচুড়ার লালে লালে সংঘাত।

জলের রঙে কখনো নীলের বাহার
কখনো সবুজ ছুঁয়ে যায় অবহেলে
যখনই যে রঙ দিয়েছি জলের পরে
সবকটা রঙ আপন করে যে নিলে।

পাখিদের সাথে আজকে আমার খেলা
জমেছে ভীষণ মাছরাঙ্গা দের সাথে
সবুজ টিয়ে বা পানকৌড়ির মেলা
নেবেকি আমায় দূর আকাশের পথে ?

প্রজাপতিদের ডানা গুলো দেয় ছুট
ঘাসফড়িং এর সবুজের সাথে মিশে
মানুষ আমি আমার তো নেই রঙ 
নাওনা আমায় তোমাদের ওই দেশে।







রুনুর আর দরোজা খোলা হয়না

বাড়িটা ছিলো রাস্তার খুব কাছেই।
সমস্ত রাত্তির অদ্ভুত সব শব্দ ,
কখনো বাসের বিকট আওয়াজ,
অথবা কখনো সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন।
মাঝে মাঝে রিক্সার কিছু টুং টাং শব্দ ও
সে যখন নিঃশব্দ প্রায় রাত্রি নেমে আসতো তখন।
ধুপধাপ ছিনতাইকারীর দৌঁড়ে কতো যে ভেঙ্গেছে ঘুম !
মাঝেমাঝে বড্ড অসহ্য লাগতো।
ঐ যে পলাশ কাকার দুরন্ত ছেলেটা?
নতুন বাইক কিনেছে ,
একবার ভোঁ করে রাস্তার ও মাথা
আবার ভোঁ করে গগন কাঁপিয়ে ,ধূলো উড়িয়ে ,
রাস্তার হৃত্পিণ্ড মাড়িয়ে ,
জানান দিতে অতসী'দি কে ,
'সুন্দরী দেখ। আমি এসেছি।
এবার ঠিক পক্ষিরাজে দেবো উড়াল। '

এসব দেখতে দেখতে আমি ভুলেই যেতাম
আমার অস্থির শ্রবনেন্দ্রিয় কখন কবে
সময় নামক ঘড়ির শব্দে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ,
আমি ভুলেই যেতাম।
অথবা ভুলে যাবার ভান করতাম।

বাড়ীর পাশের শিউলীর টুপটাপ ঝরে পড়ার
শব্দের সাথে
অথবা
সমস্ত হিংস্র যানবাহনের
শব্দের সাথে
দুটো পায়ের কোমল শব্দ কখন একত্রিত হবে !
আমি ভুলে যেতাম
অথবা
ইচ্ছে করেই ভুলে যাবার ভান করতাম।
যেন প্রতিবারই নরম ভোরে
কেও দরোজায় কড়া নাড়ে।
আর চুপিচুপি ডাকে ----
রুনু ,শুনতে পাচ্ছো ?
রুনু ,দরজা খোলো।
শুনতে পাচ্ছো তুমি ?
রুনু ?
শেষ শব্দটা কেবলই মিলিয়ে যায়।
প্রতিদিন ঠিক এই সময়ে
শব্দের সাথে শব্দের খেলা হয়।
আর
আমি অপেক্ষায় থাকি।
কোন শব্দটার জয় হবে ?
রুনু ?
নাকি সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন ?

রুনুর আর দরোজা খোলা হয়না।

রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ১০






তোমায় হারানোর পর থেকে আমার একটা অদ্ভুত সমস্যা শুরু হলো।আমি খুব প্রবল ভাবে বন্ধুহীন হয়ে পড়লাম।এত্তগুলো বছর আমি একটুও বুঝতে পাইনি কি ভয়ঙ্কর রকমের তুমি বৃত্তের ভেতর আবদ্ধ ছিলাম।অদ্ভুত কি জানো ?আমি জীবনে একবারো আমার হারিয়ে যাবার কথা ভেবেছি অথচ তুমি হারাতে পারো একথা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।আমি না থাকলে আমার পাখি গুলোকে কে দেখবে এই নিয়ে কতনা কথা  তোমার সাথে। কতনা বকুনি খাওয়া। আশ্চর্য !একটা বারো ভাবিনি তোমার একটা পাখি আছে। সেই পাখিটা তোমায় ছাড়া  আজো একটা বন্ধু পর্যন্ত বানাতে শেখেনি। সেই পাখির কি অদ্ভুত দুঃসহ জীবন হয়ে যেতে পারে আমি ভাবিনি। আমি ভাবিনি কেন?কেন ভাবিনি ?

মাঝেমাঝে কিছু অদ্ভুত প্রশ্নের মুখোমুখি পড়তে হয়। কে আপনার প্রথম প্রেম ?যখন তুমি ছিলে এই প্রশ্নের একটা সহজ উত্তর ছিলো। যার সাথে প্রেম করেছি ,যাকে বিয়ে করেছি সেই। সেইতো আমার প্রথম প্রেম। আর কে হবে ?সেদিন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন টা করলাম। নিজেকে নিজেই বললাম :'ওই অদ্ভুত মায়াবী নারী আমার প্রথম প্রেম।যার অনুপস্থিতি আজো তার উপস্থিতিকে এতোটুকু ম্লান করতে পারেনি।'
আচ্ছা ,আমিকি একপ্রকার প্রেম করেছি তোমার সাথে ?তুমি এতোটা স্বার্থপর কেনো ছিলে ?কেনো তোমার মুখের মতো আর একটা মুখ ও কোথাও নেই ?কেনো নেই ওই মোহিনী সুবাস ?কেনো এমন দুটো হাত কারোর নেই যেই হাতে সবুজ পাতার সবুজ গন্ধ পাওয়া যায় ?কেনো অমন বিশাল বৃক্ষের মতন একটা ছায়াভরা আশ্রয় নেই আর কারোর কাছে?
কেনো অমন দীঘির মতন কালো চোখ নেই কারোর যে চোখের দিকে চাইলেই মুহুর্তেই স্বপ্নেরা আবার বাসা বাঁধে বুকে ?

সবকিছু একসাথে নিয়ে চলে গেলে ?আর আমায় কি ভীষণ অসুবিধায় ফেললে জানো ?আমি আজকাল কেবল বন্ধু খুঁজে বেড়াই।হঠাত কারোর মাঝে অদ্ভুত কিছু মিল খুঁজে পেয়ে যেইনা ছুঁতে যাই.....................


আমি জানি মায়েরা মায়েদের মতন। মায়েদের মতন কেও হয়না। তবু আমি আশ্রয় খুঁজি। তবু আমি তোমায় খুঁজি।খুঁজতে খুঁজতে দুদিন বা তিন দিন কেমন একটা আশ্চর্য সময় কাটে।কিছু মানুষ এর কাছে যেতে নিয়ে কখনো মনে হয় ওই মানুষ টাকে তুমি আমার জন্যে পাঠিয়েছো।ওই ভেবে যেইনা একটু কাছে যাওয়া। অমনি সব স্বপ্নের ধুলোর মতন উড়ে যাওয়া। এসব ছাইপাশ করতে করতে কোনো মাসের ৩০ তারিখ আসে। কোনো মাসে আসে ৩১ তারিখ।
আমার সময় কেটে যায় মা। আমার সময় কেটে যায়।তোমায় খুঁজতে খুঁজতে। 

শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪

ফুলের নূপুর



ভাবছো কি গো মিষ্টি মেয়ে ,
উঠবে আমার নায় ?
শিউলী দেবো ,বকুল দেবো ,
যখন যে ফুল পাই।

রাত্রি হলে সুবাস পাবে
চাও কি তেমন ফুল ?
কামিনী আর গন্ধরাজে
ভরিয়ে দেবো চুল।

সন্ধ্যামণি রং ছড়াবে
তোমার সিঁথির পর
ঝিঙে ফুলের হলদে রঙে
রাত্রি হবে ভোর।

কৃষ্ণচূড়া আর সোনালু
রাঙিয়ে দেবে পথ
রক্তজবার রাখী হাতে
করবে কি শপথ ?

ফুলের নূপুর  সাজিয়ে পায়ে
আসবে কি মোর ঘরে ?
সকল রঙে রঙিন বাসর
সাজবে তোমার তরে।

ফিরে আয়





ঝকঝক সাদা রোদ
ব্যালকনী ভরপুর
মেঘেদের ছুটি আজ
প্রজাপতি ঘুরঘুর।

পাতাগুলো চকচক
যেন সুখে উড়ছে ,
সবুজের ডানা মেলে
কি যে কথা কইছে।

পাখিসব অস্থির
কিচিমিচি কলোরব
খড়কুটো নিয়ে মুখে
বাড়ী ফেরা উত্সব।

দূর থেকে নীল নীল
আকাশ টা সাজছে ,
আর কোনো রং নেই
নীল সুখে মাতছে।

মৃদু বায়ূ শনশন
ভেজা চুল ছুঁয়ে যায় ,
তৃষিত চক্ষু বলে
আয় তুই ফিরে আয়।

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ৯










তুমি চলে যাবার পর সবচেয়ে বেশী যে কাজটা করা হয়েছে তা হলো মানুষের মুখ দেখা। কোত্থাও,কারোর মুখে একটু কি তোমার  ছোঁয়া পাওয়া যায় ? সেই চেষ্টা।
জানো ,একেক মানুষের কষ্টের অভিব্যক্তি একেকরকম। এমনকি আনন্দের ও। আমি ভাবতাম বুঝিবা সব্বাই কষ্ট পেলেই আমার মতন নিশ্চুপ হয়ে যায় ,এবং ধীরে চুপে শামুক বাস বেছে নেয়। তা নয় কিন্তু।দেখেছি একেক জনের কষ্টের একেক রকম অভিব্যক্তি। কেউ চিত্কার করে কাঁদে ,কখনো কেও নীরবে অশ্রুর সাগর সৃষ্টি করে।
কিন্তু তুমি কেমন অদ্ভুত ছিলে।খুব বেশি কষ্ট হলে কেমন যেন পাহাড়ের মত হয়ে যেতে।চুপচাপ।থমথমে।তোমায় খুঁজতে খুঁজতে হঠাত অমন থমথমে মুখ দেখলে ওখানেও তোমায় খুঁজে বেড়াই। ভারী অদ্ভুত জানো ?কারোর মুখের মাঝে তোমার ছায়া নেইতো।

আচ্ছা ?মায়েদের হাসি কি একটু অন্যরকম ?মুক্ত ঝরেনা ,ভালবাসা ঝরে পড়ে। তাই কি ?আর অদ্ভুত কামিনীর সুবাস হয় কি তখন ?তুমি হাসলে যেমন হতো ?জানো ,হঠাত বাড়ির উঠোনের ছোট্ট কামিনীর গাছ টা যখন জেগে ওঠে আমার আজো বড্ড অসুবিধে হয়।

তোমার গুনগুন গানের জন্যে একটা নির্দিষ্ট গান ছিলো। "কিছুক্ষণ আরো নাহয় রহিতে কাছে। "তুমি গাইতে নিলে মূল গান কোথায় যে পালাতো। আজো মনে পড়লে হাসি পায়। আমি প্রায়ই বলতাম :'উফ ,মা ,চুপ করোতো।এত্ত বেসুরো  গান গায় কেউ ?'
তুমি বলতে ,"রুদ্মি ,তুইতো আমার কাছে আসিস কষ্ট ওড়াতে। সুরে গান গাইলে কষ্ট উড়েনা। আরো জমা হয়ে থাকে। বেসুরো গান গাইবো। তুই একসময় হেসে উঠবি খিলখিলিয়ে।তোর্ ওই ভীষণ সংক্রামক হাসি একটু পর আমাতেও ছড়াবে। আমিও হাসবো। আর কষ্টগুলো উধাও। "
সেদিন গান টা হঠাত বাজলো কানে। ছুটে গেলাম।কোথাও কেউ নেই।মুখটা হারিয়ে ফেলেছি। আর কারোর মুখের মাঝে ওই মুখখানা কেনো খুঁজে পাইনা কো ?এতো অদ্ভুত মা আর নেই কেনো বলতে পারো ?

আর কিছুক্ষণ। আর কটা দিন সত্যিই রইতে কাছে ?আরো কটা দিন বেসুরো গানের বেসুরো সুরের হাওয়ায় কষ্টের মেঘ উড়িয়ে দিতাম। এখন কোথায় ,কেমন করে এতো কষ্ট উড়াই বলতে পারো ?

বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪

পাহাড় নীড়ে

রইলি পড়ে পাহাড়টাতে  ,
আমায় ছাড়া  একলা পাখি
সুবাস পেলি বুনোফুলের ?
বেতফল আর চালতা নাকি ?

সূর্যডোবা দেখলি বুঝি
দুই পাহাড়ের মাঝখানেতে ?
মেঘের সাথে জমলো খেলা
রৌদ্র আলো আর ছায়াতে ?

শিশির  পায়ে জড়িয়ে নিয়ে
লালচে মাটির স্পর্শ পেলি ?
মৌমাছি আর প্রজাপতির
ডানায় চড়ে বেড়িয়ে এলি ?

এইখানে মোর যন্ত্রজীবন
ইট ,পাথর আর কাঠের ভীড়ে ,
ভাবছি বুঝি ভুলেই গেছিস
ভালোই আছিস পাহাড় নীড়ে।
 
রাত্রি সেথা কত্ত নিঝুম ?
তারার সাথে হয়কি কথা ?
মিষ্টি হাওয়া ছুঁয়ে গেলেই
বুকের গভীর হয়কি ব্যাথা ?

আধেক ঘুমে একটুখানি
স্বপ্ন দেখে কষ্ট কি হয় ?
অপেক্ষাতে গুনছি প্রহর
কাটছেনা যে আর তো সময়। 




রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৪

এইতো সে ছুঁয়ে গেলো






টুপটাপ ঝিরিঝিরি
রাতভর বৃষ্টি ,
চুপচাপ এই মন
জানলায় দৃষ্টি।

মেঘ গুলো আরো যেনো
থমথম করছে ,
ছোট্ট শিশুর মত
ফোঁস ফোঁস কাঁদছে।

বিদ্যুত বিজলী
ঝলকানি বাড়ছে ,
বজ্রের হুঙ্কার
যেনো কানে লাগছে।

মাঝি ভাই বহুদূর
নৌকায় জল যে ,
তুফানের ভয়ে তার
হাত দুটো কাঁপছে।

পাতাদের ঘুম নেই
ঝরে যাবে ভয় যে ,
ফুল গুলো ভিজে সারা
প্রজাপতি খুঁজছে।

আমিও তো চেয়ে আছি
প্রজাপতি পাখনায়
এক্ষুনি উড়ে যাবো
ওই দূর সীমানায়।

ঝমঝম ঝমঝম
ট্রেন দৌড়ুচ্ছে
আমারই ঠিকানায়
জানি ছুটে আসছে।

জানলায় চুপচাপ
আর নেই কষ্ট
এইতো সে ছুঁয়ে গেলো
একদম স্পষ্ট।






রুদ্মিলার চিঠি ৮

তোমার চলে যাবার খবর আমি নিজ থেকে কাওকে দিইনি। আমার বন্ধু মহলের  বিরাট অংশ এখনো জানেনা তুমি নেই। ওদের মায়েরা আবার তোমার বন্ধু ছিলো।ছোটবেলায় স্কুল এ বেশ একটা গল্প চলতো তোমাদের।স্কুল ছুটির একটু আগেই পৌঁছে যেতে তুমি। ঐটুকুই তোমার গল্প। ঐটুকুই তোমার অবসর।বিভিন্ন ছাত্র ছাত্রীর মায়েরাই তোমার প্রানের বন্ধু।
এবং তাঁরা আসলেই তোমার প্রানের বন্ধু ছিলো। এখনো তোমার খবর নেয়  কত যত্নের সাথে।ওখানে দু এক জন জানেনা তুমি না ফেরার দেশে চলে গেছো। তেমনই একজনের সাথে সেদিন দেখা।প্রথম চেষ্টা করেছি এড়িয়ে যেতে। কিন্তু তাঁর চোখ এতো তীব্র।তিনি আমায় ডাকলেন। জড়িয়ে ধরলেন। অনেক চুমু খেলেন। এবং তোমার কথা জানতে চাইলেন। আমি অবলীলায় বলে দিলাম ,তুমি বাড়িতেই আছো। বললেন  তোমার ফোন নম্বর টা দিতে। আমি দিলাম। তিনি তক্ষুনি নম্বর চাপলেন।"MOBILE CANNOT BE REACHED AT THE MOMENT.PEALSE TRY AGAIN LATER ."বিচ্ছিরি এই কথাটা তিনি শুনলেন।শুনে বললেন :ফোন তো বন্ধ।"আমিও খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম :এখন তো রান্নার সময় তাই বোধ হয় বন্ধ রেখেছে। উনি বিশ্বাস করলেন। তারপর অনেক আদর করে একসময় আমায় ছেড়ে দিলেন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
মা ,এই কাজ টা আমি প্রায়ই করি। আমার জগতের অনেকের কাছেই তুমি বেঁচে আছো এখনো। এখনো রান্না করছো। গুনগুন গান গাইছো। চুলে বিনুনী করে নিচ্ছো বিকেল হলেই। অথবা বাবার সাথে কিছু না কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া করছো।অথবা আমায় ফোন করতে নিয়ে বরাবরের মত দেখছো ব্যালান্স নেই। তাই আমিও তোমার কোনো ফোন পাচ্ছিনা। আমি রাগ করছি।ভীষণ রাগ করে নিচ্ছি। তারপর অনেক রেগে তোমাকে আবার বকবার জন্যে আমি নিজেই ফোন করছি তোমায়। আবার সেই বিচ্ছিরি আওয়াজের  মেয়েটা বলছে MOBILE CANNOT BE REACHED AT THE MOMENT.PLEASE TRY AGAIN LATER .আমি আবার অপেক্ষা করছি। আমি ধরে নিচ্ছি তুমি ফোন বন্ধ করে রান্না করছো।অথবা ধরে নিচ্ছি তোমার যখন কাজের শেষ আমার ঠিক তখনই কাজের শুরু। প্রতিদিনের মতন আমি আবার আবার আরেকটি দিনের অপেক্ষায় থাকছি। এভাবেই দিন থেকে মাস। মাস থেকে বছর। যাচ্ছে সময়।পালাচ্ছে সময়।এভাবেই যত টুকু আয়ূ ফুরিয়ে আনা যায়। একদিন নিশ্চয়ই সব অপেক্ষার শেষ হবে। একদিন নিশ্চয়ই ফোন এর চেয়ে আরো কাছে তোমায় পাবো। নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই মা।

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৪

কন্যা

কন্যার কালো কেশ মেঘেদের মতো
জলেতে ছড়াইয়া যেনো নাও শত শত।

সূর্যের তেজ যেনো কন্যার রঙ
চাঁদ তারা সকলে যে হারায় তখন।

কন্যার চোখ দুটো সমুদ্র ছাড়ায়
ছলছল কি যে কথা ঢেউ এ তে গড়ায়।

হাসিতে মুক্ত নয় ফুল ঝরে পড়ে
মিষ্টি সুবাসে মন কোথা যায় উড়ে।

বক্ষ তো নয় যেন জোড়া কবুতর।
না জানি কি কথা আছে লুকায়ে ভিতর।
কন্যার হাত দুটো বৃক্ষের পাতা।
সবুজ গন্ধ যেনো আছে তাতে মাখা।

কলসীর জল যেনো মানেনা বারণ
নিতম্ব ছুঁইয়া তারে করিবে ধারণ।

কন্যা হাঁটিয়া যায় নূপুরের সুরে
ধূলো মাখা উঠোনেতে স্বর্ণচাঁপা ঝরে।

কন্যার চুলের সিঁথী যেন কোনো পথ
হারাইবো সেই পথে করিনু শপথ।

রাজকন্যা



হঠাত হাওয়ায় কি ছড়ালো ?
এমন মিঠে সুবাস কেনো ?
মন কি তোমার অনেক ভালো
মিষ্টি হাওয়া বলছে যেনো ?

একটু ঘুমে তোমায় চুমে
হাত টি নিলাম বুকে
চুপিচুপি জানলা গলে
জোসনা এলো  সুখে।

কেমন করে তারপরেতে 
বৃষ্টি এলো ঝেঁপে ?
একটু ফোঁটা চাঁদ মুখেতে
স্পর্শ দিলো এঁকে।

চেয়ে থেকেই রাত চলে যায়
ভোরের পাখি ডাকে
মধুর আলো পড়লো এসে
তোমার চুলের ফাঁকে।

ঘুমকে বলি আজকে তুমি
ওই  চোখেতেই থাকো।
নানা রঙের স্বপ্ন এনে
ওই চোখেতেই আঁকো।

কোন আলোতে রাজকন্যা
কেমন করে সাজে
দেখবো আমি সকল আলোয়। 
সকাল দুপুর সাঁঝে।  


শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৪

রুদ্মিলার চিঠি ৭

 প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মেয়েরা বাবাদের বেশি ভালোবাসে।রুদ্মিলার সবকিছুতেই ছোটবেলা থেকে ভারী অদ্ভুত।রুদ্মিলার বাবা কন্যাশিশুর বিরোধী বলেই হয়তো শৈশব থেকে বাবার সাথে মধুর সখ্যতা তার হয়ে ওঠেনি।
তাই তার জীবনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়ে গেছে হারিয়ে যাওয়া মা।কিন্তু ওই মা টা কেমন আবার অদ্ভুত ছিলো বলে মাঝেমাঝে রুদ্মিলা নিজেই বেশ একটা দ্বিধায় পড়ে যেতো।মা টা কেমন যেনো মেয়ে ছিলোনা। একটা আশ্চর্য দ্বৈত সত্তা ছিলো।সে কথায় আসছি পরে।
রাজনীতি ব্যাপারটায় রুদ্মিলা খুবই অপক্ক। বুঝতেও ভালো লাগেনা ,যুঝ তেও নয়। দেশের রাজনীতি অথবা বাইরের ,বুঝতে নিলেই ওর ক্লান্ত লাগে।সবসময়।সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা হলো রুদ্মিলার বুঝতে অনেক সময় লেগে গেছে রাজনীতি যে কেবলমাত্র দেশের নেতা নেত্রীর মাঝে সীমাবদ্ধ তা নয়। আসলে সংসার টা ও একটা রাজনীতির ক্ষেত্র বটে।আর অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার টা হলো রুদ্মিলা ছোটবেলা থেকেই এই একটা জায়গায় তার ভুবনজয়ী মা কে হারতে দেখেছে।সংসার যখনই রাজনীতি হয়ে গেছে মা ঠিক তখনই রণে ভঙ্গ দিয়েছে।রুদ্মিলা এখনো ভাবতে নিলে হেসে ফেলে। মা খুব আগ্রহ ভরে ভারতীয় টি ভি সিরিয়াল গুলো দেখতো। সব ভাষার। শুধু জানার জন্যে কেমন করে ট্রাম কার্ড টা কোন সময়ে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে হয় সংসার নামক রাজনীতির খেলার মাঠে। কিন্তু প্রতিবারই বোকা মা টা হেরে ভূত হয়ে থাকতো।ভয়ানক রেগে যেতো।মুখটা করে নিতো পাহাড়ের মতো। কিছুতেই কোনদিন ওই যুদ্ধে মা জিতে আসতে পারেনি।মাঝে মাঝে তাই মায়ের খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হতো। সমুদ্রের চেয়ে পাহাড়ের কথা বলতো বেশি।খুব পাহাড়ে হারাতে চাইতো।
 রুদ্মিলা নানা ভাবে চেষ্টা করত মা কে জিতিয়ে দিতে। কারণ মায়ের ওই পাহাড়ের মত গম্ভীর হয়ে যাওয়া কষ্টের মুখটা ওর একেবারেই অসহ্য লাগতো।আর তাছাড়া মা তো কোনো চাকরি বা আর কোনো কিছু করতোনা। তার সময় টা যদি একটু আধটু সাংসারিক রাজনীতি করেই না কাটবে তবেতো দম বন্ধ হয়ে আসার কথা। তিনি কি করে সময় কাটাবেন ?এই একটা কারণে রুদ্মিলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিলো তার নিজের সমস্ত বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে মা কে জিতিয়ে দেয়া। কিন্তু রুদ্মিলা ভয়াবহ ভাবে তার মা এর প্রতিটি দোষ আর গুন পেয়ে নিয়েছে বড় যত্নে।অনেক চেষ্টা করেও রুদ্মিলা কোনদিন সংসারের নোংরা রাজনীতির মাঠে মা টাকে জিতিয়ে দিতে পারেনি।

এবার আসছি সেই শুরুর কথাটায়। দ্বৈত সত্তা।রুদ্মিলা খুব অবাক হতো তার মায়ের বিভিন্ন রূপ দেখে। খুব ধার্মিক একজন মানুষ অথচ বেশ ভূষায় তার কোনো চিন্হ নেই।খুব আধুনিক অথচ তার কোনো বিরক্তিকর প্রকাশভঙ্গি নেই।দেহে নারী অথচ মনের ভিতর একটা শক্তিশালী পুরুষের মত মানুষ।এমন আরো অনেক রূপের ভান্ডার দেখতে দেখতে রুদ্মিলার একসময় বুঝতে কষ্ট হয় মা কি পুরুষ না কি নমনীয় নারী !
এবং একসময় রুদ্মিলা আবিষ্কার করতে শুরু করে তার মা আসলে একটা মানুষ। পরিপূর্ণ মানুষ। নারী ও নয়। নয় পুরুষ ও।
রুদ্মিলার খুব ইচ্ছে করে চিত্কার করে মা কে বলতে :"অনেক ধন্যবাদ মা। তুমি পারনি বলেই আমিও পারিনি।তুমি পাহাড় ভালবাসতে বলেই আজ আমার গান গাওয়া হয়। তুমি বৃষ্টি ভালবাসতে বলেই তোমার মেয়ে কবিতা লেখে।
থাকনা। সংসারের রাজনীতি থেকে নাহয় একটা নক্ষত্র বিচ্যুত হলো। কি আসে যায়। কিছু সৃষ্টি হলোতো ?সুন্দর ,পবিত্র,কল্যানকর। "
  


বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৪

বুনোফুলটি



সাঁঝের বেলা ফিরবো যখন বাড়ী
বুনোফুলটি বললে হেসে :যাও ,
তোমার সঙ্গে আঁড়ি।

আমি হঠাত ফিসফিসানি শুনে
যেইনা ফিরে তাকাই একটুখানি
চুপিচুপি হাওয়ার দোল টি খেয়ে
করলে শুরু কেমন কানাকানি।

সাঁঝের বেলা গড়িয়ে নামে রাত,
ধূলোয় দুলে বললে হেসে :যাও ,
ছেড়েই দিলেম হাত।

আমি বললাম এত্ত তোমার চাওয়া ,
আমার সাথে যাবে অনেক দূরে ?
নামটি তোমার আজোতো অজানা
রূপটি দেখে নয়ন শুধু ভরে।

রাত্রি তখন মাত্র কেবল হলো ,
একলা তারে ফেলেই যখন ফিরি
অভিমানে নুইয়ে শরীরখানা
বললে কেঁদে :যাও
দাঁড়িয়ে থেকোনা।

আমি বললাম মুক্ত এখন আছো
মিষ্টি হাওয়া নিচ্ছো ভরে বুক
আমার বাড়ীর ব্যালকনি তে এসে
বন্দী হয়েই থাকবে তোমার সুখ।




আলো আসে



মেঘেদের মেয়ে আজ আকাশ ছেঁয়েছে
কেশবতী কন্যা যেনো,
ছড়াতেছে চুল তার
অবাধ্য নারীর মতন।
করিছে যুদ্ধ হেথা সূর্যের সাথে
আঁধারে ভাসিয়ে দেবে সব সব।

কন্যার কালো কেশ কালো শুধু নয়
চোখের মণির কালো যেন তুচ্ছ হয়
মেঘেদের মেয়ে আজ শপথ করেছে
লুকোচুরি লুকোচুরি খেলায় নেমেছে।

আমি হেথা  ক্ষুদ্র মানব ,
আছি বসে ক্লান্ত চোখে চেয়ে।
মেঘেদের মেয়ে কবে আকাশ ছাইবে
এলোকেশী মেয়ে কবে মর্ত্যে লুটাবে ?

সূর্যের সাথে চলে বারেবারে খেলা।
কখনো আঁধার কভূ আলোকিত বেলা
অবশেষে এলোকেশী মুখখানা ঢাকি
করিলো প্রস্থান তার চিহ্ন টুকু রাখি।

আমি হেথা ক্ষুদ্র মানব ,
আছি বসে আকাশ পানে চেয়ে ,
সব খেলা শেষ হলো সুর্যের কাছে
আঁধার ফুরিয়ে গিয়ে আলোটুকু আছে।

জীবন এমনই যেনো আকাশের মতো।
মাঝেমাঝে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা
আমি জানি সূর্যের জয় নিশ্চয়ই ,
আলো আসে আঁধারের ফুরায় যে বেলা।

বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৪

হঠাত অকারণে





হঠাত অকারণে পেয়ে যাই যদি তোমায়
সর্ষে মাঠের হলুদে ,
অথবা ইউকালিপ্টাসের হালকা ছায়ায় ,
নরম নরম বাঁশ বনের মায়ায় ,
অথবা কোনো শালিকের ছোট্ট বাড়ীটায়
পেয়ে যাই যদি তোমায় ?
হঠাত কোনো মেঠো পথে ,
অথবা ঝাউ এর বনে ?
চাঁদ যেথা মাঝরাতে লুকোচুরি খেলে পাতার পেছনে ?
পেয়ে যাই যদি তোমায় ?
জামের মুকুলের লাল রঙে ,
কিংবা কচুরিপানার শ্যেওলা সবুজের আলিঙ্গনে ?
যদি ঘাসফড়িং হয়ে থেকে যাও তুমি
অথবা মাছরাঙ্গা?
ধর হঠাত তোমায় পেয়ে যাই যদি কোনো কুয়াশায়
শিশিরের স্ফটিকে ?
নক্ষত্রের কোনো একলা রাতে
অথবা জোনাকির বিচ্ছুরিত আলোয় ?
আমি আর পিছু ফিরে চাহিবোনা
করিবোনা সময় ক্ষেপন আর কোনো আশ্রয় খুঁজিবার,
করিবোনা সময় ক্ষেপন তোমারে আবার আবার হারাতে দেবার
একবার শুধু একবার যদি
পেয়ে যাই তোমায়
আমি ওই হাতের মুঠোয় এনে দেবো গভীর হাওয়ার রাত। 





রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৪

অসময়



পারুলের  নীলচে শাদা  ফুলে ছেঁয়ে আছে পথ টা
খুব বেশি তীব্র নয়
নেশায় ভরা হালকা সুবাস।
মাঝেমাঝে মনে হয়
এখানে ,ঠিক এখানটাতেই
যদি দেখা হতো ?
যাওয়া হতনা তোর্ আর আমায় ছেড়ে।
পারুল তোকে ফিরিয়ে আনতো
ঠিক আমার কাছে।

এইতো দীঘিটা ,
খুব বেশী বড় নয় কিন্তু।
রুপোলি হাঁস গুলো সব কোথায় ছিলো সেদিন ?
পৌষের কাছাকাছি সময়টা ছিলোনা তো ?
ছিলোনা পরিযায়ী পাখিদের আসবার দিন।
নয়তো এমন দীঘি ছেড়ে
যাওয়া হত কি তোর্ ?
অন্তত দীঘির জন্যে ?

অধীর বাতাসের দিন ছিলোনা সেদিন
ছেঁড়া ছেঁড়া কালো মেঘ এসে
ঢেকে যায় আকাশ।
চারিদিক ফোঁপায় ছোট্ট শিশুর মতন
এই বুঝি ঝরে পড়বে কান্না।
আকাশের বুক চিরে। 
ছিলোনা তো সেদিন টি তেমন।
নয়তো অমন বৃষ্টির আলিঙ্গন ছেড়ে
যাওয়া হতো কি তোর্ ?

বড় বেশী অসময়ে বললি বিদায়।
সময়টা পৌষের ছিলনা
না ছিলো অঘ্রানের
ছিলোনা রঙিন ফাগুনের ও
অথবা শ্রাবন কদমের
সময়টা কিছুতেই
শিশিরের আশ্বিন ছিলনাতো।
আসলে সময় টা বড্ড অসময় ছিলো।



বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০১৪

মূর্তি হয়ে থাকিসনা তুই





আঁধার রাতে
হঠাত জেগে
আপন মনে ভাবি ,
আজকে মাকে দৃষ্টি দেবো
প্রদীপ দিয়ে আঁকি।

বারে বারে জ্বালছি প্রদীপ
নিভছে ততবার।
ঝড়ো হাওয়া বইছে কেনো
এমন চারিধার ?


যতবারই চোখের তারায়
জ্বালতে গেছি আলো
ততবারই রাত্রি হলো
আঁধার নেমে এলো।


ইচ্ছে করে
একটি বারে
একটি প্রানের ছোঁয়া
একটুখানি
জাগিয়ে তুলি
জগৎ রূপী মায়া।

একটিবার প্রাণ পেলে তুই
আর যাবিনা ছেড়ে।
ভুবন জুড়ে দুঃখ ব্যাথা
সবই নিবি কেড়ে।

মূর্তি বানাই
মূর্তি বানাই
মূর্তি কারিগর
মূর্তি হয়ে থাকিসনা তুই
এবার কিছু কর।